কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির সহজ উপায়
কোষ্ঠকাঠিন্যের কথা আজকাল প্রায়ই শোনা যায়। সপ্তাহে তিন বার বা তার কম যদি মলত্যাগ হয়, তবে তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে। আজ আমরা একজন পুষ্টিবিদের কাছে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে খাবারের ভূমিকা সম্পর্কে জানব।
এনটিভির নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রতিদিনের একটি পর্বে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে খাবারের ভূমিকা সম্পর্কে বলেছেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পুষ্টিবিদ আছিয়া পারভীন শম্পা।
পুষ্টিবিদ আছিয়া পারভীন শম্পা বলেন, সাধারণত মল যদি দেহ থেকে ঠিকমতো নিষ্কাশন না হয়, তাহলে জিভের উপর আস্তরণ, পেটব্যথা বা পেটফাঁপা প্রভৃতি সমস্যা হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য কিন্তু কখনওই এক দিনে হয় না। বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। যদি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার না থাকে, তবে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
আছিয়া পারভীন শম্পা বলেন, সাধারণত আমাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের শুরুটা হয়। প্রতিদিন নিয়ম করে না খাওয়া, নিয়ম করে বাথরুমে না যাওয়া, আঁশ সমৃদ্ধ খাবার না খাওয়া প্রভৃতি কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে আরও নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে, তাঁদের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, মানে শাকসবজি ও ফলমূল রাখতে হবে। শাকসবজি ও ফলমূলের ফাইবার ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে ভালো রাখে। এ ছাড়া যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা অতিরিক্ত ফ্যাটি ফুড এড়িয়ে চলবেন।
এ পুষ্টিবিদ যুক্ত করেন, যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা নিয়মিত ফিজিক্যালি অ্যাকটিভ থাকবেন। কেননা অ্যাকটিভিটি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে, তাঁরা প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। কখনও খুব বেশি সময় পেট খালি রাখা যাবে না। সারা দিনে তিন বার না খেয়ে পাঁচ বার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এমন খাবার খাবেন, যেগুলো সহজে ডাইজেস্ট হয়। বিশেষ করে ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত ফ্রাইড যে কোনও ফুড খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। পরিমাণে কম খাওয়াও কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য দায়ী। অনেকে ক্রাশ ডায়েটিংয়ের জন্য একেবারে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেন। বিশেষ করে সুষম খাবার থাকে না, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার থাকে না, এ কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাই যাঁরা ডায়েট করছেন, তাঁরা সুষম খাবারের মাধ্যমে ওজন কমানোর চেষ্টা করবেন। ওজন কমাতে গিয়ে খাবার বাদ দেওয়ার কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
পুষ্টিবিদ আছিয়া পারভীন শম্পার পরামর্শ, চেষ্টা করবেন, প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠা থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে চলতে। কখনওই পায়খানা বেশি সময় আটকে রাখা যাবে না। নির্দিষ্ট সময়ে বাথরুমে যেতে হবে এবং যে কোনও ধরনের ফ্যাটি ফুড পরিহার করতে হবে। সুতরাং যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে, তাঁরা সুস্থ থাকার জন্য পেঁপে খেতে পারেন। পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, এই ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তাই যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে, তাঁরা প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় রাখুন ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। বিশেষ করে যে ফল বা সবজিতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি, সেগুলো প্রতিদিন খাবেন। একজন মানুষের প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ গ্রাম ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হয়। এ ছাড়া যে কোনও ধরনের তৈলাক্ত খাবার পরিহার করুন। বিশেষ করে বেশি ভাজাপোড়া খাবার খাবেন না। নিয়মিত সুষম খাবার এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন। এ ছাড়া যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে, তাঁরা প্রতিদিন ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা ব্যায়াম করবেন। তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এনটিভি হেলথ ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং জানুন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ।