শাকিব খানের মতো নায়ক এশিয়াতে নেই : পেলে ভট্টাচার্য্য
চিত্রনাট্যকার হিসেবে পেলে ভট্টাচার্য্য দুই বাংলার মানুষের কাছে বেশ পরিচিত। লিখেছেন যৌথ প্রযোজনার কয়েকটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য। যদিও তিনি রিমেক চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার হিসেবে অধিক পরিচিত। তবে মৌলিক গল্পের প্রতি রয়েছে তাঁর অগাধ ভালোবাসা। সে কারণে নিজেই নির্মাণ করেছেন মৌলিক গল্পের চলচ্চিত্র। কলকাতার চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা, যৌথ প্রযোজনাসহ নিজের ক্যারিয়ারের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে।
প্রশ্ন : চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালক, কোন পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
উত্তর : পরিচালনা মানে হলো ম্যানেজমেন্ট। আর্ট ডিরেক্টর যে দেয়ালটা বানিয়েছে সেটা ঠিক হলো কি না, প্রোডাকশন ম্যানেজার ঠিকঠাক টাকা খরচ করছে কি না, ক্যামেরাম্যান ঠিকঠাক ক্যামেরা বসাচ্ছে কি না—এসব ম্যানেজমেন্ট করাই পরিচালনা। আমার কাছে মনে হয়, পরিচালনা বলে কিছু হয় না। আসলে স্ক্রিপ্ট এক্সিকিউটর হলো একজন ভালো পরিচালক। আজ পর্যন্ত যাঁরা ভালো পরিচালক, তাঁরা অসম্ভব ভালো স্টোরি টেলার। স্টোরিকে ঠিকঠাক বলেছেন। এ জন্য তাঁরা ভালো ডিরেক্টর। এটা যেকোনো ছবির বেলায় সত্যি। সেটা হতে পারে সাদামাটা কিংবা ইন্টেলেকচুয়াল ছবি। সুতরাং আমি যেহেতু চিত্রনাট্যে ঠিকঠাক গল্পটা বলতে চাইছি, সেহেতু সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে আমি একজন পরিচালক।
প্রশ্ন : আপনাকে রিমেক চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখতে বেশি দেখা যায় কেন?
উত্তর : এ মুহূর্তে যাঁরা বাংলা সিনেমা প্রযোজনা করছেন, তাঁরা নিরাপদে থাকতে চান। আমি যখন কোনো মৌলিক গল্প প্রযোজককে শোনাতে গিয়েছি, তখন তাঁরা প্রথম কিছুদূর গল্পটা শোনার পর বাজেট এবং সময়ের কথা চিন্তা করে পিছিয়ে যান। তাঁরা কম সময় এবং কম বাজেটে শুটিং করে লগ্নিকৃত টাকা ফেরত আনতে চান। যে কারণে ভারতের অন্য ভাষার সিনেমা বাংলায় রিমেক করা হয়। তাই আমার কিছু করার নেই। আমি একজন রাইটার এবং সিনেমার কর্মচারী। আমি সারা জীবন নিজেকে সিনেমার কর্মী বলি। আমি সিনেমা মেকার আজ পর্যন্ত হয়ে উঠতে পারিনি। প্রযোজক আমার কাছে রিমেক চিত্রনাট্য চাইছেন বিধায় আমি লিখছি।
প্রশ্ন : টালিগঞ্জে কয়েক বছর ধরে রিমেক ছবির জোয়ার বইছে। এই রিমেক ছবি নির্মাণ টালিগঞ্জ চলচ্চিত্রের জন্য কতটা ইতিবাচক বা নেতিবাচক বলে মনে করেন?
উত্তর : রিমেক ছবি টালিগঞ্জে বন্ধ হয়ে যাবে। আজকে আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি যে, ২০১৮ সাল নাগাদ রিমেক ছবি টালিগঞ্জে বন্ধ হয়ে যাবে। অলরেডি এ মুহূর্তে নতুন গল্পে ছবি করার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এখন মিক্সড ছবি মানে এখান থেকে, ওখান থেকে ছবির কাহিনী নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করা হচ্ছে। ওটা প্রপারলি রিমেক নয়। আগামীতে আমরা বাংলাদেশের কিং খান শাকিব ভাইকে নিয়ে যে ছবিটি করার কথা ভাবছি, এস কে মুভিজ থেকে যেখানে শুভশ্রী হিরোইন, সেটা কিন্তু রিমেক নয়। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আমরা ছবিটি করছি। ভারত ও বাংলাদেশের এ সময়ে টেররিজমের মুখোমুখি হওয়ার গল্প নিয়ে ছবিটি নির্মিত হবে। বাংলাদেশের আইনের সঙ্গে ভারতের আইন কীভাবে যুক্ত হচ্ছে, এমন ধরনের গল্প। মানে রাজনৈতিক একটি গল্প। আমরা কিন্তু অলরেডি রিমেক থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি। আমাদের বেরিয়ে যেতেই হবে। কারণ, দর্শক এখন রিমেক ছবি দেখতে চাইছেন না।
প্রশ্ন : রিমেক থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দুই বছর কম সময় হয়ে গেল না?
