মোশাররফ ভাইয়ের নাম শুনেই রাজি হয়ে যাই : মধুমিতা
কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন মধুমিতা চক্রবর্তী। ভারতীয় চ্যানেল স্টার জলসার জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘বোঝে না সে বোঝে না’তে ‘পাখি’ চরিত্রে অভিনয় করে তিনি দ্রুত তারকাখ্যাতি পান। শুধু কলকাতায় নয়, বাংলাদেশেও রয়েছে তাঁর জনপ্রিয়তা। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের একটি টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন মধুমিতা। পারভেজ আমিন পরিচালিত টেলিফিল্মটির নাম ‘মেঘবালিকা’। আসছে ঈদে টেলিফিল্মটি এনটিভিতে প্রচারিত হবে। ‘মেঘবালিকা’ টেলিফিল্ম, ব্যক্তিগত জীবন ও অন্যান্য নানা প্রসঙ্গ নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপ করেছেন মধুমিতা।
এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশের টেলিফিল্মে কাজ করার প্রস্তাব কীভাবে পান।
মধুমিতা : কলকাতায় অমিত নামে আমার এক দাদা কাজটি করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের জন্য একটি টেলিফিল্ম নির্মিত হবে। সহশিল্পী হিসেবে কাজ করবেন মোশাররফ করিম। তুমি কাজটা করবে কি না? মোশাররফ ভাইয়ের নামটা শুনে আমি প্রথমেই বুঝেছিলাম কাজটা ভালো হবে। তাই প্রস্তাবটা আর ফিরিয়ে দিইনি। রাজি হয়ে যাই। এ ছাড়া তখন আমি শুটিংয়ের বিরতিতেও ছিলাম। তাই কাজটি করতে কোনো অসুবিধা হয়নি।
এনটিভি অনলাইন : সহশিল্পী হিসেবে মোশাররফ করিমকে কেমন লেগেছে আপনার? তাঁর অভিনীত নাটক কিংবা সিনেমা আপনি কি দেখেছেন?
মধুমিতা : মোশাররফ ভাইকে খুবই ভালো লেগেছে। তিনি খুব ভদ্র ও ভালো মানুষ। অভিনেতা হিসেবেও অসাধারণ। আমার সহশিল্পী হিসেবে তিনি অনেক হেল্পফুল ছিলেন। আমি পুরো টেলিফিল্মে অভিনয় করার সময় তাঁর অনেক সাপোর্ট পেয়েছি। আর সহশিল্পীর সহযোগিতা না পেলে কোনো কাজই তেমন ভালো হয় না। আর সত্যি বলতে মোশাররফ ভাইয়ের প্রচুর নাটক আমি দেখেছি। তাঁর সব কাজই দারুণ। তাঁর মতো একজন শিল্পীর সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি অনেক খুশি।
এনটিভি অনলাইন : একসময় কলকাতায় বাংলাদেশের নাটক খুব জনপ্রিয় ছিল। এখন কী অবস্থা।
মধুমিতা : সবার কথা জানি না। তবে আমি কিন্তু বাংলাদেশের নাটক অনেক দেখি। আমার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনরাও সবাই দেখেন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর কাজ তো অনেক ভালো লাগে। আর শুধু নাটক নয়, বাংলাদেশের শিল্পীদের গানও আমি অনেক শুনি। তাহসানের গান ভীষণ পছন্দ করি আমি। অর্ণবের গানও ভালো লাগে। কখনো তাঁদের সঙ্গে দেখা হলে আমি আমার ভালোলাগার কথাটি অবশ্যই জানাব। কারণ তাঁদের গানের বড় ভক্ত আমি।
এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশে আসার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
মধুমিতা : খুব ইচ্ছা রয়েছে। আমার হাজবেন্ড সৌরভকে নিয়ে পুরো বাংলাদেশ ঘুরতে চাই আমি। কক্সবাজার ও সুন্দরবনে যাওয়ার জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশে আপনার কি কোনো আত্মীয়স্বজন রয়েছেন?
মধুমিতা : আমার শ্বশুড়বাড়ির সবাই বাংলাদেশের ফরিদপুরের লোক ছিলেন। যদিও এখন কেউ আর ওখানে থাকেন না। তবে খুঁজে দেখলে কোনো আত্মীয়স্বজন তো বের হবেই। বাংলাদেশে এলে ফরিদপুরে যাওয়ার চেষ্টা করব। এ ছাড়া আমার দিদার বাড়িও বাংলাদেশে।
এনটিভি অনলাইন : ‘বোঝে না সে বোঝে না’ সিরিয়ালটি বন্ধ হওয়ার পর দর্শকদের প্রতিক্রিয়া কেমন পাচ্ছেন? এখন তো নতুন সিরিয়াল ‘কুসুম দোলা’-তে অভিনয় করছেন। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
মধুমিতা : খুব মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। ‘বোঝে না সে বোঝে না’ সিরিয়ালের পাখি চরিত্রটি থেকে বেরিয়ে আসা আমার জন্য সত্যি খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি খুব চিন্তিত ছিলাম। আসলে টেলিভিশন নাটকে আমরা যখন যে চরিত্রে অভিনয় করি, তখন দর্শকরা সেই চরিত্রেই ডুবে থাকেন অথবা সিরিয়াসলি নেন। সবকিছু মানুষের অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। এখন তো ‘কুসুম দোলা’র প্রচার শুরু হয়েছে। তারপরও টিভি সেটের সামনে বসে অনেকেই বলছেন, ‘পাখির নতুন সিরিয়াল শুরু হয়েছে।’ এমন খবর আমি পেয়েছি। মানে হলো, এখনো অনেকেই আমাকে ‘পাখি’ই ভাবছেন।
এনটিভি অনলাইন : ‘পাখি’ নামে আপনাকে কেউ সম্বোধন করলে কেমন লাগে?
