একটি টিভি চ্যানেলকে ইঙ্গিত করে তদন্তের দাবি জানালেন ন্যান্সি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে তাদের বিভিন্ন দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে চলচ্চিত্র এবং নাটকের বিভিন্ন স্তরের শিল্পীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পোস্ট করেন। এবার সরকার পতনের পর এই মুখ খোলার নাম লেখালেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। দেশের একমাত্র সংগীতভিত্তিক টিভি চ্যানেল গানবাংলার কর্ণধার কৌশিক হোসেন তাপস ও তার স্ত্রী ফারজানা মুন্নীকে ইঙ্গিত করে কথা বলেছেন ন্যান্সি।
গত মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে গান বাংলা চ্যানেলকে কটাক্ষ করে ‘প্রাণ বাংলা’ বলে সম্বোধন করে ক্ষোভ প্রকাশ করার পাশাপাশি টিভি চ্যানেলের মালিকানা ও পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তন দাবি করেছেন তিনি।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে ন্যান্সি লিখেছেন, ‘এই দেশে প্রাণ বাংলা নামে একটি গানের চ্যানেল ছিল। চ্যানেলটিতে সাদা পোশাক পরা স্বয়ং তানসেন ছিল। তানসেনের একজন বৌ ছিল। চ্যানেলটির গৃহপালিত অনেক শিল্পী ছিল। বৌটি সেসব শিল্পীর প্রিয় ভাবি ছিল। চ্যানেলটিতে এত বেশি শিল্পচর্চা হতো যে, সেখানে রাতভর সংগীত বিষয়ে গবেষণা হতো, সেটা আবার জাতি সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে লাইভে দেখতে এবং শুনতে পেতো।’
একইসঙ্গে কৌশিক হোসেন তাপসের ব্যান্ড ‘তাপস অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’কে কটাক্ষ করে ন্যান্সি লেখেন, ‘তানসেন অ্যান্ড ফ্রেন্ডস বছরজুড়ে হেলিকপ্টারে চড়ে বাংলার আনাচে কানাচে জয়বাংলা কনসার্ট করে দর্শক মাতিয়ে রাখায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তানসেনের খালি কণ্ঠে গাওয়া ‘দে তালি বাঙালি’ গানে ‘পালায় না’ বলেও ভারতে পালিয়ে যাওয়া নেত্রী হাসিমুখে হাততালি দিয়েছেন। নেত্রীর অনুসারীগণ বিভিন্ন উপলক্ষে প্রায়শই কালো রং করা চ্যানেলটিতে গিয়ে নিজেদের জং ধরা কণ্ঠ ঝালাই দিতেন এবং বাহবা কুড়াতেন।’
চ্যানেলটির রিমেক গানের আয়োজন উইন্ড অব চেঞ্জ-এর প্রশংসা করে ন্যান্সি আরও লিখেছেন, ‘বিদেশ থেকে একঝাঁক যন্ত্রশিল্পী এনে দেশীয় শিল্পীদের মেলবন্ধনে ‘দিনবদলের হাওয়া’ নামে একটি নিয়মিত অনুষ্ঠান তানসেন এবং তানসেন পরিবারের ভাবী জাতিকে উপহার দিয়েছে। নতুন আঙ্গিকে পুরাতন গানগুলোর পরিবেশনা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু প্রতি গানে অযাচিত তানসেনের উপস্থিতি দর্শকমনে প্রচণ্ড বিরক্তির উদ্রেগ করেছে। তানসেন এবং তার স্ত্রী চ্যানেলের নিয়মিত অনুষ্ঠানের বাইরেও পারিবারিক জমকালো অনুষ্ঠান করতে গিয়ে এত অর্থের জোগান কোথা থেকে পান, আমাদের অবুঝ মনে সেইসব সবুজ প্রশ্ন প্রায়শই জেগে ওঠে।’
সম্প্রতি বেশ কিছু টিভি চ্যানেলে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। কিছু চ্যানেল বন্ধ করার দাবি উঠেছে। সেসবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ন্যান্সি লেখেন, ‘এখন কিছু টিভি চ্যানেল বন্ধের জোর দাবি উঠছে। বিগত সময়ে আমি বা আমরা বিতর্কিত কিছু চ্যানেলের আধিপত্যর শিকার হয়েছি। তবুও আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো টিভি চ্যানেল বন্ধের পক্ষে না। বরং প্রশ্নবিদ্ধ চ্যানেলগুলোর মালিকানা এবং পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হোক। কেননা বিগত সরকারের সময়ে অনেক চ্যানেলে মালিকপক্ষ মালিকানা হস্তান্তর, এমনকি অনেকে জোরপূর্বক নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। শোনা যায় ‘প্রাণ বাংলা’ নামের বাংলাদেশের একমাত্র গানের চ্যানেলটি প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে দখল করে নেওয়া হয়। এ বিষয়ে তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করি। চ্যানেলগুলো হতে হবে সরকারের চাটুকারিতা এবং রাজনীতির বলয় মুক্ত।’
তাপসের চ্যানেলের বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন মনে করে জানিয়ে ন্যান্সি লেখেন, ‘শোনা যায় ‘প্রাণ বাংলা’ নামের বাংলাদেশের একমাত্র গানের চ্যানেলটি প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে দখল করে নেওয়া। এ বিষয়ে তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করি। চ্যানেলগুলো হতে হবে সরকারের চাটুকারিতা এবং রাজনীতির বলয় মুক্ত।’
সবশেষ ন্যান্সি বলেছেন, বিটিভির জন্য যারা কেঁদে আকুল হয়েছিলেন তারা আগামী কিছুদিন অন্তত বিটিভি দেখুন। এমন দেশ কি আদৌ চেয়েছিলাম না জপে বিটিভির প্রচার মান এতো স্বল্প সময়ে এতো উন্নত হলো কি করে ; এই কথা জাপুন।