বলিউডের দৃঢ়চিত্তের নারীরা
সময়ের সাথে সাথে বলিউডের চেহারা বদলেছে। বলিউডে পুরুষতন্ত্রের প্রভাব এখনো রয়েছে হয়তো, কিন্তু একচ্ছত্র তো আর নয়। বলিউডের অভিনেত্রীরা এখন কেবল সৌন্দর্য, অভিনয়, শরীরী আবেদন কিংবা ‘কোনো নায়কের সাথে ভালো মানাচ্ছে’- এই হিসেবে বিবেচিত হন না। নারীনির্ভর চলচ্চিত্র কিংবা নারীর ক্ষমতায়নের প্রেক্ষাপটে বলিউডে এখন অনেক ছবিই হচ্ছে। এই পরিবর্তন আপনা-আপনি আসেনি, এর পেছনে বড় অবদান রয়েছে কয়েকজন অভিনেত্রীরই। একের পর এক ব্যতিক্রম এবং সাহসী চরিত্রে অসামান্য অভিনয় আর ব্যক্তিত্বের জোরে তাঁরা বলিউডি ছবিতে নারীদের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ ক্ষেত্র। কেবল সমালোচকের প্রশংসা নয়, বক্স অফিসেও তাঁরা পেয়েছেন দারুণ সাফল্য। বিদ্যা বালান, শাবানা আজমি, টাবু, কঙ্কনা সেন শর্মা, স্মিতা পাতিল- মুম্বাই সিনেমাপাড়ার প্রভাবশালী গণমাধ্যম ফিল্মফেয়ার অবলম্বনে এই অভিনেত্রীদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা।
বিদ্যা বালান
বিদ্যার কাজ সব সময়ই সবার থেকে আলাদা। ‘গুরু’র বিচিত্র মেয়েটি, বিরাট মতলব এঁটে বসে থাকা ‘ইশকিয়া’র বিধবা, ‘কাহানি’র দুর্দান্ত নারীটি কিংবা ‘দ্য ডার্টি পিকচার’-এর সিল্ক- বিদ্যা বালান সব সময়ই দেখিয়েছেন তাঁর অভিনয় ক্ষমতা ও নারী অবলা নয়, নারীর শক্তি যোগ করতে পারে ভিন্ন মাত্রা। মুম্বাইয়ে তো তাঁকে খানদের বিকল্প হিসেবেও বলা হয়ে থাকে মাঝেমধ্যে! বিদ্যার ছবির ব্যবসায়িক সাফল্যের কথা তো সবাই জানেন।
কঙ্কনা সেন শর্মা
‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আয়ার’ দিয়ে দারুণভাবে সবার নজরে আসেন কঙ্কনা। প্রথাবিরোধী ও ব্যতিক্রম ধর্মী ছবিতে অভিনয়, আর সেই সাথে ভিন্নধারার এবং চ্যালেঞ্জিং সব চরিত্রে অভিনয় করতে কঙ্কনা সব সময়ই সাবলিল। ‘১৫ পার্ক এভিনিউ’ এর স্কিৎজোফ্রেনিক চরিত্র, ‘পেজ ৩’-এর দুঃসাহসী সাংবাদিক মাধবী- এসব ব্যকিক্রমী চরিত্র ছাড়াও মূল ধারার ছবিতেও কঙ্কনা নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন বারবার। বিষয় একটাই- বৈচিত্র্য। মনে রাখার মতো অভিনয় করেছেন সব ধরনের চরিত্রেই।
শাবানা আজমি
৭০-এর দশকে ‘অংকুর’, ৮০ এর দশকে ‘অর্থ’ আর ‘স্পর্শ’, ৯০-এর সময়টায় ‘ফায়ার’ আর ‘গডমাদার’- শাবানা আজমির প্রতাপ আলাদা করে চোখে পড়ার মতো। বলিউডের বড় পর্দায় সব সময়ই শক্তিশালী নারী চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি দৃঢ়ভাবে- আর এটা তিনি করেছেন বিচিত্র আর বিতর্কিত সব চরিত্রে অভিনয় করে। এই যাত্রা কখনোই সহজ ছিল না, তবুও তিনি দমে যাননি কখনোই। বড়পর্দায় নারীর চরিত্রকে ক্ষমতাশালী করে তোলার কাজে শাবানা আজমিকে পথিকৃৎ বলা যায়। অজস্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন কাজের স্বীকৃতি হিসেবে। বিচিত্র সব চরিত্র এখনো অবলীলায় ফুটিয়ে তোলেন বড়পর্দায়, এখনো অক্লান্ত ভারতীয় ছবির এই অসামান্য অভিনেত্রী।
টাবু
কেবল হিন্দি ছবিতে নয়- অভিনয় করেছেন তামিল, তেলুগু, মালয়লাম, মারাঠি, বাংলা ও ইংরেজি ছবিতে। বড়পর্দায় নারী চরিত্রের শক্তিশালী উপস্থাপনার জন্য সব সময়ই প্রশংসিত হয়েছেন টাবু। গুরুত্ববহ বিষয়ের সব ছবিতে অভিনয় করেছেন, একইসাথে নারীর শক্তিশালী উপস্থাপনে যেকোনো চরিত্রকে আকড়ে ধরতে পিছপা হননি। ‘চাঁদনি বার’ ছবিতে পানশালার নর্তকী, আবার ‘চিনি কম’ এ ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তির প্রেমিকা! কদিন আগেও ‘হায়দার’ দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন নিজের ক্ষমতা। টাবুর জয়যাত্রা যেন থামবার নয়!
স্মিতা পাতিল
তিনি এমন এক সময়ে বলিউডে দাপটের সাথে নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন, যখন বলিউড পার করছে একচ্ছত্র পুরুষশাসন। নারীত্ব আর নারীবাদ- দুটোই স্মিতা পাতিল বড়পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন ব্যতিক্রমী সব চরিত্রে অসামান্য অভিনয়ের মাধ্যমে। আট বছরের ক্যারিয়ারে স্মিতা ছিলেন বলিউডের শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী। কাজ ও মেধার জন্য শ্রদ্ধাভরে তাঁকে স্মরণ করা হয় আজও। তাঁর ক্যারিয়ারে রয়েছে ‘অর্থ’, ‘মির্চ মাসালা’, ‘মন্থন’, ‘ভূমিকা’র মতো চমৎকার সব ছবি, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন মাত্র ২১ বছর বয়সে।