আবদুল আজিজ প্রযোজিত ছবিতে নায়িকা শ্রদ্ধা কাপুর!
বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আবদুল আজিজ। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারত যৌথ প্রযোজিত বেশ কিছু চলচ্চিত্র প্রযোজনা করে আলোচিত হয়েছেন তিনি। মুক্তির অপেক্ষায় আছে তাঁর প্রযোজনায় চলচ্চিত্র ‘ডুব’সহ আরো বেশ কিছু চলচ্চিত্র। সম্প্রতি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘ডুব’, নিজের ব্যক্তিগত কাজ ও অন্যান্য বিষয়ে আবদুল আজিজ খোলামেলা কথা বলেছেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘ডুব’ ছবির অন্যতম একজন প্রযোজক আপনি। ছবিটি কবে মুক্তি পাবে? ছবিটি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বায়োপিক, এমন দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে কিছু বলুন।
আবদুল আজিজ : ‘ডুব’ ছবি পয়লা বৈশাখে মুক্তি পাবে। এটা নিশ্চিত। ছবির শুটিংয়ের আগে আমি চিত্রনাট্য পড়িনি। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল। ছবি বানানোর পর আমি দেখেছি, কিন্তু আমি সেখানে কারো বায়োপিক খুঁজে পাইনি। পয়লা বৈশাখে আমাদের ‘ধেৎতিরিকি’ ছবিটিও মুক্তি পাবে। ‘ডুব’ ও ‘ধেৎতিরিকি’ ছবিটি দুটো নিয়েই আমি আশাবাদী। দুটো দুই ঘরানার ছবি। তবে ‘ডুব’ অনেক সাড়া জাগাবে বলে আমার বিশ্বাস।
আপনার সঙ্গে নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওনের সেলফি প্রসঙ্গে কিছু বলুন…
আবদুল আজিজ : প্রথমেই বলতে চাই, আমি মানুষকে সম্মান করতে বিশ্বাসী। কিছুদিন আগে একটা পার্টিতে শাওন আপুর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। আমি তাঁকে বলেছিলাম, ‘আপু, আমি আপনার সঙ্গে একটা ছবি তুলি?’ তিনিও হাসিমুখে ছবি তুলেছেন। আমরা সেদিন ফেসবুকেও ফ্রেন্ড হয়েছিলাম। পরে পত্রিকার খবরে পড়েছি, সেলফিটা নিয়ে তিনি বিব্রত বোধ করেছেন।
অনেকে মনে করছেন, ‘ডুব’ ছবির প্রচারের জন্য কৌশলে হুমায়ূন আহমেদ প্রসঙ্গ টানা হয়েছে, আসলেই কি তাই?
আবদুল আজিজ : না, এটা প্রচারের কৌশল নয়। আমরা নিজেরাও ব্যাপারটা নিয়ে ডিস্টার্ব ফিল করছি।
আপনি প্রযোজক ও মেহের আফরোজ শাওন একজন নির্মাতা। ভবিষ্যতে আপনাদের একসঙ্গে কাজ করার কি সম্ভাবনা আছে?
আবদুল আজিজ : হ্যাঁ, কাজ করা হতেও পারে। হুমায়ূন আহমেদ স্যার বেঁচে থাকতে ‘শুভ্র গেছে বনে’ বইটি নিয়ে আমি ছবি বানাতে চেয়েছিলাম। সেটার রাইটও স্যারের কাছে আমি চেয়েছিলাম। স্যারের সঙ্গে এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলার সময় মেহের আফরোজ শাওন ও ইমন সাহা উপস্থিত ছিলেন। স্যারের শর্ত ছিল, ছবির চিত্রনাট্য ভালো হতে হবে। শুভ্র চরিত্রে যে অভিনয় করবে, তাঁকে ফর্সা ও মায়াবী চোখের অধিকারী হতে হবে। আমি তাঁকে বলেছিলাম, স্যার, আমরা চিত্রনাট্য লেখার পর আপনি দেখে দেবেন।
যা হোক, স্যার শেষবার আমেরিকা যাওয়ার আগে এসব কথা হয়েছিল। স্যারকে আমি ছবির ১০টা দৃশ্যের চিত্রনাট্য লিখে ই-মেইল করেছিলাম। আমাকে স্যার জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আমার এত গল্প থাকতে এই গল্পের ছবি কেন?’ আমি বলেছিলাম, ‘এই গল্পটা আমার অনেক ভালো লেগেছে। ছবি বানালে ভালো হবে।’
সেদিন পার্টিতে শাওন আপুর সঙ্গে হঠাৎ এই ছবি নিয়ে আমার আলাপ হয়েছিল। আমি তাঁকে বলেছিলাম, ‘ছবিটি আপনি বানালে বিগ বাজেটের কমে বানাবেন না। আড়াই কোটি টাকার বাজেট রাখলে ছবিটি ভালো হবে। যদি আপনি বানাতে চান, আমাকে বলতে পারেন। আমি ইনভেস্ট করব।’ শাওন আপু আমাকে এখনো কোনো মতামত জানাননি। তিনি এখন অন্য ছবি নিয়ে ব্যস্ত আছেন বলে জানান।
‘রক্ত’ ছবির সময় আপনি বলেছিলেন, পরী মণি আপনার সারা জীবন বন্ধু থাকবেন। আপনাদের বন্ধুত্বের খবর কী?
আবদুল আজিজ : আমরা এখনো ভালো বন্ধু আছি। ভবিষ্যতেও থাকব।
আপনার পরবর্তী ছবিতে পরীকে কি দেখা যাবে?