উত্তর : দুই বছরের কম সময় হলেও পারতে হবেই। মানুষ তো রিমেক ছবি দেখছেই না। কলকাতার মানুষ তো মোটেও দেখে না। রিমেক ছবি চলে মূলত গ্রামবাংলায়। প্রযোজকরা বুঝতে পারছেন বিষয়টা। আমরা লেখকরা যেমন শিল্প বুঝি, প্রযোজকরা তেমন ব্যবসা বোঝেন। সুতরাং বাধ্য হয়ে তাঁরা রিমেক ছবি থেকে বেরিয়ে আসবেন। তা ছাড়া কোনো উপায় নেই তো।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ থেকে যতটা জানতে পারি যে, কলকাতায় আর্ট ফিল্ম ইদানীং বেশ ভালো ব্যবসা করছে। আদৌ কি তাই?
উত্তর : হ্যাঁ, ব্যবসা করছে। কিন্তু ব্যাপারটা অনেকটা ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ শিল্পের মতো। বিষয়টা পরিষ্কার করে বলি। সমগ্র পশ্চিম বাংলায় যদি ২৫০টি সিনেমা হল থাকে, তাহলে ৫০টি হল কলকাতায়। বাকি হলগুলো কলকাতার বাইরে। আর্ট ফিল্ম বা সাবজেকটিভ সিনেমা এমন একটি বাজেট খরচ করে তৈরি করা হচ্ছে, যাতে কলকাতার ওই ৫০টি সিনেমা হলে রিলিজ দিয়ে টাকা উঠিয়ে আনা যায়। কারণ, এই সাবজেকটিভ ফিল্ম গ্রামবাংলার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় না। ফলে তাদের টার্গেট থাকে কলকাতার সিনেমা হলগুলোর দিকে। কলকাতার মানুষের কাছে আবার এই ফিল্মের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সিনেমাগুলোর বাজেট কিন্তু খুব বেশি নয়। এক কোটি টাকা দিয়ে সিনেমা বানিয়ে দুই কোটি টাকা তুলছে। এভাবে ক্ষুদ্রভাবে ব্যবসা করছে ছবিগুলো।
প্রশ্ন : আপনার কাছে কোন ধরনের চলচ্চিত্র পছন্দ—আর্ট নাকি কমার্শিয়াল?
উত্তর : আমি নিজে কমার্শিয়াল ফিল্মের চিত্রনাট্য লিখলেও আমার পছন্দের হলো আর্ট ফিল্ম বা সাবজেকটিভ ফিল্ম।
প্রশ্ন : সে কারণেই কি প্রথম ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে সাবজেকটিভ চলচ্চিত্র বেছে নিলেন?
উত্তর : সে রকমই বলতে পারেন। আমার প্রথম নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ওটাই লাস্ট এমএমএস’ একটি সাবজেক্টটিভ ফিল্ম। এটা শুধু কলকাতায় রিলিজ করে যতটুকু যা বিজনেস করেছে। পরে সিনেমা বানালেও এ ধরনের বানাব।
প্রশ্ন : কমার্শিয়াল চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহ তাহলে নেই?
উত্তর : আমি যেহেতেু লেখাটাকে পছন্দ করি, সেহেতু কমার্শিয়াল ছবির চিত্রনাট্য লিখব। আর কমার্শিয়াল ছবি বানানোর ক্যাপাবেলিটি আমার এখনো হয়ে ওঠেনি। এ ছাড়া সাবজেকটিভ ছবিতে বাজেট কম লাগে। তাই কলকাতা বা শহরতলিতে রিলিজ দিলে লগ্নিকৃত টাকাটা উঠে আসে।
প্রশ্ন : চিত্রনাট্যকার থেকে হঠাৎ পরিচালনায় আসার কারণ কী?
