অস্কারে সেরা, ব্যর্থতাতেও ‘সেরা’!
অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র পরিচালক কিংবা গল্পকার, পৃথিবীজোড়া চলচ্চিত্র শিল্প সংশ্লিষ্ট সবার জন্য সবচেয়ে বড় স্বীকৃতির নাম ‘দ্য একাডেমি অ্যাওয়ার্ড’ সচরাচর যাকে আমরা ‘অস্কার’ হিসেবে জানি।
আগামীকাল সোমবার বাংলাদেশ সময় ভোরে হলিউডের ডলবি থিয়েটারে বসবে ৮৮তম অস্কারের আসর। সেরা কাজের জন্য স্বীকৃতি পাবেন হলিউডের অভিনেতা, অভিনেত্রী ও কলাকুশলীরা।
সাধারণত নিজ নিজ শাখায় শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ দেওয়া হয় অস্কার। সর্বজনবিদিত এই পুরস্কারের ঠিক বিপরীত আরেকটি পুরস্কারের নাম ‘গোল্ডেন রাস্পবেরি অ্যাওয়ার্ডস’ সংক্ষেপে যা ‘রেজি’বা জিআরএ নামে অধিক পরিচিত।
প্রতিবছর অস্কার এর ঠিক আগের রাতেই দেওয়া হয় এই পুরস্কার। আর অস্কারের মতোই এতে পুরস্কৃত করা হয় বছরের সবচেয়ে নিকৃষ্ট সিনেমা থেকে শুরু করে নিকৃষ্ট পরিচালক, সহ-অভিনেতা ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে।
পুরস্কার নামধারী এই তিরস্কারের প্রবর্তক আমেরিকান কপিরাইটার জন জে বি উইলসন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এমন অনেক বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রী আছেন যাঁদের অনেকেই একইসাথে পেয়েছেন অস্কার ও রাস্পবেরি পুরস্কার।
এমনকি কেউ কেউ দুটোই পেয়েছেন একই বছরে, যাঁদের অনেকে আবার সহাস্যে গ্রহণও করেছেন তা। তেমনি ১০ অভিনেতা-অভিনেত্রীকে নিয়েই থাকছে এই আয়োজন।
হ্যালি বেরি :
‘মনস্টার’স বল’- এ নিজের অভিনয় প্রতিভার জোরে একমাত্র ‘কালো’ অভিনেত্রী হিসেবে অস্কার ছিনিয়ে নিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী, গড়েছিলেন ইতিহাস। ২০০১ থেকে শুরু করে ২০০৪ পর্যন্ত টানা ধরেও রেখেছিলেন এই পুরস্কার জয়ের ধারা। কিন্তু বিপত্তি বাধল ২০০৪ সালে ‘ক্যাটওমেন’ সিনেমায় অভিনয় করেই, সর্বনিকৃষ্ট অভিনেত্রী হিসেবে নির্বাচিত হলেন রেজির জন্য। অবশ্য হাসিমুখেই এই ‘অসম্মান’ বরণ করে নিয়েছিলেন তিনি।
ব্র্যাড পিট :
সুদর্শন এই অভিনেতার ঝুলিতে বেশ কয়েকটি মনোনয়ন থাকলেও এখন পর্যন্ত আছে মাত্র একটি অস্কার, তাও আবার ‘টুয়েলভ ইয়ার্স অ্যা স্লেভ’ সিনেমার ‘প্রযোজক’ হিসেবে।মজার বিষয় হলো, অভিনয়ের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো অস্কার না পেলেও, বাজে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন ‘রেজি’।
১৯৯৪ সালে ব্র্যাড পিট এবং টম ক্রুজ অভিনীত ‘ইন্টারভিউ উইথ দ্য ভ্যাম্পায়ার’ সিনেমার জন্য ‘সর্বনিকৃষ্ট জুটি’ হিসেবে যৌথভাবে ‘রেজি’ পেয়েছিলেন এই যুগল।
সান্ড্রা বুলক :
একই বছরে সেরা আর নিকৃষ্ট হওয়ার বিরল অভিজ্ঞতা কজনেরই বা হয়! সৌভাগ্য হোক কিংবা দুর্ভাগ্য, সান্ড্রা বুলকের এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল ২০১০ সালে। এই বছরেই ‘ব্লাইন্ড সাইড’ সিনেমায় অভিনয় করে ‘সেরা অভিনেত্রী’ হিসেবে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পান এই অভিনেত্রী যার মাত্র একদিন আগেই ‘অল অ্যাবাউট স্টিভ’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য দুটি শাখায় ‘রেজি’ বিজয়ী হন তিনি, যা কি না আবার স্বশরীরে গিয়ে গ্রহণও করেছিলেন তিনি।
বেন অ্যাফ্লেক :
অভিনেতা হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত হলেও, বেন অ্যাফ্লেক দুবার অস্কার জিতেছেন ক্যামেরার পেছনে অবদান রাখার জন্য। প্রথমবার ২০১২ সালে ম্যাট ডেমনের সাথে ‘গুডউইল হান্টিং’ সিনেমার চিত্রনাট্যের জন্য আর দ্বিতীয়বার ‘আর্গো’ সিনেমার প্রযোজক হিসেবে।