আবদুল আজিজ : এটা তো প্রফেশনাল ব্যাপার। এখন এসব বলব না।
আপনি ছবি পরিচালনাও করেন। ছবি পরিচালনা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
আবদুল আজিজ : আমি ভিন্ন ঘরানার একটি চলচ্চিত্র বানানোর পরিকল্পনা করছি। ছবিটির নাম ‘আঁধার থেকে আঁধারে’। বাকি কথা পরে বলব।
সমালোচনা কিংবা আলোচনা কীভাবে দেখেন?
আবদুল আজিজ : কোনো কাজে ভুল করলে আমি কষ্ট পাই। তবে কাজের ব্যাপারে সমালোচনা ও আলোচনা কোনোটা নিয়েই আমি মাথা ঘামাই না।
জাজ টেলিভিশন চ্যানেল আনার ঘোষণা দিয়েছে। কবে চ্যানেলটি দেখা যাবে?
আবদুল আজিজ : টেলিভিশনের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করেছি। লাইসেন্স পেলেই এক মাসের মধ্যে টেলিভিশনটি বাজারে আনতে চাই।
কবে চিন্তা করলেন জাজ টেলিভিশন চ্যানেল আনা দরকার?
আবদুল আজিজ : সিনেমার বিজ্ঞাপন দেওয়ার সময় আমি খুব চিন্তায় পড়ে যেতাম। কারণ, দর্শক কোন চ্যানেল দেখছেন, আমি এটা বুঝতে পারতাম না। তাই হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিই, এমন একটা চ্যানেল করব, যেখানে সিনেমা সম্পর্কিত সব সাক্ষাৎকার, টক শো, খবর, গান সবকিছুই থাকবে। আমাদের এই চ্যানেলে আমার ছবি ছাড়াও দেশ-বিদেশের সব ছবির খবরাখবর নিয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করার পরিকল্পনা আছে।
জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে অনেক ছবি নির্মাণ করেছেন। কোন ছবিটি আপনার আশা কিংবা স্বপ্ন পূরণ করতে পেয়েছে?
আবদুল আজিজ : এখন পর্যন্ত আশা পূরণ করার মতো কোনো ছবি আমি নির্মাণ করতে পারিনি।
আপনি হিন্দি ছবি বানানোর কথা বলেছেন, সেই কাজের অগ্রগতি কতদূর?
আবদুল আজিজ : ২০১৮ সালে আমরা হিন্দি ছবি নির্মাণ করব। কথাবার্তা চলছে। হিরোইন আমরা নির্বাচন করেছি। শ্রদ্ধা কাপুর অভিনয় করবেন।
ছবিতে বাংলাদেশের কোনো অভিনয়শিল্পী কি অভিনয় করবেন?
আবদুল আজিজ : যদি যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ করি, তাহলে থাকবে। ছবির হিরো বাংলাদেশ থেকে নেওয়ার কথা আমি ভাবছি। কিন্তু সেই হিরো কে হবে, এখনো সেটা নির্বাচন করিনি। যখন নির্বাচন করব, তখন অবশ্যই জানাব।
হঠাৎ হিন্দি ছবি করার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?
আবদুল আজিজ : হিন্দি ছবিতে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। লসও হতে পারে। তবে বাংলাদেশের ছবি এখন খুব লাভজনক অবস্থায় নেই। আমি তো একজন ব্যবসায়ীও। সব দিক চিন্তা করতে চাই। ব্যবসার বাজার বড় করতে চাই।
হলিউডেও কি কাজ করতে চান?
আবদুল আজিজ : হলিউডের ছবিতেও আমরা কাজ করতে চাই। বলিউডের ছবির কথাবার্তা মোটামুটি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বলতে পারেন ফাইনাল, কিন্তু হলিউডের ছবির এখনো কিছু ফাইনাল হয়নি। হলিউডে ছবি বানালেও আমি বাংলাদেশের কিছু শিল্পী নিতে চাই।
আপনার অধিকাংশ ছবি যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণ করা। এর কারণ কী?
আবদুল আজিজ : প্রথম দিকে যৌথ প্রযোজনার ছবি আমি বানাইনি। কয়েকটা ছবি বানানোর পর যৌথ প্রযোজনার ছবি আমি নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিই। এর পেছনে একটাই কারণ ছিল তা হলো, চলচ্চিত্রের বড় বাজার তৈরি করতে আমি চেয়েছিলাম।
আপনি কতখানি সফলতা পেয়েছেন বলে মনে করছেন?
আবদুল আজিজ : আমার মনে হয়, চলচ্চিত্রের বড় বাজার ধরতে আমরা পেয়েছি। এখন তো নিয়মিত যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ হচ্ছে।
আপনার চলচ্চিত্রে কলকাতার সংগীতশিল্পীরা বেশি কাজ করেন। এর কারণ কী?
আবদুল আজিজ : কলকাতার সংগীতশিল্পীদের মধ্যে আমি পেশাদারিত্ব বেশি দেখেছি। বাংলাদেশের অনেক শিল্পীকে দেখেছি তাঁদের গান ও সুর পছন্দ না হলে তাঁরা মন খারাপ করেন।
প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন। অভিনয় করার ইচ্ছে আছে?
আবদুল আজিজ : না, নেই। অনেক পরিচালক আমাকে ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব দেন।
জাজ মাল্টিমিডিয়া নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আবদুল আজিজ : জাজ মাল্টিমিডিয়া বাংলাদেশে আছে ও থাকবে। আমরা এর পরিসর বাড়াতে চাই। দিল্লিতে আমরা জাজের অফিস করব। এ ছাড়া অন্যান্য আরো দেশে জাজের অফিস করার চিন্তা আছে।