যেসব উপজেলায় জয় পেলেন বিএনপির বহিষ্কৃতরা
ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের নির্বাচনে দলীয়ভাবে বিএনপি অংশ না নিলেও সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোট করেছেন অনেক নেতা। যদিও নেতাদের এমন সিদ্ধান্তের কারণে বহিষ্কার হয়েছেন অনেকে। তবে তাদের মধ্যেই নির্বাচিত হয়েছেন কেউ কেউ।
ইসির সূত্রমতে— প্রথম ধাপে দেশের ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়েছে। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১ হাজার ৬৩৫ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৭০, ভাইস চেয়ারম্যান ৬২৫ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৪০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বেসরকারি ফলাফলে দেখা গেছে, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ নেতাদের জয়জয়কার। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জয়ী এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উভয়ই আওয়ামী লীগনেতা। এই পরিস্থিতির মধ্যেও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এমন অন্তত ৭ জন নেতা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
এনটিভির জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য থেকে জানা গেছে, বান্দরবান সদর উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন আব্দুল কুদ্দুছ। বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত এই নেতা মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১৯ হাজার ১৪৪টি। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বড় ব্যবধানে জিতেছেন। আনারস প্রতীকে জাহাঙ্গীর পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৬৬ ভোট।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় দোয়াত-কলম প্রতীকে ভোট করেছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আমিনুল ইসলাম বাদশা। জেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন। তিনি ভোট পেয়েছেন ১৮ হাজার ৮৮৩টি। এতে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ ফারুক। মোটরসাইকেল প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ১৬ হাজার ৫২ ভোট।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভোট হয়েছে তিন উপজেলায়। এর মধ্যে দুটিতেই বেসরকারিভাবে জয় পেয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতারা। গোমস্তাপুর উপজেলায় ভোট করেছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আশরাফ হোসেন আলিম। আনারস প্রতীকে তিনি ৪০ হাজার ৬২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হুমায়ুন রেজা ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন ৪০ হাজার ৬১ ভোট।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার নতুন চেয়ারম্যান হচ্ছেন আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। চিংড়ি মাছ প্রতীকে ১৩ হাজার ৮৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল খালেক পেয়েছেন ১০ হাজার ৭৬৬ ভোট। যদিও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের দুজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আবদুল হামিদ। আনাসর প্রতীকে ৩৪ হাজার ১৮৫ ভোট পেয়েছে তিনি। আবদুল হামিদ ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য বলে জানা গেছে। নির্বাচনে তিনি হারিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা নাজিম উদ্দীনকে। দোয়াত-কলম প্রতীকে নাজিম পেয়েছেন ২৮ হাজার ৭৭ ভোট।
গাজীপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান ইজাদুর রহমান মিলন। ঘোড়া প্রতীকে তার প্রাপ্ত ভোট ১৮ হাজার ৯৬৯। উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রীনা পারভীনকে হারিয়েছেন তিনি। আনারস প্রতীকে রীনা পারভীন পেয়েছেন ১০ হাজার ২০৮ ভোট।
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি যুক্তরাজ্য প্রবাসী মোহাম্মদ সুহেল আহমদ চৌধুরী বিজয়ী হয়েছেন। কাপ-পিরিচ প্রতীকে ১৩ হাজার ৩২২ ভোট পান তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমেদ আনারস প্রতীকে ১২ হাজার ৯৬৮টি ভোট পেয়েছেন। তাকেও বহিষ্কার করে বিএনপি।
এর আগে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৭৩ জনকে বহিষ্কার করে বিএনপি। গত ২৬ এপ্রিল গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বহিষ্কৃতদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃতদের মধ্যে প্রথম ধাপে উপজেলা নির্বাচনে ২৮ জন চেয়ারম্যান পদে, ২৪ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং ২১ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছেন।
দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া আরও অন্তত ৬৪ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩৬ জনকে বহিষ্কার করেছে দলটি।