বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যা মনে দাগ কেটেছে আরিফিন শুভর
সিনে পর্দায় বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন ঢাকাই সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীনির্ভর ‘বঙ্গবন্ধু’ সিনেমায় তাঁকে দেখা যাবে জাতির পিতার চরিত্রে। এরই মধ্যে মুম্বাই পর্বের শুট শেষ বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনার সিনেমাটির।
এমন ঐতিহাসিক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি আরিফিন শুভর। তিন-চার মাস ধরে দেশ ও দেশের বাইরে মোট পাঁচ দফা অডিশন পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু চরিত্রের জন্য তাঁকে নির্বাচিত করেছেন বলিউডের খ্যাতিমান পরিচালক শ্যাম বেনেগাল। প্রায় এক বছর ধরে সিনেমাটির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন; বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
এমন জানাশোনার পর বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সবচেয়ে মনে দাগ কেটেছে কোন জায়গাটা? এনটিভি অনলাইন এমন প্রশ্ন রেখেছিল এই চিত্রনায়কের কাছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সেই প্রশ্নের উত্তরে আরিফিন শুভ বলেছিলেন, ‘অনেক কিছু। ব্যক্তিগত জায়গায় একটা কথা বলতে পারি। একজন বাবা—আমার এই লেখাটা যিনি পড়বেন, তিনি যদি একজন বাবা হন বা একজন মা হন, একটা প্যারেন্ট যখন তাঁর সন্তান আরেক সন্তানকে জিজ্ঞেস করেন যে তোমার আব্বা কি আমার আব্বা? বঙ্গবন্ধুর এক ছোট সন্তান আরেক বড় সন্তানকে জিজ্ঞেস করছে, মানে উনার জীবদ্দশায় উনি এতটা সময় জেলে ছিলেন যে উনার নিজের সন্তান কনফিউসড ছিলেন, তোমার আব্বা কি আমার আব্বা; এই যে একটা লাইন।’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এ অভিনেতা আরও যুক্ত করেছিলেন, ‘আরেকটা হচ্ছে শেখ রাসেল বলেছিল যে আব্বার বাড়ি যাব। মানে ধানমণ্ডির বাড়ি হচ্ছে তাদের বাড়ি আর জেল হচ্ছে আব্বার বাড়ি। এই ধরনের অসংখ্য... পলিটিক্যাল দিক বাদ দিলাম। পলিটিক্যাল দিক আমরা অনেকে অনেকটা জানি। বাট, ব্যক্তিজীবনে আমি যেদিন বাবা হব... আমি এটা বারবার মর্মে-মর্মে ফিল করার চেষ্টা করেছি। আমার নিজের সন্তান কনফিউসড, বরং সে আমাকে এতটা কাছে পায়নি। একদমই কাছে পায়নি, বাবার যে স্নেহ-মমতা, সেটা এতই কম পেয়েছে, কারণ উনি জেলে ছিলেন। উনার বুকের ভেতর কষ্টটা কত বড় ছিল। এবং সেটা সত্ত্বেও উনি বাঙালি জাতির জন্য লড়ে গেছেন... বাবা ছিলেন, সবচেয়ে বড় কথা আপনি যে নামেই ডাকেন না কেন, আপনি যেখানেই বসান। আপনার-আমার মতো একদমই স্বাভাবিক একটা পরিবার থেকে উঠে এসে এবং রক্তমাংসের মানুষ উনি। কোনও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট দিয়ে উনাকে বানানো হয়েছে, তা মনে হয়? আপনার-আমার মতো রক্তমাংসের মানুষ। আপনার যেটাতে ব্যথা হয়, আপনার যেটাতে খুশি হয়, একইভাবে উনারও হতো। একজন মানুষ হিসেবে এতটা দগ্ধ হয়েছেন উনি, এতটা কষ্ট পেয়েছেন। তার পরও এ মানুষটাকে ভাঙা যায়নি। অসহায় গরিব-দুঃখী বাঙালির পাশ থেকে উনি সরে আসেননি। এটা খুব সহজ বলে আমার মনে হয় না... এই জিনিসগুলো আমার ভেতরে প্রচণ্ড রকম দাগ কেটেছে। এবং আরেকটা জিনিস হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত উনার সাহস। সত্যের সাথে লড়ার সাহস...।’
সেই সাক্ষাৎকারে আরিফিন শুভর কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এখন ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নিলে শুভ কত নম্বর পাবেন? শুভর উত্তর ছিল, ‘এটা হুট করে বলা কঠিন। তবে উনার জীবনটা এত বিস্তর, আমি যতটুকু জেনেছি, আই ডোন্ট থিঙ্ক বিলো ফিফটি পাব।’
চলতি বছরের এপ্রিলে মুম্বাই থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’র ভারতীয় অংশের শুটিং শেষ করে দেশে ফিরেছেন আরিফিন শুভ। এর পর শুট করেছেন কয়েকটি বিজ্ঞাপনের। হাতে আছে ‘নূর’ সিনেমা। পায়ের ইনজুরিতে ভুগতে থাকা শুভর শরীর ঠিক থাকলে সিনেমাটির শুট হতে পারে আগস্টের শেষ দিকে। আর ‘বঙ্গবন্ধু’ সিনেমার শুট সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে শুরু হতে পারে।