ঈদ আনন্দের একাল-সেকাল শাহনাজ খুশির স্মৃতিচারণ
দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। চলতি সপ্তাহ শেষে পালন করা হবে ঈদুল ফিতর উৎসব। আর ঈদকে সামনে রেখে শৈশবের নানা স্মৃতিচারণ করেছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দিয়েছেন আবেগঘন স্ট্যাটাস।
আজ মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) শাহনাজ খুশি ফেসবুকে লেখেন, ‘আমাদের ছোটবেলা ঈদের সময় দর্জির দোকানে জামা বানাতে দেওয়া ছিল ঈদের প্রধান আনন্দ। আশে পাশের বাড়ির সবার জামা কাপড় তৈরি হয়ে যেত, কিন্তু আমাদের জামা তৈরি করতে দেওয়ারই কোনও খোঁজ থাকতো না। রোজ আব্বার দুয়ারে যেয়ে উঁকি দিতাম। আব্বা বলতো, ‘কিছু বলবা? না আব্বা। এখন এ সময়ে এসে মনে হয়, আব্বা কি তখন মনে মনে হাসতো?’
ঈদে জামা তৈরির কথা উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী লেখেন, ‘ঈদের ৬/৭ দিন আগে আব্বা বলতেন, মা, তোমার খুদু কাকার দোকানে কাপড় দেখে রেখে আসছি। মাপ দিয়ে এসো। আর ফুর্তি দেখে কে। বলতে দেরি, তো যেতে দেরি নাই। ছোট্ট দোকানটাই কাপড়ে ঠাসা। মাঝখানে একটা শীতল পাটি পাতা। সেখানে দাঁড়িয়ে কোড়েঁ কাকা মাপ নিত। কাপড় দেখতে ব্যাকুল থাকতাম, কাকা দেখাতো। আমার ভাইয়ের শার্ট এবং আমার ফ্রক একই ছিট কাপড়ের! তাতে আমাদের কোনো লজ্জা করতো না। আনন্দে আত্মহারা হতাম। পরের কয়েকদিন আর ঘুম হতো না। সকাল-বিকেল খুদু কাকার দোকানে খোঁজ নিতাম। কাপড় কাঁটলো কি-না, সেলাই হল কি-না?’
শাহনাজ খুশি লেখেন, ‘ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় আব্বা ডাকতেন। তীর্থের কাকের মতো সে ডাকের অপেক্ষা ছিল। আব্বা যার যার হাতে জামা ভাগ করে দিতেন, সেই সময় যে বুকের ধুঁকধুঁকানি/ সারা মস্তিস্কে যে আনন্দের গতি, তা আর কোনো কালে হয়নি! জামা নিয়ে সোজা বালিশের নীচে, যেন কেউ না দেখে, যেন এখানেই লুকানো আছে গোপন সুখ/সৌন্দর্য্য! সারারাত ঘুম হতো না। রাতে বার বার বালিশের নীচে হাত দিয়ে জামা চেক করতাম।’ তিনি আরও লেখেন, ‘ঈদ এলে আমি প্রতিদিন ছোট হয়ে যাই! প্রতিরাতে ঘরের ছাদে আমাদের বাড়িভরা ভাই-বোনের মুখ ভাসে। ঈদের সদাইপাতির বাজারের ব্যাগ, ঘরের ঝুল ভাঙা, কাপড় ধোঁয়া, লেপা-পোছা, হাসির কলরব, রান্নার গন্ধ…
আমার ঈদ রয়ে যায় ৩০ বছর পেছনের ঈদের মাঠে! আমি রোজ একুল থেকে ওকুল মেলানোর চেষ্টা করি। শুধু শব্দ শুনি, দেখা যায় কিছু! বাচ্চারা প্রায়ই বলতে থাকে, ‘মা! সব সময় ধুম মেরে থাকো কেন? আমি সাহস করে বলতে পারি না, এ শহর/এই সময়ে আমার ঈদ হারিয়ে যাবার গল্পটা…’