মধুমিতা : এটা আমার দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্য বলতে পারেন। অনেকেই ‘পাখি’ নামে এখন আমায় ডাকছেন। তবে এটা দূর থেকেই ডাকছেন। মানে হলো, দর্শক ও ভক্তরাই আমাকে ‘পাখি’ নামে বেশি ডাকছেন। বিষয়টা মজার। তবে আমার আশপাশের সবাই আমার ডাক নাম ‘মামন’ অথবা ‘মধুমিতা’ বলেই ডাকেন।
এনটিভি অনলাইন : ‘পাখি’ নামের পোশাক কিনতে না পেয়ে আপনার বাংলাদেশের একজন মেয়েভক্ত আত্মহত্যা করেছিলেন। এ খবর কি আপনি জানেন?
মধুমিতা : হ্যাঁ, আমি সংবাদপত্রে খবরটা পড়েছি। এটা খুব দুঃখজনক। খুব বিস্মিতও হয়েছি আমি। দর্শকদের আমি অনুরোধ করব, তাঁরা যেন এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকেন। বিনোদনকে বিনোদনের মতো করেই নিতে হবে। জীবনের বড় অংশ কখনো বিনোদন হতে পারে না। আমাদের কাছে সিরিয়ালে অভিনয় করা শুধুমাত্র কাজ কিংবা দর্শকদের বিনোদন দেওয়া। নিজের ব্যক্তিগত জীবনে সিরিয়ালের চরিত্রের প্রভাব আসতেই পারে। তবে সেটা সিরিয়াসলি নিয়ে আত্মহত্যা করার কোনো মানে হয় না। এটা অবশ্যই ভালো নয়।
এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আপনার কাজ করার আগ্রহ রয়েছে কি?
মধুমিতা : আমি এরই মধ্যে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে কাজ করার প্রস্তাব পেয়েছি। চলচ্চিত্র অনেক বড় মাধ্যম। এটা যদি বাংলাদেশ থেকে শুরু হয়, তাহলে মন্দ হবে না। এখন দেখা যাক কী হয়। বাংলাদেশেই হোক কিংবা ভারতেই হোক, আমি ভালো কাজ করতে পারলে সবাই ভালোই বলবেন।
এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশের কয়েকটি অনলাইন পত্রিকা আপনার ব্যাপারে মিথ্যা খবর প্রকাশ করেছিল। এ বিষয়ে আপনি অভিযোগও করেছেন। অভিযোগের ফলাফল কী পেয়েছেন।
মধুমিতা : আমি তো খবরগুলোর প্রকাশের পর, সেগুলোর স্ক্রিন শট নিয়েই কলকাতার পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলাম। যেহেতু এটা বাংলাদেশের ওয়েব পোর্টাল ছিল তাই এখন আমাকে বাংলাদেশের হাইকমিশনে গিয়ে আইনের মাধ্যমে অভিযোগ করতে হবে। পুরো বিষয়টার জন্য তাই বেশ সময় লাগবে। তবে একটা কথা আমি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই তা হলো, কোনো দেশের প্রতি আমার বিদ্বেষ নেই। আমার নামে মিথ্যা খবর ভারতে কিংবা আমেরিকার কোনো পত্রিকাও যদি প্রকাশ করত, আমি অভিযোগ তুলতাম। বাংলাদেশের ওয়েবপোর্টাল মিথ্যা খবর ছেপেছে, সে জন্যই যে আমি বাংলাদেশকে দায়ী করব, বিষয়টা তেমন নয়। এই দোষের ভার ওয়েবপোর্টালের ব্যক্তিরাই শুধু নেবেন। আমি বাংলাদেশের প্রতি অভিযোগ করিনি। আমাকে কেউ ভুল না বুঝলেই খুশি হব। এই ধরনের মিথ্যা খবর পড়ে আমি মানসিকভাবে খুব আঘাত পেয়েছি। সহ্য করার ক্ষমতা ছিল না। খুব বিব্রত এবং বিরক্তও হয়েছিলাম। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর নিয়ে রীতিমতো ঝড় উঠেছিল।