২৫ রুপিতে লতার শুরু, রেখে গেছেন ৩৭০ কোটি
কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর দেহান্তরিত হলেও গানে বেঁচে থাকবেন সুদীর্ঘ কাল। ভক্তদের বিশ্বাস, তাঁর গান হাজার বছর ধরে সুরপিয়াসীদের পিপাসা মেটাবে। গতকাল সকালে অসীমের পথে পা বাড়ান এই সুরসম্রাজ্ঞী।
মৃত্যুর সময় লতা মঙ্গেশকরের বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। ১৯৪২ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে সংগীতে ক্যারিয়ার শুরু করেন লতা মঙ্গেশকর। ৭০ বছরের ক্যারিয়ারে ৩০ হাজারের বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কিংবদন্তি এ শিল্পী।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবর, ১৩ বছর বয়সে উপার্জন শুরু করেন লতা মঙ্গেশকর। মারাঠি সিনেমায় অভিনয় ও গান করেন। সেই বছরই হারান বাবাকে। তার পর থেকে পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। ছোট তিন বোন হলেন ঊষা, মীনা, আশা আর ভাই হৃদয়নাথ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রথম বার লতা মঙ্গেশকর উপার্জন করেছিলেন ২৫ রুপি। বর্তমানে তিনি প্রায় ৩৭০ কোটি রুপির মালিক। সঙ্গে রয়েছে কিছু শৌখিন গাড়িও। গানের রয়্যালিটি থেকে মাসে ৪০ লাখ রুপির কাছাকাছি আয় করতেন সুরসম্রাজ্ঞী। বছরে পেতেন প্রায় ছয় কোটি রুপি।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, লতা মঙ্গেশকরের মোট সম্পত্তি ৩৭০ কোটি রুপি সমমূল্যের। দক্ষিণ মুম্বাইয়ের অভিজাত এলাকায় থাকতেন। পেডার রোডের প্রভাকুঞ্জ ভবনে থাকতেন লতা মঙ্গেশকর। কোটিপতি হয়েও তিনি ছিলেন মাটির মানুষ। সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন।
রোববার রাতে মুম্বাইয়ের শিবাজি পার্কে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের শেষকৃত্যানুষ্ঠান হয়। শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে, বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খান, রণবীর কাপুর, আশা ভোঁসলে, বিদ্যা বালান, আমির খান, শচীন টেন্ডুলকারসহ বিশিষ্টজনেরা।
এ সুরসম্রাজ্ঞীর সম্মানে আজ দ্বিতীয় দিনের মতো ভারতের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকরের সম্মানে আজ ছুটি ঘোষণা করেছে।
লতা মঙ্গেশকর গতকাল ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ১২ মিনিটে দক্ষিণ মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ৯২ বছর বয়সে স্বজনসহ অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
১৯২৯ সালে ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন লতা মঙ্গেশকর। তাঁর বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর ও মা সেবন্তি মঙ্গেশকর। ভাইবোনদের মধ্যে লতা মঙ্গেশকর সবার বড়। তাঁর ভাইবোনেরা হচ্ছেন মীনা খাদিকার, আশা ভোঁসলে, ঊষা মঙ্গেশকর ও হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।
১৯৭৪ সালে সবচেয়ে বেশি গান রেকর্ড করার জন্য গিনেস বুকে নাম উঠেছিল তাঁর। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যে ২৫ হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করার অনন্য নজির গড়েছেন লতা মঙ্গেশকর।
তিন বার ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত লতা মঙ্গেশকর এক হাজারেরও বেশি ভারতীয় সিনেমাতে প্লে-ব্যাক করেছেন। ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষা ও বিদেশি ভাষায় গান গাওয়ার একমাত্র রেকর্ডটি তারই।
১৯৪২ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে সংগীতে ক্যারিয়ার শুরু করেন লতা মঙ্গেশকর। ৭০ বছরের ক্যারিয়ারে ৩০ হাজারের বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কিংবদন্তি এ শিল্পী।
লতা মঙ্গেশকর পদ্ম ভূষণ, পদ্ম বিভূষণ, দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারসহ ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারতরত্ন পেয়েছেন। ৯২ বছর বয়সী এ শিল্পী টুইটারের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন অনুরাগীদের সঙ্গে। নানা সময়ে অন্য শিল্পীদের বিশেষ দিবসে টুইট করতেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে সংগীতাঙ্গনে এক বিশেষ অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো।