কেন হতাশায় ভুগছিলেন বিটিএস সদস্য জিমিন?
সম্প্রতি বিটিএস ব্যান্ডের ১০ বছর পূর্তি হয়েছে। সেই উপলক্ষ্যে ৯ জুলাই ‘বিয়ন্ড দ্য স্টোরি: টেন ইয়ার রেকর্ড অফ বিটিএস’ নামে একটি বই প্রকাশ হয়েছে। বইটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন অ্যান্টন হুর, স্লিন জুং এবং ক্লেয়ার রিচার্ডস। বিটিএস সদস্য জিমিন কিছু ব্যাক্তিগত সংগ্রামের অভিজ্ঞতা এই বইতে শেয়ার করেছেন। মূলত তিনি তার ব্যতিক্রমী নাচের পারফরম্যান্সের জন্য পরিচিত।এই বইতে তিনি উল্লেখ করেছেন, “আমি হঠাৎ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমরা গায়ক, সেলিব্রিটি হয়ে যা হারিয়েছি তা অনুভব করতে শুরু করেছিলাম"।
জিমিন গায়ক এবং গীতিকার হিসেবে বিটিএসের অনেক গানে অবদান রেখেছেন। তিনি তার অনন্য কণ্ঠদক্ষতার জন্য স্বীকৃত। তবে সবাই তার মানসিক লড়াই সম্পর্কে জানেন না। তিনিও বাকি বিটিএস সদস্যদের মত, তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিবাচক বার্তা, নিজের প্রতি ভালবাসা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্পর্কে অনেক বার্তা পোস্ট করে থাকেন। যেখানে তিনি তার নিজের জীবনের সংগ্রাম সম্পর্কেও সবাইকে জানিয়ে থাকেন। ভক্তদের মানসিক সুস্থতার যত্ন নিতে তিনি সব সময় উৎসাহিত করেছেন।
বিটিএসদের জন্য ২০১৮ সাল ছিল একটি যুগান্তকারী বছরের অভিজ্ঞতা । কারণ এই বছর "ফেক লাভ" গানের মাধ্যমে তারা প্রথম মার্কিন শীর্ষ ১০ হিট গানের তালিকায় তাদের নাম লিখিয়েছিলেন। এরপরও তারা তীব্রভাবে ক্ষতির অনুভূতি অনুভব করেছিলেন। এ ব্যাপারে এই বইতে অনেক কথা লেখা আছে। ব্যান্ডের সদস্য সুগা অনিদ্রায় ভুগছিলেন। জাংকুক তার মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে লড়াই করেছিলেন। তাদের জনপ্রিয়তা নিয়ে তারা খুব বিব্রত ছিলেন। এ সময় জিমিন নিজেকে প্রশ্ন করেছিলেন, “এটি এমন ছিল যে, গায়ক বা সেলিব্রিটি হওয়ায় আমরা যে জিনিসগুলো হারিয়েছি তা আমরা অনুভব করতে শুরু করেছিলাম। আমি প্রায়শই ভাবতাম, 'এটাই কি সুখ?'
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, জিমিন ২০১৮ সালের শুরুর দিকে মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে তার গভীর ব্যক্তিগত সংগ্রামের কথা প্রকাশ করেছিলেন। এ সময় তিনি তার পেশার কারণে শারীরিক ও মানসিক ভাবে লড়াই করেছিলেন। তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। এক রুমে তালাবদ্ধ হয়ে থাকতে থাকতে এক ধরণের মানসিক অবসাদ দেখা দিয়েছিল। জিমিন জানিয়েছেন, "আমি জানি না কেন আমি এমন ছিলাম। কিন্তু এটি এমন একটি সময় ছিল যখন আমি হঠাৎ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম"।
একজন বিটিএস ভক্ত সম্প্রতি টুইটারে বইটির একটি অংশ শেয়ার করেছেন। যেখানে লিখা ছিল একদিন জাংকুক, জিমিনের সাথে কেঁদেছিলেন। এ সময় জাংকুক তার নিজের সংগ্রামের সাথে লড়াই করার কথা শেয়ার করছিলেন। তার মতে, “আমি জুংকুকের সম্পর্কে কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলাম। সে মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙ্গে গিয়েছিল। তার কোন খোঁজ পাচ্ছিলাম না। পরে জানতে পারলাম জাংকুক একা মদ্যপান করছিল। এই খবর কানে আসার পর আমি সাথে সাথে তার কাছে ছুটে গেলাম। জাংকুক এ সময় আমার সাথে তার সংগ্রামের কথা শেয়ার করেছিলেন। যে ব্যাপারে আমার কোনো ধারণাই ছিল না”।
জুংকুক বইটিতে এই ঘটনা সম্পর্কে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "একবার আমি একা মদ্যপান করতে গিয়েছিলাম। এ সময় আমি খুব হতাশ বোধ করছিলাম। কিন্তু সেই সময় আমি আমার ফোনের ক্যামেরাটি আমার সামনে স্থাপন করেছিলাম। নিজের সাথে এমনভাবে কথা বলেছিলাম যেন আমি সামাজিক মাধ্যমে লাইভ করছি। এ সময় হঠাৎ করেই হাজির হলেন জিমিন। ও আসার পর আমি বেশ মর্মাহত হয়েছিলাম। নিজের চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি'।
বিটিএসের সদস্যরা সব সময় তাদের নিজস্ব সংগ্রাম সম্পর্কে খোলাখুলি ভাবে কথা বলেছেন। স্ব-যত্নের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে। সবার সহায়তা চেয়েছেন। একে অপরকে সমর্থন করেছেন। আজকের এই প্ল্যাটফর্ম পেতে তাদের বেশ শ্রম দিতে হয়েছে। কারোর অতীতই মসৃণ ছিল না। সবাই নিজের চেষ্টায় ও যোগ্যতায় আজ এই স্থান পেয়েছেন।
সূত্র- হিন্দুস্তান টাইমস