কিন্তু অভিনয়ের জন্য বেন অ্যাফ্লেক পুরস্কারের চেয়ে তিরষ্কারই বেশি পেয়েছেন বোধহয়। ২০০৩ সালে ‘ডেয়ারডেভিল’, ‘গিগলি’ এবং ‘পে-চেক’ তিনটি সিনেমার জন্যই ‘রেজি’ মনোনয়ন পেলেও, ২০০৯ সালে এই যুগের সর্বনিকৃষ্ট অভিনেতা এবং ২০১৫ তে ‘আর্গো’ এবং ‘গন গার্ল’ ছবির জন্য ‘রেজি’ বিজয়ী হন এই অভিনেতা।
কেভিন কস্টনার :
ক্যারিয়ারের শুরুতেই ‘ড্যান্সেস উইথ উল্ভস’ সিনেমার জন্য সেরা পরিচালক আর সেরা অভিনেতা দুই ক্যাটাগরিতেই অস্কার জিতে প্রচুর সম্ভাবনা দেখিয়েছিলেন কেভিন কস্টনার। কিন্তু এর পরপরই ‘রবিনহুড : প্রিন্স অব থিভস’ আর ‘দ্য পোস্টম্যান’ সিনেমা দুটির বাজে পারফর্মেন্সের জন্য একই ক্যাটাগরিতে দুটি ‘রেজি’স’ পান এই পরিচালক-অভিনেতা।
নিকোল কিডম্যান :
ক্যারিয়ারজুড়ে অসংখ্য পুরস্কার আর প্রশংসা পেয়েই অভ্যস্ত এই অভিনেত্রী। ২০০২ সালে ‘দ্য আওয়ার্স’-এর জন্য অস্কারও পান ‘সেরা অভিনেত্রী’ ক্যাটাগরিতে। তাঁর লম্বা পুরস্কারের তালিকায় বেঢপভাবে যুক্ত হয়ে আছে একটি ‘রেজি’, তাও ২০০৫ সালে উইল ফেরেলের সাথে করা ‘বিউইচড’ ছবির জন্য।
আল পাচিনো :
আট বার একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের মনোনয়ন পাওয়া এই অভিনেতা কে না চেনার কোনো কারণ নেই! ‘সেন্ট অব অ্যা উইমেন’ এ অভিনয়ের জন্য পেয়েছিলেন ‘সেরা অভিনেতা’র অস্কার। সবই ঠিকঠাক ছিল, ক্যারিয়ারজুড়ে পেয়েছেন খ্যাতি আর সম্মান। কিন্তু বিপত্তি বাঁধল যখন তিনি অ্যাডাম স্যান্ডলারের ‘জ্যাক অ্যান্ড জিল’ সিনেমায় অভিনয় করলেন। ব্যাপকহারে দুয়োধ্বনি পাওয়া সিনেমাটিতে অভিনয়ের খাতিরে পড়ে গেলেন ‘রেজি’ কমিটির নজরে। ফলাফল ‘সর্বনিকৃষ্ট সহ-অভিনেতা’র পুরস্কার।
মার্লোন ব্র্যান্ডো :
আমেরিকার সিনেমা ইতিহাসের অন্যতম পুরোধা এই ব্যক্তি তাঁর জীবনকালে অস্কার জিতেন মোট দুটি । একটি ‘অন দ্য ওয়াটারফ্রন্ট’ সিনেমার জন্য আরেকটি ‘দ্য গডফাদার’-এর জন্য (যদিও তিনি সেটা গ্রহণ করেননি)। অবিস্বরণীয় আর মেধাবী এই অভিনেতাকেও ছাড়েনি ‘রেজি’। ১৯৯৬ সালে ‘দ্য আইল্যান্ড অব ডক্টর মরো’ সিনেমায় ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয়ের কল্যাণে ‘সর্বনিকৃষ্ট সহ-অভিনেতা’র পদক জোটে এই ‘হলিউড লিজেন্ড’-এর কপালেও।
রবার্তো বেনিনি :
সিনেমার গল্প লেখা, পরিচালনা কিংবা অভিনয় সব কিছুতেই সমানভাবে পারদর্শী প্রখ্যাত এই ইতালিয়ান সিনেমা ব্যক্তিত্ব। দেখতে হালকা-পাতলা হলেও অর্জনের পাল্লাটা নিতান্তই হালকা নয়! ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ সিনেমার জন্য দুটি অস্কার ছাড়াও অন্যান্য অনেক পুরস্কার আছে তাঁর ঝুলিতে, আছে দুনিয়াজোড়া খ্যাতিও।
কিন্তু ২০০২ সালে তাঁর লাইভ অ্যাকশন সিনেমা ‘পিনোক্কিও’ মুক্তি পাওয়ার পর রেহাই পাননি তিনিও, পড়লেন ‘রেজি’র কুনজরে। ঘোষিত হলেন বছরের সবচেয়ে নিকৃষ্ট অভিনেতা ।
সোফিয়া কপোলা :
ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার কন্যা সোফিয়া ‘লস্ট ইন ট্রান্সলেশন’ সিনেমার জন্য ২০০৩ সালে ‘সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য’ বিভাগে জিতেছিলেন অস্কার। পিতার সুনাম আর প্রভাবের সুবাদে ‘দ্য গডফাদার’ এর তৃতীয় কিস্তিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন এই অভিনেত্রী আর ঝামেলাটা বাধান সেখানেই। এই সিনেমায় বাজে অভিনয়ের জন্য দর্শকের দুয়ো তো পানই, সাথে পান সর্বনিকৃষ্ট সহ-অভিনেত্রী হিসেবে ‘রেজি’।