সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের শেষকৃত্য সন্ধ্যা ৭টায়
ভারতের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকর আর নেই। ৯২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে গেছেন তিনি। আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় এ কণ্ঠের জাদুকরের শেষকৃত্য হবে।
বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর, আজ ভারতীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মুম্বাইয়ের শিবাজি পার্কে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের শেষকৃত্য হবে।
শিবাজি পার্কে একটি বিশেষ মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে লতা মঙ্গেশকরের মরদেহ রাখা হবে আর জনসাধারণ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন।
লতা মঙ্গেশকরকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এরই মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা তাঁর বাসভবনে উপস্থিত হয়েছেন।
কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে ভারতে দুদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এ সুরসম্রাজ্ঞীর সম্মানে আজ রোববার ও আগামীকাল দুদিন ভারতের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
লতার মৃত্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ শোক শোক প্রকাশ করেছেন। গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
লতা মঙ্গেশকর আজ ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ১২ মিনিটে দক্ষিণ মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ৯২ বছর বয়সে স্বজনসহ অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি।
বাংলা গানে তুমুল জনপ্রিয় লতা মঙ্গেশকর। ‘প্রেম একবার এসেছিল নীরবে’, ‘আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন’, ‘ও মোর ময়না গো’, ‘ও পলাশ ও শিমুল’, ‘আকাশপ্রদীপ জ্বেলে’সহ আরও অনেক বিখ্যাত বাংলা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।
গতকাল সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের শারীরিক অবস্থার আবার অবনতি হয়। পরে তাঁকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে নেওয়া হয়।
জানুয়ারির শুরুর দিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে লতা মঙ্গেশকরকে দক্ষিণ মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি নিউমোনিয়ায়ও ভুগছিলেন। পরে তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতিও হয়।
২৮ জানুয়ারি লতা মঙ্গেশকরকে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট থেকে সরিয়ে কেবিনে নেওয়া হয়। সে সময় শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। তবে ৫ ফেব্রুয়ারি ফের তাঁকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে নেওয়া হয়।
গত ৮ জানুয়ারি লতা মঙ্গেশকরের কোভিড নমুনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। পরদিন লতা মঙ্গেশকরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনা ও নিউমোনিয়ার জোড়া ফলায় বিদ্ধ হয়েছিলেন সুরসম্রাজ্ঞী।
১৯২৯ সালে ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন লতা মঙ্গেশকর। তাঁর বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর ও মা সেবন্তি মঙ্গেশকর। ভাইবোনদের মধ্যে লতা মঙ্গেশকর সবার বড়। তাঁর ভাইবোনেরা হচ্ছেন মীনা খাদিকার, আশা ভোঁসলে, ঊষা মঙ্গেশকর ও হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।
১৯৭৪ সালে সবচেয়ে বেশি গান রেকর্ড করার জন্য গিনেস বুকে নাম উঠেছিল তাঁর। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যে ২৫ হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করার অনন্য নজির গড়েছেন লতা মঙ্গেশকর।
তিন বার ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত লতা মঙ্গেশকর এক হাজারেরও বেশি ভারতীয় সিনেমাতে প্লে-ব্যাক করেছেন। ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষা ও বিদেশি ভাষায় গান গাওয়ার একমাত্র রেকর্ডটি তারই।
১৯৪২ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে সংগীতে ক্যারিয়ার শুরু করেন লতা মঙ্গেশকর। ৭০ বছরের ক্যারিয়ারে ৩০ হাজারের বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কিংবদন্তি এ শিল্পী।
লতা মঙ্গেশকর পদ্ম ভূষণ, পদ্ম বিভূষণ, দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারসহ ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারতরত্ন পেয়েছেন। ৯২ বছর বয়সী এ শিল্পী টুইটারের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন অনুরাগীদের সঙ্গে। নানা সময়ে অন্য শিল্পীদের বিশেষ দিবসে টুইট করতেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে সংগীতাঙ্গনে এক বিশেষ অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো।
লতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমেছে ভারত-বাংলাদেশসহ বিশ্বসংগীতাঙ্গনে। লতার মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করছেন রাজনীতিবিদ, খেলোয়াড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ।