সেহরিতে আদর্শ খাবার
ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সবাই রোজার মাসের অপেক্ষায় থাকে। কারণ, এ সময় আমরা সবাই ইবাদত-বন্দেগির সুযোগ পাই। আমরা এ সময় ছোট থেকে বড়, সবাই এটিকে উৎসব-আমেজে পরিণত করি। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তারা যেমন রোজা থাকে, পরে দেখা যায় বাঙালি হিসেবে আমাদের খাদ্যেও এর একটি উৎসব পরিলক্ষিত হয়।
রোজার মাসে আমরা সবাই কমবেশি ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পানাহার করে থাকি। আর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একেবারে আমরা পানাহার থেকে বিরত থাকি। সেহরি দিয়ে আমরা রোজা শুরু করে থাকি। আমরা আমাদের ফজরের নামাজের আগে সেহরি গ্রহণ করে থাকি।
এনটিভির নিয়মিত এক স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে সেহরিতে কী ধরনের পুষ্টিকর খাবার থাকতে পারে, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ। তিনি বলেন, সেহরির পরিমাণটা হবে—আমরা সাধারণত যে দিনটা থাকে, সে সময়ের দুপুরের খাবারের যে পরিমাণটা থাকে, সে পরিমাণে সেহরি আমাদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ, দেখা যায় সেহরি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমরা কমবেশি সবাই, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেহেতু ঘুম থেকে উঠে সেহরি গ্রহণ করতে হয়, আমাদের একেবারেই খেতে ইচ্ছে করে না বা ক্ষুধামন্দা একটা ভাব আসে। যেহেতু ঘুমের মাঝখানে উঠে খেতে হয়। সে ক্ষেত্রে সেহরিতে যদি সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার এবং সুষম স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ না করেন, আপনার কিন্তু সারা দিন ঝিমুনি ভাব বা খিদে লাগছে, এমন অনুভূতি হবে। সে ক্ষেত্রে দেখা যাবে যে সারা দিন বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নিই, সেহরিতে আমাদের খাদ্য কেমন হওয়া উচিত, যাতে করে আমাদের খিদে লাগবে না, আমরা ভালো এবং সুস্থ থাকতে পারব এবং সারা দিন সিয়াম সাধনা করতে পারব।
পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদের পরামর্শ, সেহরি করার ক্ষেত্রে আমাদের সর্বপ্রথম যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে, সেহরিতে এমন খাবার থাকবে, যেটি দীর্ঘ সময় আমাদের পেটে থাকবে। এ জাতীয় খাবারের মধ্যে আমরা ফাইবার-সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। যেমন—লাল চাল, লাল আটার তৈরি রুটি হতে পারে বা লাল চালের ভাত হতে পারে। অথবা বিভিন্ন ধরনের আইটেমের মধ্যে আমরা লাল চাল, লাল আটা অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। এ ছাড়া আপনি যদি মনে করেন, ওটসও কিন্তু এখানে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, বা লাল চিড়া দিয়ে দুধের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সাথে কিছু বাদাম রাখলেন। দুটি খেজুর রাখলেন। সেটিও কিন্তু করতে পারেন। আর আপনি যদি খাদ্যতালিকায় লাল চালের ভাত রাখেন, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই কিন্তু ফাইবার সমৃদ্ধ বিভিন্ন শাকসবজি যেগুলো আছে, সেগুলো খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি রাখতে হবে মাছ, ডিম, ডাল; এ জাতীয় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। অর্থাৎ খাদ্যের ছয়টি উপাদানই যেন আপনার সেহরিতে—যে খাবার খাচ্ছেন, সেটির মধ্যে বর্তমান থাকে। না হলে দেখা যাবে যে আপনার যদি খুব সহজেই খাবার হজম হয়ে যায়, তাহলে অর্ধেক বেলা অতিবাহিত হওয়ার আগেই খিদে লেগে যাবে এবং বাকি দিনের অর্ধেকটা দুর্বলতার মধ্যে কাটবে। সেজন্য সেহরির খাবারটা অবশ্যই আদর্শ এবং ছয়টি উপাদানে সমৃদ্ধ হতে হবে। কারণ, আমরা মনে করে থাকি যে সেহরিতে যদি একেবারে অতিরিক্ত পানি পান করি, আমার কিন্তু সারা দিনের তৃষ্ণার অনুভূতি হবে না—এ ধারণা ভুল। কারণ, সেহরিতে একেবারে যদি আপনি পানি পান করেন, সেটি আপনার দীর্ঘ সময় যে শরীরে থাকবে, এ কথাটি সত্যি নয়। এ জন্য ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত অল্প অল্প করে পানি পান করবেন। সেহরিতে একবারে অতিরিক্ত পানি পান করা যাবে না। আর একটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে, বিভিন্ন সময় দেখা যায় যে ডায়াবেটিসের যে রোগীরা আছেন, তাঁরাও কিন্তু রোজা থাকেন। তাঁরা এ বিষয়টি মাথায় রাখবেন যে সেহরি কিন্তু একেবারে অনেক আগে করে ফেলবেন, সেটি ঠিক নয়। আজান দেওয়ার নির্দিষ্ট কিছু সময় আগে করবেন, যেন আপনার হাইপোগ্লাইসেমিয়া না হয়ে যায়। এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু দেখা যাচ্ছে যে এখন গ্রীষ্মের রোজা, এ জন্য কিন্তু ডিহাইড্রেশনের একটি টেন্ডেন্সি থাকে। এ জন্য আপনারা সেহরিতে এ বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন, যেন ডিহাইড্রেশন তৈরি না হয়ে যায়।
আর গরমের সময় দেখা যায়, অনেকের হিট স্ট্রোক হওয়ার টেন্ডেন্সি বেড়ে যায়। সেজন্য আমরা যদি এভাবে পরিমিত পরিমাণ খাবার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করি, আর স্বাস্থ্যসম্মত নিয়মকানুন মেনে চলি, তাহলে কিন্তু রোজার মাসে এ জাতীয় সমস্যা কারও হবে না। আর স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে আপনি সেহরি খাওয়ার মাধ্যমেও সুস্থ থাকতে পারেন এবং সারা দিনব্যাপী সুন্দরভাবে সুস্থ জীবনযাপন করে রোজা বা সিয়াম সাধনা করতে পারবেন। বিস্তারিত জানতে উপর্যুক্ত ভিডিওটি ক্লিক করুন।