কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিপুণ বললেন, সত্যের জয় হয়েছে
জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণ আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেছেন এবারের চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। সদস্য পদপ্রার্থী চুন্নুর প্রার্থিতা বাতিল করে নাদির খানকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন তিনি।
আপিল বোর্ডের সভা শেষে সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা হারুণ পক্ষপাতদুষ্ট। সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী জায়েদ খান এবং সদস্য পদপ্রার্থী চুন্নু তাঁদের ভোট দেওয়ার জন্য নগদ অর্থ প্রদান করেছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েক জন সদস্য তাঁদের টাকা প্রদানের বিষয়টি মৌখিকভাবে স্বীকার করেছেন। অভিযোগ তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়ায় তাঁদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। অপর ১৬৩ ভোট পাওয়া সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী নিপুণ আক্তারকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হলো।’
ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিপুণ আক্তার বলেন, ‘সত্যের জয় হয়েছে। আমার কাছে অনেক প্রমাণ ছিল। আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। যেন শিল্পীদের পাশে থেকে কাজ করতে পারি।’
তবে ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এনটিভি অনলাইনকে জায়েদ খান বলেন, ‘আমি আপিল বোর্ডের রায় শুনেছি। এটা অবৈধ। নিজেদের গায়ের জোরে রায় ঘোষণা করেছেন তাঁরা। যেখানে আপিল বোর্ডেরই কার্যক্ষমতা নেই, সেখানে তারা কীভাবে রায় ঘোষণা করে।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের বিজয়ী সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের পদ থাকছে কি না, তা নিয়ে পরিচালক সমিতির কক্ষে আজ বিকেলে আপিল বোর্ডের সভা শুরু হয়।
সভায় জায়েদ খান অনুপস্থিত ছিলেন, তবে নিপুণ আক্তার হাজির হন। আপিল বোর্ডের দুই সদস্যের মধ্যে মোহাম্মদ হোসেন জেমী অনুপস্থিত থাকলেও মোহাম্মদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন নির্বাচনে আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সোহানুর রহমান সোহান।
মিটিং শুরুর আগে থেকেই বিএফডিসিতে উত্তেজনা দেখা যায়। চলে জায়েদ খানের বিপক্ষে মিছিল ও বিক্ষোভ।
মিশা সওদাগর-জায়েদ খানের আগের কমিটির আমলে ভোটাধিকার হারানো শিল্পীরা আজ দুপুর ৩টা থেকে এফডিসিতে অবস্থান নেন। তাঁরা দলবদ্ধ হয়ে, কেউ খালি গায়ে আলপনা এঁকে তাঁদের অধিকার হরণ করায় জায়েদের বিচার দাবি করেন। ‘বিচার চাই, বিচার চাই, জায়েদ খানের বিচার চাই’ স্লোগানে মিছিল বের করেন তাঁরা। জায়েদের পদত্যাগের দাবিও করা হয় মিছিল থেকে।
সাধারণ সম্পাদক পদে হেরে যাওয়া প্রার্থী নিপুণ আক্তার বিজয়ী সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের বিরুদ্ধে ‘ভোট কেনা’সহ একাধিক অভিযোগ করেছেন। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোহানুর রহমান সোহান আজ শনিবার বিকেল ৪টায় দুই পক্ষকে ডাকেন।
এর আগে সোহানুর রহমান সোহান জানান, ‘মন্ত্রণালয় আমাকে বিষয়টি সুরাহার দায়িত্ব দিয়েছে। আমি দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের ডেকেছি। দুই পক্ষের সঙ্গে বসব। অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করে একটি সারাংশ তৈরি করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেব। কারণ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নিবন্ধন ওই মন্ত্রণালয়েই। সারাংশ দেখে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে।’
গত বুধবার আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান নিপুণের অভিযোগ আমলে নিয়ে দিকনির্দেশনা চেয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছিলেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনি আপিল বোর্ড চূড়ান্ত ক্ষমতাপ্রাপ্ত, বর্ণিত প্রার্থীদ্বয়ের বিষয়ে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে নির্বাচনি আচরণবিধি মতে ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।
পরে ক্ষুব্ধ হয়ে জায়েদ খান এবারের নির্বাচনের আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা সোহানুর রহমান সোহানসহ পাঁচ জনকে আইনি নোটিশ পাঠান।
গতকাল শুক্রবার এনটিভি অনলাইনকে জায়েদ খান বলেন, ‘নির্বাচনি তফসিল অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি বিকেল ৫টার পর থেকে আপিল বোর্ড মৃত। এরাই শনিবারে নাকি একটি বৈঠক ডেকেছে (সাধারণ সম্পাদক পদে হেরে যাওয়া নিপুণ আক্তারের অভিযোগ প্রসঙ্গে); সেখানে আমাকেও উপস্থিত থাকতে হবে, এই মর্মে আমার পিয়নের কাছে চিঠি ধরিয়ে দিয়েছে। আপিল বোর্ড ২৯ তারিখ বিকেল ৫টার পর আপত্তি নিষ্পত্তি করেছে এবং নিপুণ পরাজয় মেনে নিয়ে স্বাক্ষর করে চলে গেছে। এখানেই আপিল বোর্ডের কাজ শেষ হয়ে গেছে।’
এবারের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে চিত্রনায়ক জায়েদ খান খানের কাছে ১৩ ভোটে হারেন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। এর পর থেকেই নানা দাবি ওঠে বিভিন্ন মহলের পক্ষে।