‘দেবী’ চুরি
ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা চাইব : শেখর
দুই বাংলার জনপ্রিয় সাহিত্যিক, নাট্যকার এবং চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের সুপারন্যাচারাল থ্রিলার ‘দেবী’ উপন্যাসের কাহিনী চুরি করে নির্মিত হয়েছে একটি ভারতীয় ছবি—এমনটাই অভিযোগ করেছেন মেহের আফরোজ শাওন। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক শেখর দাস ‘ইএসপি—একটি রহস্য গল্প’ নামে এই ছবি বানিয়েছেন। শাওনের অভিযোগ, স্রেফ নাম আর ধর্মের বিষয়টি বদলানো বাদে ছবির ৯৫ শতাংশ কাহিনীই আগাগোড়া নকল করা ‘দেবী’ থেকে। এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন শাওন। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে একটি সাক্ষাৎকার দেন নির্মাতা শেখর দাস। নিচে সেটিই অনুবাদ করে দেওয়া হলো :
প্রশ্ন : আপনার চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ এনেছেন মেহের আফরোজ শাওন…
শেখর : আমি স্তম্ভিত। তাবত ক্যারিয়ারে এ রকম কিছুই আমি করিনি। ‘নয়নচাপার রাত্রি’ ছাড়া আমার সবকটি ছবিই কোনো না কোনো সাহিত্যকর্ম থেকে তৈরি। আমি সবগুলোর স্বত্বও নিয়েছি। আমি শুধু শুধু আমার অভ্যাস বদলে ফেলব কেন? শিবাশীষ রায়ের কাছ থেকে আমি এই গল্পের স্বত্ব কিনেছি। কপিরাইট-সংক্রান্ত সব ধরনের আইনি বিষয়ই তখন সঠিকভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রশ্ন : তবে শাওন তো এ বিষয়ে একমত নন। তিনি বলেছেন যে নাম আর ধর্মের বিষয়টি ছাড়া ছবির সবকিছুই আগাগোড়া নকল করা, এমনকি সংলাপও!
শেখর : বললাম তো, আমি বিষয়টা বিশ্বাসই করতে পারছি না। আমি একেবারেই নড়বড়ে হয়ে পড়েছি এই অভিযোগ শুনে। শিবাশীষ ভারতের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থী। সে প্রায়ই স্ক্রিপ্ট নিয়ে আমার কাছে আসত । এটা ছিল সেই স্ক্রিপ্টগুলোরই একটা, যা থেকে আমি ছবিটা বানিয়েছি।
প্রশ্ন : আপনি তাঁকে সম্মানী দিয়েছেন।
শেখর : হ্যাঁ, দিয়েছি। ২০০০ সালে সে এফটিআইআই থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে। প্যারাসাইকোলজি আর মেটাফিজিকস নিয়ে সে খুবই আগ্রহী ছিল। সে বন্ধুদের সঙ্গে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করত। তার কথা হচ্ছে যে এসব আলোচনার মধ্য দিয়েই এই স্ত্রিপ্টের আইডিয়া পেয়েছিল সে। আমি তাকে ঠিক কত টাকা দিয়েছিলাম, তা আমার মনে নেই। ১০ থেকে ২০ হাজার রুপির মতো হবে, যদ্দুর মনে পড়ে।
প্রশ্ন : হুমায়ূন আহমেদের কোনো লেখা আপনি পড়েছেন?
শেখর : না, তাঁর কোনো লেখা আমার পড়া হয়নি। ১৭ বছর আগে অবশ্য নন্দনে একটা কর্মশালায় তাঁর সঙ্গে আমি অংশ নিয়েছি। তবে আমি মোটেও বলতে পারব না যে আমার তাঁর সঙ্গে খুব ভালো পরিচয় ছিল। স্বত্বটা নিয়ে নেওয়ার পর আমি গল্পটা নিবন্ধনও করিয়েছিলাম। এ অভিযোগ শুনে আমি যারপরনাই স্তম্ভিত। আমি শিবাশীষকেই এই ছবির গল্পের লেখক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি, কারণ এই নকলের বিষয়টি নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না। আমি কোনোদিনই কোনো গল্প চুরি করে কাজ করিনি। শিবাশীষের গল্পটা আমি নিয়েছি এবং সেখানে বেশ কিছু পরিবর্তন করেছি। আমি যদি জানতাম যে এই গল্পটা হুমায়ূন আহমেদের, তাহলে তো আমি তাঁর সঙ্গে সরাসরিই আলাপ করতাম। আমার হয়তো আরো অনেক টাকা দিতে হতো। কিন্তু তাঁর নাম যদি এই ছবির সঙ্গে যুক্ত হতো, তাহলে সেটা ছবির বিপণন এবং প্রচারের দিকটাও অনেক এগিয়ে দিত।
প্রশ্ন : বিষয়টি কি কাকতালীয় হতে পারে?
শেখর : আমি জানি না। আমি আমার লেখককে বিশ্বাস করেছিলাম। আমি এখন নিজে ‘দেবী’ পড়ব এবং যাচাই করে সে অনুযায়ী অবস্থান নেব। ভুল হয়ে থাকলে আমি ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত। আমি একজন দরিদ্র চলচ্চিত্র নির্মাতা, আমার কোনো জমানো টাকাও নেই। যদি কোনো অভিযোগ আসে, সেটা আসবে লেখকের ওপর। তাঁর নিজেকে রক্ষা করতে হবে। পরিচালক হিসেবে কোনো ত্রুটির জায়গা থাকলে আমি সব সময়ই ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত। আমি কখনোই চাই না যে যাঁরা হুমায়ূন আহমেদকে ভালোবাসেন, তাঁরা কোনোভাবেই আমার ছবির কারণে মনঃক্ষুণ্ণ হন।