উত্তর : প্রত্যেক চিত্রনাট্যকার একজন পরিচালক। চিত্রনাট্যকার যখন ছবিটা লেখেন, তখন সবার আগে তাঁর কাছে ছবিটা তৈরি হয়। দক্ষিণ ভারতের রাজা মৌলি, পুরি জগন্নাথসহ অনেকে আছেন, যাঁরা বেসিক্যালি রাইটার। সেইসঙ্গে তাঁরা কিন্তু আবার বড় ডিরেক্টর। আজকে বাংলাদেশের ফারুকীর কথা যদি বলি, উনি আমার অন্যতম একজন পছন্দের পরিচালক। আমার মনে হয়, সারা বিশ্বে ফারুকীর মতো ছবি কেউ বানাতে পারে না। উনিও একজন রাইটার। ভারতবর্ষের বুকে রাজকুমার হিরানি, পুরোনো দিনের যদি বলা হয় ঋষিকেশ মুখার্জি, পশ্চিম বাংলার সৃজিত মুখার্জি, অঞ্জন চৌধুরী—তাঁরা সবাই রাইটার। সারা পৃথিবীতে প্রমাণিত যে রাইটারাই সিনেমা ভালো বানায়।
প্রশ্ন : সে ক্ষেত্রে আপনি কতটা সফল?
উত্তর : একদম সফল নই।
প্রশ্ন : কারণ?
উত্তর : সিনেমার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় জিনিস হলো মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন। বড় হাউস না হলে সেটা হয় না। এটা বাংলাদেশের লোকেরাও জানে, ভারতবর্ষের লোকও জানে। তারকা শিল্পীদের নিয়ে কাজ না করলে সেভাবে প্রচার পায় না। সবখানে কিন্তু এমনটা হয়। বলিউডের কথা ধরুন, খুব ভালো একটি সিনেমা। তবে তাতে তারকা শিল্পী শাহরুখ, আমির খান কিংবা সালমান খান নেই। বড় প্রোডাকশনও নেই। তাহলে দেখবেন সেভাবে প্রচারণা পায় না। খুব সাধারণ একটি সিনেমা, যেটায় শাহরুখ, আমির কিংবা সালমান খান আছে; যশ চোপড়া প্রোডাকশন দিয়েছে, সেটা কিন্তু প্রচারণা পায়। ফলে হিট হয়। আমার ছবিতে তেমন কেউ ছিল না। এলাকার কিছু লোক টাকা জোগাড় করে দিয়েছিলেন। আমি একজন রাইটার। সেভাবে ডিরেক্টর হিসেবে নামকরা নই। হিরো হিসেবে ছিল রাহুল। সে দেব বা জিতের মতো বড় হিরো নয়। তবে যাঁরা ছবিটি দেখেছেন, তাঁরা ভালো বলেছেন। অনেকে জানিয়েছেন, এমন কাহিনীর ছবি ভারতবর্ষে কেউ বানায়নি। তারপরও বেশির ভাগ লোক দেখেনি ছবিটি। দেখবে কী করে? সেভাবে তো প্রচার পায়নি। আমি স্বপ্ন দেখি, আমার ছবি সবাই দেখছে। আমি স্বপ্নবাজ মানুষ। আগামীতে আমি যদি খুব ভালো কোনো ছবি নির্মাণ করতে পারি, তাহলে আমার বিশ্বাস দর্শক কৌতূহলবশত হয়ে আমার প্রথম ছবিটি দেখবে।
প্রশ্ন : আপনি তো এস কে মুভিজের ঘরের লোক। চাইলেই কি এস কে মুভিজের সাহায্য নিতে পারতেন না?
