পুরস্কার কেলেঙ্কারি
‘কত বড় বাটপারি তারা করেছে!’
‘নিয়তি’ ছবিতে কাজ করনেনি, অথচ সেই ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে বিস্মিত হয়েছিলেন মোহাম্মদ হাবিব। বিষয়টি তিনি সম্প্রতি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬ কমিটিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। আর এই তথ্যটি দিয়েছেন পুরস্কার কমিটির নির্বাহী সদস্য আবু মুসা।
এনটিভি অনলাইনকে আবু মুসা বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে বিষয়টি জেনেছি, হাবিব আমাদের কাছে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমরা তো অবাক হয়ে যাচ্ছি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের বাটপারি দেখে। কত বড় বাটপারি তারা করেছে! আমরা যখন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমরা তো জানি না কে কাজ করেছেন, আর কে কাজ করেননি। আমরা ছবির টাইটেল দেখি, ছবিতে কে কী হিসেবে কাজ করেছেন। আর ছবিটির সেন্সর কপিই আমরা দেখি। আমরা যে কপিটা দেখেছি সেখানে নৃত্য পরিচালক হিসেবে হাবিবের নাম লেখা ছিল। এখন হাবিব নিজেই জানিয়েছেন তিনি এখানে কাজ করেননি। সে ক্ষেত্রে যে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এটি প্রযোজনা করেছে তারা দুর্নীতি করেছে। ছবির প্রযোজককে এর দায় নিতে হবে।’
২০১৬ সালে ‘নিয়তি’ মুক্তির আগে ও পরে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে, এমনকি নিজেদের ইউটিউব চ্যানেলেও জাজ দাবি করেছে এই ছবিটির প্রযোজক তারা। কিন্তু গত সোমবার এনটিভি অনলাইনে পুরস্কার কেলেঙ্কারি নিয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ায় বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। গতকাল বুধবার জাজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন ছবিটি তাঁরা প্রযোজনা করেননি, শুধু পরিবেশনা করেছেন।
এ বিষয়ে পুরস্কার কমিটির নির্বাহী সদস্য আবু মুসা বলেন, ‘বিষয়টি যদি এমন হয়ে থাকে তবে অবশ্যই সেন্সর বোর্ড এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। কারণ আমরা পর্দায় নাম দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কে কাজ করেছেন। যদি তারা বলে থাকে যে, ছবিটি তারা প্রযোজনা করেনি, তা হলে এর দুর্নীতি আরো বেশি, কারণ আমরা প্রযোজক হিসেবে জাজের নাম দেখেছি পর্দায়। তার মানে তারা যৌথ প্রযোজনার সময় বিদেশি শিল্পী নিয়ে কাজ করেছে, কিন্তু নীতিমালার প্রশ্নে বাংলাদেশের শিল্পীর নাম দিয়েছে। এটা আরেকটা প্রতারণা। যৌথ প্রযোজনার প্রিভিউ কমিটির কাছে কাগজ জমা দিতে হয়, সেখানেও প্রতারণা করা হয়েছে। বিষয়টি সেন্সর বোর্ডের খতিয়ে দেখা উচিত।’
আবু মুসা আরো বলেন, ‘এখন যেটা বুঝতে পারছি, এই ছবিতে অনেকগুলো অনিয়ম করা হয়েছে। টাকার কাছে আসলে অনেকেই বিক্রি হয়েছে। তারপরও আমি হাবিবকে ধন্যবাদ দিতে চাই, কারণ তিনি টাকার কাছে বিক্রি হননি। সত্যকে তুলে ধরেছেন। আমি মনে করি, এই বিষয়ে অবশ্যই বিচার হতে হবে, কারণ জাতীয় চলচ্চিত্র পুস্কার নিয়ে কোনো জালিয়াতি করতে দেওয়া হবে না।’
এর আগে সোমবার নৃত্য পরিচালক মোহাম্মদ হাবিব এনটিভি অনলাইনের কাছে স্বীকার করেন, তিনি ‘নিয়তি’ ছবিতে কাজ করেননি। তিনি বলেন, ‘আমি যে ছবিতে কাজ করিনি সেই ছবির জন্য আমি কেমন করে পুরস্কার পাই? বিষয়টি নিয়ে আমি অনেক বেশি বিব্রত। আমাদের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবার জন্য বেশ কয়েক বছর ধরেই অপেক্ষা করছিলাম। সবাই আমার কাজের জন্য প্রশংসা করত, কিন্তু কেন পুরস্কার পাচ্ছিলাম না তা এখন বুঝতে পারছি। এমন করে যদি অনিয়ম হয় তা হলে আমার মতো যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা কীভাবে পুরস্কার পাবেন?’
হাবিব এ সময় আরো জানান, কী করে তাঁর নাম এই ছবির অন্তর্ভুক্ত হলো সেটাও তিনি জানেন না।