‘মুখোশ মানুষ’ ছবির বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ
আলোচিত ছবি ‘মুখোশ মানুষ-দ্য ফেইক’ এর মূল লেখকের অনুমতি না নিয়েই পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে রূপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এটাকে প্রতারণা বলে দাবি করেছেন ‘মুখোশ মানুষ’ নাটকের চিত্রনাট্য লেখক নাসির উদ্দিন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী।
নাসির উদ্দিনের দাবি, টিভি নাটকের কথা বলে তাঁর কাছ থেকে চিত্রনাট্য লিখিয়ে নিয়েছিলেন পরিচালক ইয়াসির আরাফাত জুয়েল। কিন্তু কোনো টেলিভিশন চ্যানেল নাটকটি প্রচারে রাজি না হওয়ায় এর ট্রেলার ছেড়ে একে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে চালিয়ে দেন পরিচালক জুয়েল। পরে যখন একে পূর্ণাঙ্গ ছবিতে রূপান্তরের কাজ শুরু হয় তখন নাসির উদ্দিনের নাম বাদ দিয়ে চিত্রনাট্যকার হিসেবে যোগ করা হয় আহাদুর রহমানের নাম। নাসির উদ্দিন দাবি করেছেন তাঁর গল্প এবং চিত্রনাট্য অনুমতি ছাড়াই আরেকজনের নাম দিয়ে চলচ্চিত্রে রূপ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এনটিভি অনলাইনের কাছে একটি প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছেন তিনি।
নাসির উদ্দিনের প্রতিবাদলিপি
‘মুখোশ মানুষ’ নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্কে যাওয়ার ইচ্ছা বা আগ্রহ কোনোটাই আমার নেই। আজকে একটি পত্রিকায় পড়লাম, ছবির পরিচালক ইয়াসির আরাফাত জুয়েলে বলেছেন, আমি নাকি হিংসাপরায়ণ হয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছি। এর উত্তরে আমি বলব, আমার ছোট একটি ভাবনা এবং একটি গল্প নিয়ে জুয়েল আজকে তাঁর বতর্মান অবস্থান তৈরি করেছেন। সুতরাং তাঁকে হিংসা করার প্রশ্নই ওঠে না।
এবার আসি যৌক্তিকতা নিয়ে , একজন লেখকের মূল ভাবনা ও গল্প নিয়ে সিনেমা বানানোর উদ্যোগ অবশ্যই ভালো। কিন্তু তার আগে লেখকের অনুমতি নিতে হয়, আমি জুয়েলকে সিনেমা তৈরি করার কোনো অনুমতি দেইনি এবং তিনি অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেননি। কারণ মাত্র আট হাজার টাকার বিনিময়ে প্রাপ্ত গল্প ও চিত্রনাট্য তিনি নিজের সম্পদ বলে মনে করছেন।
আমি আবারও বলছি, ‘মুখোশ মানুষ’ নাম বা গল্প নিয়ে অমি কোনো বিতর্কে জড়াতে চাই না। তবে মানুষের সত্য জানার অধিকার আছে। আমি স্পষ্টভাবেই বলতে চাই, আমার মূল ভাবনা এবং গল্প নিয়ে আমি জুয়েলকে সিনেমার বানানোর অনুমতি দেইনি। আমার গল্পটি সমাজের কিছু সত্য ঘটনার ওপর ভিত্তি করে লেখা। কিন্তু জুয়েল সেটাকে নিজের গল্প বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।
সাংবাদিকদের কাছে আমার অনুরোধ, অশ্লীলতাকে পুঁজি করে জুয়েলের মতো পরিচালক নামধারী কিছু প্রতারক দর্শক ও লেখকের সাথে প্রতারণা করছেন। তাই তাঁকে গুরুত্ব না দিয়ে, বাংলাদেশের বহু তরুণ-তরুণী একটি ভালো সিনেমা বানানোর জন্য জীবনযুদ্ধ করে যাচ্ছে, তাদের নিয়ে লিখুন। চলচ্চিত্র একটি শিল্প, এখানে শিক্ষার দরকার, দরকার পেশাদারিত্ব। ইয়াসির আরাফাত জুয়েল ‘মুখোশ মানুষ’ নিয়ে যেভাবে সিনেমা বানাচ্ছে তা মানুষের সাথে প্রতারণা।
আমি শুধুমাত্র আমার সঙ্গে যে প্রতারণা হয়েছে সেটা তুলে ধরলাম।এর পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণও আমার কাছে রয়েছে। টিভি নাটকের কথা বলে চিত্রনাট্য নিয়েছিলেন জুয়েল কিন্তু সেটাকে পূর্ণাঙ্গ সিনেমায় রূপ দেওয়ার সময় আমার কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। অথচ আমার গল্প এবং আমার চিত্রনাট্যের ওপর ভর করে বানানো হচ্ছে সিনেমাটি। আমি শুধু চোরকে চোর বলেছি, প্রতারণার কথা বলেছি।
এ বিষয়ে পরিচালক ইয়াসির আরাফাত জুয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এনটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে।
প্রশ্ন : নাসির উদ্দিনের অভিযোগ সম্পর্কে কী বলবেন?
জুয়েল : নাসির উদ্দিনের সাথে আমাদের একটা নাটকের গল্প নিয়ে কথা হয়েছিল। আমরা নাটকটি করেছিলাম, উনাকে সেজন্য পারিশ্রমিকও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যখন ভাবলাম এটাকে পূর্ণদৈঘ্য চলচ্চিত্র বানাব তখন আমরা নতুন করে কাজে নামি। আর চলচ্চিত্রের জন্য কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন আহাদুর রহমান। নাটকের কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছিলেন নাসির উদ্দিন, এমনকি মূল ভাবনাও তাঁর। আমাদের ছবির টাইটেলে মূল ভাবনায় নাসির উদ্দিনের নাম যাবে।
উনি যে অভিযোগ করেছেন তা ঠিক নয়। আমরা উনার সাথে প্রতারণা করিনি। ছবির কাজ শেষ করি, উনি হলে গিয়ে দেখবেন ঠিকই টাইটেলে উনার নাম আমরা রেখেছি।
প্রশ্ন : নাটকের কাহিনী ও চিত্রনাট্য, এমনকি মূলভাবনা যদি নাসির উদ্দিনের হয় তাহলে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য তাঁকে দিয়ে লেখাননি কেন?
জুয়েল : আমি মনে করি চলচ্চিত্রের কাহিনী ও চিত্রনাট্য করার মতো দক্ষতা তাঁর নেই। আমি এমন একজনকে দিয়ে চিত্রনাট্য করিয়েছি যে আমাকে বোঝে এবং আমি যাকে বুঝি। এই বোঝাপড়াটা না থাকলে ছবির চিত্রনাট্য ভালো হয় না।
প্রশ্ন : নাসির উদ্দিন আপনার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে আপনি কি তাঁকে কিছু বলতে চান?
জুয়েল : আমার আসলে উনাকে কিছু বলার নেই। কারণ উনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। আমি উনার মূল ভাবনা ঠিক রেখে নিজের মতো করে গল্প তৈরি করেছি। উনি হলে গিয়ে ছবিটি দেখলে বুঝবেন- একটি নাটককে চলচ্চিত্রে রূপ দিলে গল্পে কী কী পরিবর্তন আসে।