উত্তর : এস কে মুভিজের ঘরের লোক বলতে আমি যখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতাম, সিরিয়াল লিখতাম, তখন এস কে মুভিজের হিমাংশু ধানুকা প্রথমবার আমাকে চিনতে পেরে দুটো ছবির চিত্রনাট্য লিখতে বলেন। একটি হলো ‘খোকাবাবু’, অন্যটি ‘ইডিয়েট’। আমি যখন চিত্রনাট্য সফলভাবে করি, তখন আমার ওপর একটি ভরসা তৈরি হয়। এতটা ভরসা তৈরি হয় যে আমার ওপর রাগ হয়ে অন্য কাউকে দিয়ে চিত্রনাট্য লেখানোর পর সেটা পছন্দ হয় না। পরে আবার আমাকে দিয়েই লেখান। আর এতটা ভালোবাসেন এবং বিশ্বাস করেন যে, হিমাংশু ধানুকা ও অশোক ধানুকার রান্নাঘর অবধি আমার দৌড় আছে। কিন্তু সিনেমার বানানোর ক্ষেত্রে আমি কখনো এস কে মুভিজকে বলিনি। এস কে মুভিজও আমাকে বলেনি। একদিন কথায় কথায় উঠেছিল, আমার নির্মিত সিনেমা যদি ভালো হয়, তাহলে পুরো ছবির ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্ব এস কে মুভিজ নেবে।
আসলে যে ঢেলে দেয়, তার কাছে চাওয়াটা খুব কঠিন। এস কে মুভিজ আমার জীবনে অনেক কিছু। এস কে মুভিজ না থাকলে আমি থাকতাম না। আমি আমার ছবির জন্য এস কে মুভিজের কাছে চাইতে পারব না। বাইরেই ছবি করব। যেদিন এস কে মুভিজ নিজে আমায় বলবে, সেদিন ছবি করব। তা ছাড়া এস কে মুভিজ এখন সাবজেকটিভ ছবি করছে না।
প্রশ্ন : যৌথ প্রযোজনার ছবিতে চিত্রনাট্য করেছেন। অভিজ্ঞতার কথা বলুন।
উত্তর : যৌথ প্রযোজনা শব্দটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার বাংলাদেশের বন্ধুরা এবং কলকাতার অনেক বন্ধু যৌথ প্রযোজনাকে যৌথ প্রতারণা বলে অভিযোগ করেন। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, দুই বাংলার চলচ্চিত্রের বাজার ভালো নয়। এই বাজার ভালো করতে যৌথ প্রযোজনার বিকল্প নেই। ধরুন, একটি ভালো ছবি বানাতে তিন কোটি টাকা প্রয়োজন। এখন জাজ মাল্টিমিডিয়া যদি এই তিন কোটি টাকা খরচ করে ছবি বানায়, তাহলে সে কিন্তু টাকা উঠে আসার নিশ্চয়তা পাবে না। এস কে মুভিজেরও কিন্তু একই অনিশ্চয়তা। এবার যদি জাজ এবং এস কে মুভিজ একত্রে ছবি বানায়, তাহলে তাদের কিন্তু দেড় কোটি টাকা করে খরচ হবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, তিন কোটি টাকার ছবি জাজ দেড় কোটি টাকায় বানিয়ে ফেলল। এখন এই দেড় কোটি টাকার ছবি যখন বাংলাদেশ রিলিজ করবে, তখন ৫০ লাখ টাকা লাভ হলো। একইভাবে এস কে মুভিজের টাকা উঠে এলো। একজন প্রযোজকের কাছে টাকাটাই আসল। টাকা না এলে তো সিনেমাটাই বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন : সমানুপাতে অভিনয়শিল্পী না থাকার বিষয়ে কী বলবেন?
উত্তর : এটা ঠিক, অসম অভিনয়শিল্পীর একটা প্রভাব যৌথ প্রযোজনার ছবিতে দেখা যায়। তবে কিছু সিনেমায় কলকাতার শিল্পীদের কলাকুশলীদের বেশি দেখা যায়, আবার বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীদের বেশি দেখা যায়। ‘নিয়তি’, ‘অঙ্গার’, ‘রক্ত’ এসব ছবিতে বাংলাদেশি শিল্পীদের প্রাধান্য ছিল। যাঁরা যৌথ প্রযোজনার ছবি করেন, তাঁরা সারা বছরের হিসাব করেন; একটি ছবি নিয়ে হিসাব করেন না। দুই বাংলার দুটি প্রযোজনা সংস্থা সিদ্ধান্ত নিল, বছরে ১০টি ছবি করবে। এর মধ্যে পাঁচটি ছবি বাংলাদেশি ওরিয়েন্টেড হবে, পাঁচটা কলকাতা ওরিয়েন্টেড হবে। জাজ এবং এস কে তাই করছে।
বর্তমানে সিনেমার খারাপ অবস্থার ভেতর যৌথ প্রতারণা বলে বাজার নষ্ট করা ঠিক হবে না। খারাপ সময়টা একসঙ্গে পাড়ি দিতে হবে। তার পর ভালো সময় এলে যে যাঁর যাঁর মতো সিনেমা নিয়ে ভাববে। এমন দিন আসতে পারে, বাংলাদেশের দুই কোটি টাকার সিনেমা চার কোটি টাকা ব্যবসা করেছে। কলকাতার তিন কোটি টাকার ছবি ছয় কোটি টাকা ব্যবসা করেছে।
প্রশ্ন : তাহলে কি যৌথ প্রযোজনার ছবি ভালো ব্যবসা করছে?
