জীবনের গল্প বাকি রেখে এন্ড্রু কিশোর নেই এক বছর
বরেণ্য সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর এই ধরাধামে নেই, অনুরাগীদের মনে তা আজও বিস্ময় হলেও সত্যিই তাঁর শারীরিক উপস্থিতি নেই এক বছর হলো। এ বড় দুঃখের দিন!
২০২০ সালের আজকের দিনে, অর্থাৎ ৬ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এই কণ্ঠশিল্পী রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় বোনের বাসায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। গুণী এ শিল্পীর মৃত্যুতে বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে গভীর শোক নেমে আসে, আজও সেই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি সংগীতপ্রিয়রা। আজ তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।
উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন এন্ড্রু কিশোর। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৮ সেপ্টেম্বর তাঁর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর তাঁকে কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছিল। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক লিম সুন থাইয়ের অধীনে তাঁর চিকিৎসা হয়।
ক্যানসারের চিকিৎসা শেষে দীর্ঘ নয় মাস পর ২০২০ সালের ১১ জুন সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরেন এন্ড্রু কিশোর। এর মাত্র কয়েক দিন পরেই ৬ জুলাই অসীমের পথে পাড়ি জমান এ শিল্পী। ১৫ জুলাই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন খ্রিস্টানদের কবরস্থানে মা-বাবার পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
১৯৫৫ সালে এন্ড্রু কিশোরের জন্ম রাজশাহীতে। সেখানেই কেটেছে তাঁর শৈশব ও কৈশোর। এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। একসময় গানের নেশায় রাজধানীতে ছুটে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।
বাংলা গানের কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পী ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ হিসেবেও পরিচিত। বাংলা চলচ্চিত্রের গানে তাঁকে বলা যেতে পারে এক মহাসমুদ্র। কয়েক দশক ধরে সেই সমুদ্রে সাঁতার কেটে চলেছেন শ্রোতারা। ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যখানে’, ‘পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে খুঁজে পেয়েছি’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে’, ‘তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘চোখ যে মনের কথা বলে’সহ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান রয়েছে তাঁর।
এন্ড্রু কিশোরের স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তানের নাম সংজ্ঞা আর দ্বিতীয় জনের নাম সপ্তক।