বিরাট খারাপ করলেই সব আমার দোষ : আনুশকা
ভারতের ক্রিকেট খেলোয়াড়দের সব সময়েই একটা দুশ্চিন্তা মাথায় রাখতে হয়। জিতলে হাততালি যতই জুটুক, হারলে কিন্তু খবর আছে! তবে সব সময়েই দেখা গেছে, তাদের চেয়ে অনেক বেশি ঝামেলা পোহাতে হয় তাঁদের স্ত্রী বা আত্মীয়স্বজনদের। এবারের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতের। এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বিরাট কোহলি মাত্র এক রানে আউট হয়ে যান, তার পর থেকেই বিরাটের প্রেমিকা আনুশকার ওপরে চড়াও ভারতের ক্রিকেট-সমর্থকরা। ফেসবুক, টুইটার থেকে শুরু করে রাজপথে পোস্টার পোড়ানো কিংবা আক্রমণাত্মক কথা-সব কিছুরই লক্ষ্য আনুশকা! এ নিয়ে প্রথমে চুপচাপ থাকলেও খানিক বাদে ফিল্মফেয়ারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুখ খুলেছেন আনুশকা শর্মা।
প্রশ্ন : সব সময় নজরদারির ওপর থাকার ব্যাপারটা কি আপনাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে চাপ হয়ে যাচ্ছে না?
উত্তর : পিঠ আর কোমরে ব্যথার জন্য আমি কোকিলাবেন হাসপাতালে একজন ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে গিয়েছিলাম। আমি হাসপাতালে ঢোকার সময়েই কেউ একজন আমার ছবি তুলে নেয়। তারপর তারা এটাকে এ রকম বানিয়েছে যে আমি এই অস্ট্রেলিয়া গিয়ে এই ব্যথাটা বানিয়েছি! এর মানে কি রে ভাই? আমার কোমর ব্যথার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া ট্যুরের সম্পর্ক কোথায়? মানুষজন আসলে ঘোরের মধ্যে আছে আর একই জিনিস তারা বারবার টানছে। আমার এই ব্যথা হয়েছে ‘এনএইচ১০’ ছবির শুটিংয়ের সময় থেকে। এটা যদি কোনো অভিনেতার ক্ষেত্রে ঘটত তাহলে তারা এমন করত না। তারা অভিনেত্রীদের গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে একদম নারাজ। তাদের ইচ্ছাটা এ রকম যে আমরা ব্যক্তিগত জীবনে যা যা করি, তার সবটাই আমার তাদেরকে বলতে হবে, কারণ ওটাই বুঝি আমাদের যাচাই করার একমাত্র আকর্ষণীয় বিষয়! কিন্তু ব্যাপারটা তো মোটেও তা নয়, আর এ জন্যই এসব নিয়ে আমি কিছুই বলিনি। কারণ আমরা আমাদের কাজ খুব গুরুত্ব দিয়ে মাপি। আর আপনি যদি আমার কাজটাকে গুরুত্বপূর্ণ নাই মনে করেন, তাহলে আমি কেন আপনার প্রশ্নের উত্তর দেব? আমি তো আমার সম্পর্কের কথা গোপন করিনি! আমরা ব্যাপারটাকে সহজভাবেই প্রকাশ করেছি। আমি ওকে (বিরাট কোহলি) দেখতে যাচ্ছি, এ তো সবাই জানত। আমি তো কাউকে ছবি তুলতে নিষেধ করছি না, কিংবা কাউকে ক্যামেরায় ক্লিক করতেও বাধা দিচ্ছি না। ওর সাথে আমার দেখা-সাক্ষাতের বিষয় নিয়েও তো কোনো লুকোছাপা করছি না। আর সবার মতোই আমরা একটা সম্পর্কে জড়িয়েছি।
প্রশ্ন : সে (বিরাট কোহলি) যখন উড়ন্ত চুম্বন ছুড়ে দিল, সেটাও বিশাল খবর হয়েছে...
উত্তর : হ্যাঁ, কী আর বলব...
প্রশ্ন : ‘তারকা’ পরিচয়টা কি বিরক্তিকর হয়ে ওঠে না, যখন এ ধরনের ঘটনায় আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতো আপনি প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে পারেন না?
উত্তর : না। আমার কাছে বিষয়টা বিব্রতকর। আমার ভাই এ নিয়ে এখনো আমার সাথে মজা করে। আমার খুব লজ্জা লেগেছিল। পুরো স্টেডিয়ামসুদ্ধ লোক ঘুরে আমাকে দেখছিল। আমি একদমই অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলাম।
প্রশ্ন : এটার প্রভাব কি দুজনের ক্ষেত্রেই পড়েছিল?
উত্তর : না। আমরা দুজনেই এসব গ্রাহ্য করি না। কাজের বাইরের কিছু হলে এটা কোনো সমস্যা নয়। এটা আপনার সম্পর্কে কোনো বাজে প্রভাব ফেলবে না। বিরাট আর আমি দুজনেই শক্ত মানসিকতার। তবে এ ধরনের বিষয় কাজের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। বিরাট নিজের কাজে সব সময়েই মনোযোগী। এই সম্পর্কের ভার গণমাধ্যমে টানতে যাওয়া তো ঝামেলার ব্যাপার! ভালো রান করলে আমার কৃতিত্ব, আবার বিরাট খারাপ করলেই সব দোষ আমার! সমস্ত দায় আমার ওপরে এসে পড়ে। এর কিছুই আমার মাথায় ঢোকে না। কিন্তু এসবের কিছুই আমাদের সম্পর্কে প্রভাব ফেলে না।
ইংল্যান্ড ট্যুরের সময়ে আমি এ রকম পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলাম। সেটা আমাদের সম্পর্কের খাতিরে নয়, শুধুই বিরাটের জন্য। যা হয়েছিল সেটা একদমই অনুচিত। আমরা এটার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। ওর জন্য ব্যাপারটা ছিল আরো কঠিন। কারণ ও একজন খেলোয়াড়, সে জেতার জন্যই খেলে। এসব ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়া আমাদেরই বোকামি ছিল। পরে ব্যাপারটা যে ভুল ছিল তা বুঝেছি। এসব বাজে বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার কোনো দরকারই ছিল না। ওই ঘটনার পর থেকে এসবে আমাদের আর কিছুই যায়-আসে না। যদি আপনার ছবি হিট হয়, দেশের জন্য আপনি যদি ভালো রান করতে পারেন-ইটস ওকে! সবচেয়ে ভালো হলো নিজে চুপচাপ থাকা। তাহলে আপনার কাজই আপনার হয়ে কথা বলবে।