বড় পর্দায় ছোটদের ছবি
“আমি প্রতিবন্ধী নই”- এটাই ছিল খোকার উত্তর যখন পাবলিক বাসে তাঁকে প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত আসনে বসতে বলা হয়।
খোকা একজন বেটে। খর্বাকৃতির মানুষের গল্প নিয়ে কলকাতার নির্মাতা কৌশিক গাঙ্গুলি বানিয়েছেন, ছোটদের ছবি। বড়দের পৃথিবীতে এই ছোট মানুষগুলো কী পরিমাণ যন্ত্রণা এবং অবহেলা নিয়ে বেঁচে থাকেন তা ভীষণ মমতায় পর্দায় দেখিয়েছেন কৌশিক।
ছবিটিতে খোকার চরিত্রে অভিনয় করেছে দুলাল সরকার। সে সার্কাসে ভাঁড়ের কাজ করে। তার সাথে কাজ করে শিবু। একদিন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে শয্যাশায়ী হয় শিবু। খোকার আর শিবুর সংগ্রামটা একই। তাই শিবুর দুর্দিনে তার পরিবারের দায়িত্ব নেয় খোকা।
শিবুর মেয়ে সোমাও সেই ছোটদেরই একজন। ছবিতে বেটে মানুষদের আত্মসম্মানবোধ এবং মানুষের করুণা আর কৌতুককে পাশ কাটিয়ে বেঁচে থাকার যে যুদ্ধ সেই তীব্রতাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
টিকে থাকা নাকি বেঁচে থাকা? প্রতিবাদ নাকি আপস? বাস্তবতা নাকি ভালোবাসা? পৃথিবীতে চলার জন্য এ রকম অনেক কিছু থেকে নির্দিষ্ট কিছুকে বেছে নিতে হয় তাদের।
কৌশিক দেখিয়েছেন সার্কাসে যারা আমাদের হাসায় বাস্তবে তারা নিজেরা কতটা কষ্টের জীবন যাপন করে। পায়ে পায়ে কত বাস্তবতা নিয়ত পেরিয়ে যায় তারা। স্বাভাবিকভাবে সমাজের অংশ হতে কতটা অস্বাভাবিকতার মুখোমুখি হতে হয় তাদের।
খোকা এবং সোমার চরিত্রের মাধ্যমে সেই গৎবাঁধা করুণা কিংবা সহমর্মিতার সহজ দৃশ্য দেখাননি কৌশিক। তিনি দেখিয়েছেন যুদ্ধের সেই ময়দানটা যেটাতে প্রতিদিন নামতে হয় তাদের। মুখোমুখি হতে হয় নিজের এবং অন্যদের।
এখানে খোকা, শিবু, সোমারা ঠিক ‘ভিক্টিম’ নয় বরং ‘যোদ্ধা’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ছবির কুশীলবরা কেউই পেশাদার অভিনয় শিল্পী নন। জীবনের গল্প বলতে জীবন থেকেই অভিনেতা অভিনেত্রীদের নিয়েছেন পরিচালক।
তবে বেটেদের দেখে বাচ্চাদের মুখ বাকানো, কিংবা ভিড়ে বাকিদের অবাক চোখে সবাক হাসি- এ ধরনের কিছু অভিব্যক্তি ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। অবশ্য তাতে চলচ্চিত্রের স্বাভাবিক চলন ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
হিরাল সাচদে থাক্কার : চলচ্চিত্র সমালোচক। ভারতের ইনডিপেনডেন্ট ছবি এবং এর নির্মাতাদের মুখপত্র ডিয়ার সিনেমাডটকম নামের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া হয়েছে সমালোচনাটি। ভাষান্তর করেছেন ফাহিম ইবনে সারওয়ার।