‘ইনি তো বাংলাদেশের জয়া আহসান’
আগামীকাল ১৬ অক্টোবর ভারতে মুক্তি পাচ্ছে সৃজিত মুখোপাধ্যয় পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘রাজকাহিনী’। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পটভূমিতে নির্মিত হয়েছে ছবিটি। এতে রুবিনা চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের অভিনেত্রী জয়া আহসান। ছবির চরিত্র, আশা-প্রত্যাশা, কাজের অভিজ্ঞতা ও অন্যন্য বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে।
প্রশ্ন: ‘রাজকাহিনী’ ছবিতে রুবিনা চরিত্রে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু বলুন?
জয়া: ছবিতে রুবিনা একজন সেক্স ওয়ার্কার। মূলত ১১ জন যৌনকর্মীকে নিয়ে ছবির মূল গল্প এগিয়ে যায়। অনেক ভালো ভালো অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে আমি এখানে আমি কাজ করেছি। অভিজ্ঞতা তো অবশ্যই ভালো ছিল। ছবির প্রয়োজনে আমরা সব শিল্পীরা বন্দুক চালানো এবং কিভাবে লাঠি চালাতে হয় শিখেছি। পুরো টিম ছিল অনেক প্রফেশনাল । সবার মধ্যে আন্তরিকতাও অনেক বেশি ছিল। শুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে আমরা প্রত্যেকে অনেক মজা করেছি। কিন্তু কাজের ব্যাপারে আমরা সবাই ছিলাম সিরিয়াস।
প্রশ্ন: এর আগেও আপনি যৌনকর্মী চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন। দর্শক ‘রুবিনা’ চরিত্রটি কেন পছন্দ করবে বলে আপনি মনে করেন?
জয়া: একটা বড় পার্থক্য তো আছেই। যেহেতু এটা দেশভাগের গল্প। তখন বাংলাদেশেরও জন্ম হয়নি। রুবিনা নদীয়ার মেয়ে। কিন্তু একটা পর্যায়ে তাঁকে পতিতালয়ে আসতে হয়। গল্পে অনেক মোড় আছে। চরিত্রটাও অনেক চ্যালেঞ্জিং।
প্রশ্ন: সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মত বড় মাপের একজন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন, সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলুন।
জয়া: ছবিতে অভিনয়ের টেকনিক্যাল অনেক বিষয় থাকে। সেগুলোর অনেক কিছু আমি তাঁর কাছ থেকে শিখেছি। আসলেই তিনি একজন দক্ষ পরিচালক।
প্রশ্ন: ‘রাজকাহিনী’ছবিটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কিরকম?
জয়া: প্রত্যাশা ভালো। আমার ধারনা ছবিটি সমাদৃত হবেই।
প্রশ্ন: চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি থেকে এতদিনে আপনি কি কি শিখেছেন বলে মনে করেন?
জয়া: অনেক কিছু। আমি থিয়েটার থেকে আসিনি। অভিনয়ের উপর আমার কোন পড়াশোনাও নেই। আমি কাজ করতে এসে সবকিছু শিখেছি। সেই শিক্ষাটা শুরু হয়েছিল আমার নাটক থেকে। সেখান থেকেই আমি মূলত তৈরী হয়েছি। তারপর আমি হাঁটিহাঁটি পা পা করে চলচ্চিত্র জগতে কাজ করতে শুরু করি এবং প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু শিখছি। ইন্ডাস্ট্রি ছিল আমার অভিনয়ের শিক্ষালয়।
প্রশ্ন: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। দুই প্রজন্মের দর্শকের কাছেই আপনি সমান জনপ্রিয়। জনপ্রিয়তা ও অর্জন আপনি কিভাবে দেখেন?
জয়া: আমি এটাকে জনপ্রিয়তা বলব না। আমি বলব সব মানুষের ভালোবাসা। জনপ্রিয়তার পিছনে আমি কখনও হাঁটিনি। আমি শুধু কাজকে প্রাধান্য দিয়েছি। কি অর্জন করতে পেরেছি এটা আমি জানি না।সততার সঙ্গে আমি কাজ করেছি। যখন যে চ্যালেঞ্জ আমার সামনে এসেছিল সেটাই আমি সাহসের সঙ্গে নিয়েছি। আমি এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: একবার এক সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছিলেন অভিনয় আপনার সমস্ত ধ্যান-ধারনা। তাহলে আপনি ব্যক্তি জয়াকে কতটুকু সময় দেন?
জয়া: অভিনয় আমার কাছে প্রার্থণার মত। আমি অভিনয়কে প্রথমে রাখতে চাই। তবে ব্যক্তিগত জীবন তো একটা আছেই। ব্যক্তিগত জীবনের ছাপই কিন্তু আমার কাজের উপর পড়ে।
প্রশ্ন: অনেক তরুনশিল্পীদের কাছে ‘জয়া আহসান’ আইকন। তাদের প্রতি আপনার কোন পরামর্শ?
জয়া: সবাই অনেক মেধাবী। শুধু বলব বিক্ষিপ্ত হলে চলবে না। লক্ষ স্থির হতে হবে। সবাই আসলে নিজের জায়গাটা নিজেই খুঁজে বের করে নেয়।
প্রশ্ন: অনেক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বিশেষ কোন চরিত্রের প্রতি এখনও কোন দুর্বলতা আছে কি?
জয়া: এরকম অনেক অনেক আছে। আমি সবসময় ভার্সেটাইল চরিত্রে কাজ করতে আগ্রহী। নায়িকা ইমেজের থেকে চরিত্র নির্ভর কোন গল্পে অভিনয় করতে আমি বেশি স্বাচ্ছান্দ্যবোধ করি। যেটাকে আপনি বলতে পারেন চরিত্রাভিনেত্রী।
প্রশ্ন: ভারতের শিল্পীরা কাজের ক্ষেত্রে কেমন?
জয়া: তাঁরা অনেক বেশি প্রফেশোনাল।
প্রশ্ন: ভিনদেশে বাংলাদেশের একজন শিল্পী হিসেবে আপনি কাজ করছেন। কেমন লাগছে?
জয়া: অনেক ভালো। বাইরে যখন আমি শপিং করতে বের হই, বিভিন্ন সেমিনারে অংশ নেই, শিল্পী হিসেবে কাজ করি তখন অনেকেই বলে, ‘ইনি তো বাংলাদেশের জয়া আহসান।’ এই কথাটা শুনতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। সত্যি বলতে আমার বুক ভরে যায়।