হৃদরোগের ঝুঁকি আছে নারী ও শিশুদেরও
হৃদরোগের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৬৪৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. এম এ বাকী। বর্তমানে তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : জন্মগত হৃদরোগের মধ্যে প্রচলিত কোনগুলো? কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে কোনগুলো হয় এবং এর পরে কোনগুলো হয়?
উত্তর : আগে চিন্তা করা হতো শিশু, তরুণ এদের খুব একটা হৃদরোগ হওয়ার কথা নয়। তবে শিশুদের যদি শ্বাসকষ্ট হয়, শিশুর অভিভাবক যদি লক্ষ করেন, একটি শিশুর স্বাভাবিক যে আচরণ, দুধ খাওয়ার সময় তার যে মুখের মধ্যে যদি কষ্ট থাকে, তাহলে তাঁরা চিকিৎসকের কাছে আসেন। দেখা যায় অনেক শিশু কিন্তু জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে জন্ম নেয়। আসলে হৃদরোগ দুই রকম। একটি হলো, মায়ের পেট থেকে কিছু হার্টের সমস্যা নিয়ে একটি শিশু পৃথিবীতে আসতে পারে। যেহেতু তার হার্টের গঠ্নের কিছু পরিবর্তন আছে, সেই কারণে তার কিছু জটিলতা হয়। তার শরীরে কিছু কষ্ট আসে। এটি শিশুদের হৃদরোগ, যাকে আমরা জন্মগত হৃদরোগ বলি।
আর জন্মের পর বিভিন্ন কারণেই হৃদরোগ হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে কারণগুলো হলো জন্মগত হৃদরোগ। কখনো কখনো শিশু জন্ম নেয় হৃদরোগ নিয়ে। মা-বাবা বোঝে না বা সঠিক চিকিৎসকের কাছে পর্যবেক্ষণের অভাবে ওরা সেটি নিয়ে থাকে। তরুণ বয়সে বুক ধড়ফড় নিয়ে, শ্বাসকষ্ট নিয়ে এরা কখনো চিকিৎসকের কাছে যায়। তখন ধরা পড়ে তার হার্টের ভেতরে জন্মগত হৃদরোগ। জন্মগত হৃদরোগ, তবে তরুণ বয়সে গিয়ে তার লক্ষণ প্রকাশ করে।
আর কিছু কিছু হৃদরোগ আছে, যেটি তরুণ বয়সেও হতে পারে। সেটা হলো গলাব্যথার কারণে রিউম্যাটিক হার্ট ডিজিস হয়। রিউমাটিক ফিবার বা বাতজ্বর থেকে ধীরে ধীরে হার্টের ভালভের অংশগুলোকে আমরা লিফলেট বলি, এগুলো ধীরে ধীরে আক্রান্ত হয়। কখনো কখনো ভালভের ডায়ামিটার ছোট হয়ে যায়, কখনো কখনো ঠিকমতো বন্ধ হয় না ইত্যাদি কারণে যে রোগগুলো হয়, এগুলোকে আমরা বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ বলি। সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছরে হৃদরোগ হয়। সুতরাং এই বয়সও কিন্তু হৃদরোগ থেকে মুক্ত নয়।
আগে সাধারণত বলা হয়, নারীদের হৃদরোগ কম হয়। তবে নারীদেরও হৃদরোগ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখন অনেক রোগী পাই গর্ভাবস্থার শেষের দিকে বা গর্ভাবস্থা হওয়ার পরে, এক ধরনের শ্বাসকষ্ট আসে। একে আমরা প্রি-পারটাম ডাইলেটেট কার্ডিওমায়োপ্যাথি বলি। অথবা পোস্ট পারটাম। প্রসবের পর হার্টের পাম ধীরে ধীরে কিন্তু কমে যায়। এটি মারাত্মক হৃদরোগ। শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসে। চিকিৎসক যদি সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করে, সাধারণত শ্বাসকষ্ট মনে করে বা ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা মনে করে বা সর্দিকাশিজনিত মনে করে, তাহলে এর পরিণতি খুবই মারাত্মক। তবে এ ক্ষেত্রে এক্স-রে ইসিজি ও ইকোকার্ডিওগ্রাম দিয়ে পরিপূর্ণভাবে একে নির্ণয় করা যায়।