কী খেলে উত্তেজনা কমে সুনিদ্রা আসবে?
সুস্থ জীবনের জন্য স্বাস্থ্যকর ঘুম প্রয়োজন। মানসিক দুশ্চিন্তা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, কাজের সময়ের ঠিক না থাকা এবং এ ধরনের বিভিন্ন সমস্যার কারণে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। আজ আমরা একজন পুষ্টিবিদের কাছ থেকে জানব প্রাকৃতিকভাবে ঘুমের সমস্যার সমাধান সম্পর্কে।
এনটিভির নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের একটি পর্বে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন পুষ্টিবিদ সাজেদা কাশেম জ্যোতি। তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা যে কর্মব্যস্ত জীবন নিয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি, তাতে আমাদের ঘুমের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। ঘুমের সঙ্গে আমাদের খাবারের সম্পর্ক রয়েছে। গবেষকেরা বলেন, প্রতিদিন ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘুম শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। আমরা অনেকেই মনে করি, ঘুম মানেই অলসতা। কিন্তু ঘুম হচ্ছে শারীরিক বিশ্রাম। প্রতিদিন আপনি যে কর্মব্যস্ত জীবন যাপন করে যাচ্ছেন, শরীরের বিশ্রামের জন্য ঘুম অত্যাবশ্যক।
পুষ্টিবিদ সাজেদা কাশেম জ্যোতি বলেন, ঘুমের রুটিন ঠিক রাখতে প্রয়োজন কিছু প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসরণ করা। আর প্রাকৃতিক নিয়মের কথা বললে প্রথমেই চলে আসে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের কথা। আমাদের প্রথমেই জানতে হবে কেন ঘুম হচ্ছে না, তার পরেই আমরা জানব কী খেলে আমাদের ঘুম আসবে। আমরা এখন ফাস্টফুড বা প্রসেসড ফুডের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছি, যা আমাদের শরীরে উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। এ ছাড়া আমরা প্রচুর চিনিজাতীয় খাবার খাচ্ছি, এই অতিরিক্ত চিনি শরীরে উত্তেজনার সৃষ্টি করে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। অনেকে রাতে খাবারের পরে বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে মিষ্টি খেয়ে থাকেন। অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অনেকে সারা দিন অনেক বেশি চা-কফি খেয়ে থাকেন। কফিতে বিদ্যমান ক্যাফেইন আমাদের মস্তিষ্কে উত্তেজনা তৈরি করে, যদিও কফি শরীরকে রিলাক্স করে, কিন্তু ঘুমের জন্য এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর।
এ পুষ্টিবিদ বলেন, বেশ কিছু খাবার আছে, যা ভালো ঘুমে সাহায্য করবে। প্রথমেই বলি মিষ্টি আলুর কথা। মিষ্টি আলুতে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস শরীরে রিলাক্সেশন তৈরি করে। বিশেষ করে মাসল এবং ব্রেইন রিলাক্সেশনের ক্ষেত্রে মিষ্টি আলু অত্যন্ত উপকারী। যাঁদের ঘুমানোর আগে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস আছে, তাঁরা এর পরিবর্তে মধু খেতে পারেন। মধুতে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম, সেটা শরীরকে রিলাক্স করে এবং ঘুম আসতে সাহায্য করে। এরপর বলছি কলার কথা। কলায় রয়েছে পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। এ ছাড়া রয়েছে ট্রিপটোফ্যান, যা শরীরের মেলাটোনিন ও সিরাটোনিন তৈরিতে সাহায্য করে। মেলাটোনিন ও সিরাটোনিন হচ্ছে ঘুমের চক্রকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার উপাদান। তাই মেলাটোনিন ও সিরাটোনিনের চক্র ঠিক রাখতে প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি কলা খেতে পারেন।
পুষ্টিবিদ সাজেদা কাশেম জ্যোতির পরামর্শ, প্রতিদিনের খাবারে সালাদ হিসেবে লেটুস পাতা ও বাদাম রাখতে পারেন। বাদাম শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বাদামে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান শরীরে মেলাটোনিন সিক্রেশনে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাবারে বাদাম, আখরোট, কলা অথবা মধু, এ ধরনের খাবার কোনো এক বেলা যদি অন্তর্ভুক্ত করেন, সে ক্ষেত্রে আপনার ঘুমের চক্র ঠিক থাকবে। এ ছাড়া দুধ ও ডিম অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং ঘুমের জন্য কার্যকর উপাদান। বিশেষ করে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ শরীরকে সতেজ করে এবং মাসল রিলাক্স করে।