মঞ্চে বৃষ্টিপ্লাবিত ‘সারারাত্তির’
বর্ষামন্দ্রিত ঝড়জলের রাতে এক দম্পতি আটকে যায় খোলামাঠের ধারে একটি পোড়োবাড়িতে। ওরা বেরিয়েছিল ছুটিযাপনে। রাত্তিরটা সেখানে কাটানো ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না। আর সেখানেই আবির্ভূত হলো তৃতীয় চরিত্রটি, পোড়োবাড়ির প্রৌঢ় মালিক। নাটক কিংবা নাটকীয়তার শুরু তখনই...
গত ১০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চে নাটকের দল প্রসেনিয়াম-এর প্রথম প্রযোজনা ‘সারারাত্তির’-এর উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হলো। বাদল সরকারের রচনা, মোকাদ্দেম মোরশেদের নির্দেশনা এবং মোসলেম উদ্দিন শিকদারের আলোক পরিকল্পনায় নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছে মিলনায়তন-ভর্তি দর্শক সমাগমে, সন্ধ্যা ৭টায়।
‘সারারাত্তির’-এর প্রধান তিন ভূমিকায় অভিনয় করেছেন প্রতীক গুপ্ত, ফারহানা আনন্দময়ী ও মিশফাক রাসেল। নাটকের মঞ্চ ও পোশাক পরিকল্পনায় সিরাজাম মুনিরা স্বর্ণা, কোরিওগ্রাফি মিতাশা মাহরিন, আবহ পরিকল্পনায় মোকাদ্দেম মোরশেদ এবং শব্দ প্রক্ষেপণে দিদারুল আলম। গতকাল শনিবার এই নাটকের দ্বিতীয় মঞ্চায়ন হয়েছে।
মঞ্চে যাঁরা চোখ রেখেছেন, তাঁরা দেখেছেন, ভূতুড়ে আলো-আঁধারিতে প্রৌঢ়ের পরিচয়, আতিথেয়তা, একরাত্তিরের আন্তরিকতা—এ সবের আড়াল ডিঙিয়ে যা মূর্ত হয়ে তিনজনের সামনে এসে দাঁড়ায়, তা হলো সম্পর্কের প্রতিরূপ; যা এত দিন ওই দম্পতির কাছে অজানা, অচেনা ছিল। সাত বছরের অভ্যস্ত দাম্পত্যের শেকলে বন্দি হয়ে পড়া দম্পতি ধীরে ধীরে অনুধাবন করতে পারে, কাছে থাকলেই কাছের মানুষ হওয়া যায় না হয়তো। ফাঁকি ছিল না কোথাও, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই বড়ো ফাঁক ছিল ওদের সম্পর্কের বুননে। আর এই উপলব্ধির আয়নায় দুজনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে সম্পর্কের সেই অদেখা রূপকে আবিষ্কারে অনুঘটক হয়ে কাজ করে তৃতীয় ব্যক্তিটি। রাত গভীর হতে থাকে, বৃষ্টিপ্লাবিত রাতে ভেসে যায় ছকবাঁধা সংস্কারের প্রাচীর, রাত্রি শেষ হতে-হতে জেগে ওঠে অন্য রঙের এক প্রেমময় দিগন্তরেখা। দর্শকমনে রেখে যায় প্রশ্ন। এ রাত কি সত্য?
কোভিডের কারণে দীর্ঘ ছয় মাস বন্ধ থাকার পরে গত ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে সাংস্কৃতিক আয়োজন আবার শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রসেনিয়াম-এর নতুন নাটক ‘সারারাত্তির’ মঞ্চায়নের মাধ্যমে একাডেমির মঞ্চের পর্দা উঠেছে। নাট্যপ্রেমী দর্শকেরও প্রশংসা পেয়েছে এ নাটক।
মনন থেকে মঞ্চে—এই বাক্যবন্ধকে প্রতিপাদ্য করে নাটকের দল প্রসেনিয়াম যাত্রা শুরু করে ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর।