মধুমিতায় প্রথম কনসার্টে আজম খান বলেছিলেন ‘আমাদের কাছে আর গান নেই’
বাংলাদেশের সংগীতজগতে পপগুরু বা পপসম্রাটখ্যাত আজম খান নেই এক দশক। ২০১১ সালের আজকের দিনে (৫ জুন) রাজধানী ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান মুক্তিযোদ্ধা ও বহু গুণের অধিকারী কিংবদন্তি এই সংগীত তারকা।
আজম খানের সংগীতজীবনের শুরু প্রকৃতপক্ষে ষাট দশকের শুরুতে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পর ১৯৭২ সালে তিনি তাঁর বন্ধুদের নিয়ে ‘উচ্চারণ’ ব্যান্ড গঠন করেন। ১৯৭৪-৭৫ সালে একটি গান বাংলাদেশের সংগীতপ্রেমীদের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের হৃদয় জয় করে নেয়, সেটি হচ্ছে আজম খানের গাওয়া গান ‘হায় রে বাংলাদেশ’।
তবে আজম খান জীবনের প্রথম কনসার্টে অংশ নিয়েছিলেন মধুমিতা সিনেমা হলে। ২০১৫ সালে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় এমন তথ্য জানিয়েছিলেন আজম খানের বড় ভাই বিশিষ্ট সুরকার আলম খান।
আলম খান জানিয়েছিলেন, “মধুমিতা হলে তাঁরা প্রথম শো করেছিল। আমি ওই শোতে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। শো চলাকালীন দেখলাম ওরা চারটি গানই পর পর গাইছে। মানুষের কোনো ক্লান্তি নেই। তারা একই গান বার বার শুনছে। রাত ৯টা বাজার পর আজম বলল, ‘আমাদের কাছে আর গান নেই।’ শো চলাকালীন আমি লক্ষ করেছিলাম মানুষ প্রচুর নাচানাচি করেছে। আমি তখনই বুঝতে পেয়েছিলাম গানগুলো অনেক জনপ্রিয়তা পাবে। এই কথা আজমকেও আমি বলেছিলাম।”
আজম খানের গান শেখা প্রসঙ্গে তাঁর বড় ভাইয়ের ভাষ্যটা এমন, ‘একদিন আজম বলল, মেজ ভাই, আমি তো গান কিছু জানি না। না শিখেই গান গাই। আমি আপনার কাছে গান শিখতে চাই। পরে আমি তাঁকে বললাম, ঠিক আছে, শেখাব। প্রথমে আজম খান আবদুল লতিফের গাওয়া গণসংগীত গাইত।’
১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন আজম খান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ঢাকায় বেশ কয়েকটি গেরিলা অভিযানে অংশ নেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে আজম খানের নতুন ঘরানার সংগীত তরুণ প্রজন্মের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। তাঁকে বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীতের বিকাশের পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পপসম্রাট আজম খানের বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘কেন মন কাঁদে রে’, ‘জীবনে কিছু পাব নারে’, ‘জীবনে মরণ কেন আসে’সহ আরও অনেক গান।