সায়াটিকা কী?
সায়াটিকা কী, বিষয়টি নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিতে ভোগেন। আমাদের দেহের সবখানেই রয়েছে নার্ভ বা স্নায়ু। আমাদের পিঠের মাঝখানে যে লম্বা হাড়ের মতো রয়েছে, যাকে আমরা সাধারণত বলি কশেরুকা বা স্পাইন, এর মধ্যে লম্বা দড়ির মতো একটি অঙ্গ থাকে। একে স্পাইনাল কর্ড বলা হয়। এর দুইপাশ থেকে একটি করে নার্ভ বের হয়। এ নার্ভগুলো আমাদের দেহে বিস্তার লাভ করে। নার্ভগুলো বের হয় খুব সরু ছিদ্র দিয়ে। কোনো কারণে এ ছিদ্রগুলো আরো সংকুচিত হলে চাপ পড়ে নার্ভে। তখন উপসর্গ দেখা দেয়।
সাধারণত কোমরের স্পাইনাল নার্ভগুলো বেশি আক্রান্ত হয়। কোমরের নার্ভগুলোতে চাপ পড়লে দেখা দেয় সায়াটিকা। কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়। এ ব্যথা কোমর থেকে নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়ে, এমনকি পায়ের পাতায়ও ব্যথা অনুভূত হয়। পা একটু ভারী ভারী লাগে, বোধশক্তি কমে যায়।
বিভিন্ন কারণে এমনটি হতে পারে। কোমর ভাঁজ করে ভারী কিছু তুললে হঠাৎ করেই কোমরে তীব্র ব্যথা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া দুটি হাড়ের মাঝে যে নরম অংশ থাকে, যাকে বলা হয় ডিস্ক, সেটি পিছলে সামনে চলে এলে সায়াটিকার লক্ষণ দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে লক্ষণ ধীরে ধীরে দেখা দেয়। আবার মারাত্মক কিছু রোগে এমনটা হতে পারে। যেমন : ক্যানসার, হাড়ের যক্ষ্মা, স্পাইনাল কর্ডের টিউমার। তবে এগুলোর হার খুবই কম।
অনেকে রোগীর অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। সাধারণত বয়স কম হলে তেমন কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে না। তবে নিউরোলজিক্যাল কোনো লক্ষণ থাকলে কোমরের এমআরআই করার প্রয়োজন পড়ে। তাই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানো প্রয়োজন।
শতকরা ৯০ ভাগ রোগীরই খুব বেশি চিকিৎসার দরকার হয় না। ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করলে এবং বিছানায় শুয়ে না থেকে হাঁটাচলা, কাজকর্ম শুরু করলে সমস্যা দূর হয়। সাঁতার কাটলে ব্যথা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে থাকে।
তবে তাদের কিছু জিনিস মেনে চলতে হয়। যেমন : কোমর ভাঁজ করে কোনো জিনিস ওপরে তোলা যাবে না; কাঁধের একপাশে ভারী কিছু বহন করা যাবে না; বেশি ভারী জিনিস মাথায় বহন করা যাবে না।
কোমরের মাংসপেশি শক্ত করার জন্য কিছু ব্যায়াম করতে হবে। ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করবেন। সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বিভাগ চালু আছে। ফিজিক্যাল মেডিসিন ছাড়া অন্য কারো কাছে গেলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। এ জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন। অস্ত্রোপচার করতে হলে দেরি না করাই ভালো। কারণ, বেশি দিন ধরে নার্ভ চাপে থাকলে আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কমে যায়।
অনেকে টেলিভিশনের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে হাতুড়েদের কাছে যান। তাঁরা সঠিক চিকিৎসা না করে কালক্ষেপণ করেন। এতে রোগী সুস্থ হওয়ার হার কমে।
কোমরে ব্যথা একটু-আধটু হতেই পারে। ব্যথা হলেই কিন্তু সায়াটিকা নয়। সায়াটিকা বলতে হলে কোমরের ব্যথা হাঁটুর নিচে নামতে হবে। আপনার বয়স যদি চল্লিশের কম হয়, প্রস্রাব-মলত্যাগে সমস্যা না হয়, পায়ে অনুভূতি ঠিক থাকে, তবে এটা নিয়ে এত বেশি মাথা না ঘামালেই হয়। একটু ব্যথা মেনে নিন। আর ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের শেখানো ব্যায়াম করুন।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।