অভিনয়কে বিদায় জানাচ্ছেন রাজ্জাক
নতুন আর কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন না নায়করাজ রাজ্জাক। বাংলা চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি এ অভিনেতা সম্প্রতি বেশ কয়েকবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর পরিবার। এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ থাকলেও তিনি আর কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত হবেন না- এমনটাই জানিয়েছেন নায়করাজের ছোট ছেলে নায়ক সম্রাট। এ বিষয়ে নায়করাজের ছেলে সম্রাট এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘‘আব্বা তো গত তিন বছর কোনো ছবির শুটিংয়ে অংশ নেননি। মাঝে বাপ্পা ভাইয়ের ‘কার্তুজ’ ছবিতে কাজ করেছেন তাও আবার মাত্র চারটি দৃশ্যে। আমরা চাইনা আব্বা আবার কাজ করুক। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বেশ কয়েকবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আমরা চাই না তিনি আবার অসুস্থ হোন। সবাই দোয়া করবেন, আব্বা যেন সুস্থভাবে জীবনের শেষ সময়টা অতিক্রম করতে পারেন। পরিবারের সাথে আনন্দ নিয়ে সময় কাটাতে পারে। কাজ তো জীবনে আব্বা অনেক করেছেন আর কত?’
নায়করাজ বলতে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে একজনকেই বোঝানো হয়। তিনি রাজ্জাক, যিনি একাধারে একজন অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্র অঙ্গনে ভূমিকা পালন করছেন।
নায়করাজ ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সে কলকাতায় মঞ্চ নাটকে জড়িয়ে পড়েন রাজ্জাক। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৪ আলে দাঙ্গার সময় ঢাকায় চলে আসেন পরিবারের সাথে। প্রথমদিকে রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আব্দুল জব্বার খানের সহযোগিতায় ইকবাল ফিল্মসে কাজ করার সুযোগ পান। পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী হিসেবে ‘উজালা’ ছবিতে কাজ শুরু করেন। সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের ‘তেরো নাম্বার ফেকু অস্তাগড় লেন’ চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক। পরবর্তী সময়ে ‘কার বউ’, ‘ডাক বাবু’, ‘আখেরী স্টেশন’সহ আরো বেশ কয়েকটি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। পরে ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে সুচন্দার বিপরীতে তিনি নায়ক হিসেবে ঢালিউডে উপস্থিত হন এবং সবার মন জয় করে নেন। দর্শকের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি নায়করাজ হিসেবে পরিচিতি পান।
নায়করাজ প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ‘কি যে করি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য। মোট চারবার তিনি জাতীয় সম্মাননা পেয়েছেন। ২০১১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন।
রাজ্জাক প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। নায়করাজ শুধু নায়ক হিসেবেই নয়, পরিচালক হিসেবেও সফল। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র। সর্বশেষ তিনি ‘আয়না কাহিনী’ ছবিটি নির্মাণ করেছেন। চলচ্চিত্রের বাইরে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করেছেন নায়করাজ রাজ্জাক। তাঁর প্রযোজনা সংস্থার নাম রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন।
রাজ্জাক বাবা আকবর হোসেন ও মা মিরারুন্নেসার কনিষ্ঠ সন্তান। রাজ্জাকের দুই ছেলে বাপ্পারাজ আর সম্রাটও চলচ্চিত্র অভিনেতা।