কানে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ : যা বলছেন সাদ
ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সুখবর দিয়েছেন তরুণ নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদ। পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৪তম আসরে প্রথমবারের মতো তাঁর ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমা অফিশিয়াল সিলেকশনের জন্য আমন্ত্রণপত্র পেয়েছে।
এমন উচ্ছ্বাসভরা খবরেও নাগাল পাওয়া যায়নি নির্মাতা সাদের। প্রচারবিমুখ আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদ এমন অর্জনে আনন্দিত এবং সম্মানিত বোধ করলেও বলছেন, কৃতিত্বটা পুরো টিমের।
মার্কিন বিনোদনভিত্তিক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ভ্যারাইটি ডটকমকে আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদ জানিয়েছেন, ‘আমি একটি বড় পরিবারে, তিন বোনের সাথে বেড়ে উঠেছি। আমার চিন্তা-প্রক্রিয়ায় তাদের গভীর প্রভাব রয়েছে। আমার বিশ্বাস, সেই প্রভাব থেকেই রেহানার জন্ম। এই চরিত্রটিকে নিয়ে আমি অনেক দিন ধরেই ভাবনা-চিন্তা করেছি। যুক্তি ও আবেগের দ্বন্দ্বে আটকা পড়া এই জটিল নারীর চিন্তাকাঠামো বুঝতে চেয়েছি আমি।’
বাংলাদেশের জন্য ইতিহাস গড়া এই নির্মাতা আরও যুক্ত করেছেন, ‘সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা আমাকে আকৃষ্ট করেছে, তা হলো তার চরিত্রটি পরস্পরবিরোধীতায় পূর্ণ। কী সে চায়, আর কেনই বা চায়, এটা বুঝতে তার নিজেরই অনেক চেষ্টা করতে হয়েছে, এমন এক দম বন্ধ করা জগতে সে থাকে, যা বারবার তাকে ঠেলে দেয় চূড়ান্ত সীমার দিকে।’
আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আজমেরী হক বাঁধন। এটি সাদের দ্বিতীয় সিনেমা, এর আগে ২০১৬ সালে ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ শিরোনামে একটি সিনেমা পরিচালনা করেছিলেন এই পরিচালক।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষক রেহানা মরিয়ম নূরকে কেন্দ্র করেই এই সিনেমার গল্প। যেখানে রেহানা একজন মা, মেয়ে, বোন ও শিক্ষক হিসেবে জটিল জীবন যাপন করে। এর মধ্যে এক সন্ধ্যায় কলেজ থেকে বেরোনোর সময় রেহানা একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাক্ষী হয়। এর পর থেকে সে এক ছাত্রীর পক্ষ হয়ে সহকর্মী এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ঘটনার প্রতিবাদ করতে শুরু করে এবং ক্রমশ একরোখা হয়ে ওঠে। কিন্তু একই সময়ে তার ছয় বছর বয়সী মেয়ের বিরুদ্ধে স্কুল থেকে রূঢ় আচরণের অভিযোগ করা হয়। এমন অবস্থায় অনড় রেহানা তথাকথিত নিয়মের বাইরে থেকে সেই ছাত্রী ও তার সন্তানের জন্য ন্যায়বিচারের খোঁজ করতে থাকে।
প্রোটোকল ও মেট্রো ভিডিওর ব্যানারে ছবিটি প্রযোজনা করেছেন সিঙ্গাপুরের প্রযোজক জেরেমী চুয়া, নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক বাবু এবং সহ-প্রযোজনা করেছেন রাজীব মহাজন, আদনান হাবিব ও সাঈদুল হক খন্দকার। ছবিটির সিনেমাটোগ্রাফার তুহিন তমিজুল, প্রোডাকশন ডিজাইনার আলী আফজাল উজ্জ্বল ও সাউন্ড ডিজাইনার শৈব তালুকদার। ছবিটি সহ-প্রযোজনা করেছে সেন্সমেকারস প্রোডাকশন।
সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন আফিয়া জাহিন জাইমা, কাজী সামি হাসান, আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ, ইয়াছির আল হক, সাবেরী আলমসহ অনেকে। এরই মধ্যে সিনেমাটির ইন্টারন্যাশনাল সেলস-এর জন্য জার্মানভিত্তিক সেলস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ফিল্মস বুটিক চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। আগামী ৬ জুলাই থেকে ফ্রান্সের কান শহরে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বের প্রথম সারির আন্তর্জাতিক এই চলচ্চিত্র উৎসব।
২০০২ সালে ৫৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্যারালাল বিভাগের অংশ ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইট-এ নির্বাচিত হয়েছিল প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ পরিচালিত ‘মাটির ময়না’ চলচ্চিত্রটি। কিন্তু প্রথমবারের মতো আঁ সার্তেইন রিগার্দ বিভাগে অফিশিয়াল সিলেকশনে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবিটি আমন্ত্রণ পাওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।