উত্তর : অবশ্যই। ‘শিকারী’ তো বাংলাদেশে হিস্টোরি ক্রিয়েট করেছে শুনলাম। কলকাতায় তেমন চলেনি। তবে বর্ডার এলাকায় মানুষ দেখেছে। বারাসাত, বনগাঁওসহ গ্রাম এলাকায় বেশ চলেছে। ভালো ব্যবসা করেছে। আমার তো মনে হয়, ‘শিকারী’ যৌথ প্রযোজনার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। ‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’ কিন্তু যৌথ প্রযোজনার আরো একটি বড় উদাহরণ। যৌথ প্রযোজনা বাংলাদেশ এবং কলকাতার সিনেমাকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
প্রশ্ন : কলকাতায় কেন চলেনি?
উত্তর : একদম প্রোপার কলকাতায় দেব, জিতের ছবিও চলে না। এখানে খুব সাবজেকটিভ ছবি চলে। একদম কমার্শিয়াল ছবির বাজারটা সেভাবে নেই। তবে হিন্দি ছবিটা বেশি চলে। এ ছাড়া কৌশিক গাঙ্গুলী, সৃজিত মুখার্জি প্রমুখ অফবিট নির্মাতার ছবির চাহিদা রয়েছে। আসলে কলকাতার বাইরেই সিনেমার প্রকৃত ব্যবসাটা হয়।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের জনপ্রিয় চিত্রনাট্যকার আবদুল্লাহ জহির বাবুর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছেন। তাঁর বিষয়ে মূল্যায়ন করতে বললে কী বলবেন?
উত্তর : বাংলাদেশের একজন সবচেয়ে বড় রাইটারের সঙ্গে কাজ করতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। অসাধারণ একজন মানুষ তিনি। আমি তাঁর কাছ থেকে ইসলাম সম্পর্কে জেনেছি। আমি ইসলাম সম্পর্কে জানতাম না। তিনি কি সুন্দর ইসলাম নিয়ে আমাকে বুঝিয়েছেন! ইসলাম মানে শান্তি। এটা তিনি আমাকে সুন্দর করে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
প্রশ্ন : শাকিব খান সম্পর্কে কিছু বলুন।
উত্তর : পুরো এশিয়াতে শাকিব খানের মতো এত সুন্দর দেখতে আর কোনো হিরো নেই। আমাদের সালমান খান, শাহরুখ খান, আমির খানের থেকে বেটার দেখতে একজন মানুষ। চোখের কি চাহনি! আর অভিনয় তো দারুণ করেন।
প্রশ্ন : শাকিব খান, দেব, জিৎ, অঙ্কুশদের ভেতর কাকে এগিয়ে রাখবেন?
উত্তর : আমার কাছে শাকিব খান। কারণ, অ্যাকশন হিরো হিসেবে জিৎ খুব ভালো। মেয়েদের কাছে রোমান্টিক হিরো হিসেবে দেব খুব ভালো। অঙ্কুশ কমেডিটা ভীষণ ভালো করেন। আর শাকিব খানকে দিয়ে অ্যাকশন, রোমান্টিক, কমেডি সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করানো সম্ভব। একজন চিত্রনাট্যকার হিসেবে আমার কাছে তাই মনে হয়।
প্রশ্ন : তার মানে শাকিব খান অলরাউন্ডার?
উত্তর : একদম তাই।
প্রশ্ন : শাকিব খানকে কিছু বলতে চান?
উত্তর : আমি শাকিব খানের একজন ভক্ত বলতে পারেন। ভক্ত হিসেবেই বলছি, ‘শিকারী’ ছবিতে তিনি খুব ডিসিপ্লিন ছিলেন। কিন্তু আমি শুনেছি বাংলাদেশে তিনি সেটা আর থাকেন না। বাংলাদেশে গেলে তাঁর গালে চর্বি জমে যায়। ভক্ত হিসেবে আমার অনুরোধ, প্লিজ শাকিব ভাই, আপনি নিজেকে মেইনটেইন করুন। আমি আবারও বলছি, আপনার মতো হিরো এশিয়াতে নেই।
প্রশ্ন : হিরো নাকি অভিনেতা? কোনটায় শাকিব খানকে এগিয়ে রাখবেন?
উত্তর : হিরো হিসেবে শাকিব খান সবার চেয়ে এগিয়ে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ-ভারত চলচ্চিত্র বিনিময়ের বিষয়ে আপনার মতামত কী?
উত্তর : বিনিময় পদ্ধতিকে আমি মেনে নিচ্ছি না। এতে সমভাবে বিনিময়টা হবে না। একে অপরকে ঠকিয়ে দেওয়ার প্রবণতা এখানে বেশি।