আলম খান : ‘আত্মহত্যা’র হুমকি দিয়ে বাবার কাছ থেকে গান করার অনুমতি নিয়েছিলেন
‘মেলোডি কিং’ আলম খান, ঢাকাই সিনেমার প্রায় ৩০০ সিনেমার সংগীত পরিচালক। তাঁর সুরে গান গেয়ে তারকাখ্যাতি পেয়েছেন অনেক শিল্পী। সে তালিকায় রয়েছেন এন্ড্রু কিশোরের মতো সংগীত তারকা।
অথচ এই আলম খান পরিবারের কাছ থেকে গান করার অনুমতি নিয়েছিলেন ‘আত্মহত্যা’র হুমকি দিয়ে। ২০১৬ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আলম খান গান শুরুর গল্পে বলেছিলেন, “আমাদের পাড়ায় রতন ভাই বলে এক ভদ্রলোক ছিলেন। তাঁর অর্কেস্ট্রা গ্রুপটি ভালো ছিল। পাশের ফ্ল্যাটে থাকতেন। তাঁর কাছে গিয়ে বসে থাকতাম। একদিন বললেন, ‘গানবাজনা শিখবি?’ বললাম, শেখার জন্যই তো বসে থাকি। তিনি বললেন, ‘কাল আসিস। ’ গেলাম। তাঁর কাছেই হাতেখড়ি। কলোনি থেকে কমলাপুর চলে এসে গান শেখা শুরু। গানবাজনা যারা জানে, আমি তেমন লোকজনকে বন্ধু বানাতাম। একসঙ্গে গান শিখতাম, অলোচনা করতাম।”
সেই গল্প আলম খান দীর্ঘ করেছেন এভাবে, “আব্বা যখন দেখলেন—লেখাপড়ার দিকে মন নেই, মারধরও করলেন। সেন্টিমেন্টাল হয়ে মাকে বললাম, যদি গান করতে না দাও, তাহলে রেললাইনের নিচে গিয়ে আত্মহত্যা করব। আম্মা আব্বাকে বলে দিলেন। তিনি ভয় পেয়ে [হাসি] বললেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, ও যা করতে চায় করবে।’ বুদ্ধি করে আব্বার কাছে দুই হাজার টাকা চেয়েছিলাম। তখন এটি তো দুই লাখেরও অনেক বেশি। এক টাকা দিয়ে সংসারের বাজার করা যেত, স্বর্ণের ভরি বোধ হয় একশর সামান্য বেশি ছিল। আব্বার কাছেও এটা বিরাট ব্যাপার। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সৎ অফিসার ছিলেন। আব্বা বললেন, ‘এত টাকা!’ বললাম, এর কমে হবে না। তিনি টাকা দিলেন এবং তা দিয়ে হারমোনিয়াম, সেতার, গিটার, হাওয়াইন গিটারসহ সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র কিনে ফেললাম।’
এরপরের গল্পটা সবার জানা। ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস’, ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই’, ‘কি জাদু করিলা পিরিতি শিখাইলা’, ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’, ‘সবাই তো ভালবাসা চায়’—এমন অসংখ্য কালজয়ী গানের সুরকার কিংবদন্তি সংগীত পরিচালক আলম খান। ১৯৬৩ সালে রবিন ঘোষের সহকারী হিসেবে চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক ও সুরকার বিভাগে সাত বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন।
কিংবদন্তি সংগীত পরিচালক আলম খান (৭৭) আজ শুক্রবার সকাল ১১টা ৩২ মিনিটে মারা গেছেন।