চিকুনগুনিয়া হলে কী করবেন
চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসা সাধারণত প্যারাসিটামল দিয়ে করা হয়। পাশাপাশি আরো কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৭৪৭তম পর্বে এ বলেছেন অধ্যাপক মো. আব্দুল জলিল চৌধুরী। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : আপনাদের কাছে এই রোগ নিয়ে এলে কী করেন?
উত্তর : প্রথমে মানুষ জ্বর নিয়ে আসে। মানুষ তো আর এসে বলে না আমার চিকুনগুনিয়া হয়েছে। তাই আমাদের কাজ হলো রোগটি বোঝা। খুঁজে বের করা। কারণ, এর অনেকটা কাছাকাছি লক্ষণের আরো কিছু জ্বর আছে।
প্রথম দুই- তিনদিনে কিন্তু ডেঙ্গু বোঝা মুশকিল হতে পারে। জ্বর, ব্যথা অনেকটা একই রকম। কিছু পার্থক্য আছে। এটি চিকিৎসকরা বুঝবেন। চিকুনগুনিয়ায় গিঁটে ব্যথা হয়। আর ডেঙ্গুতে কিন্তু কোমর বা পেশিতে বেশি ব্যথা হবে। আমাদের কাজ হলো এগুলো আলাদা করা।
আরো অনেক রোগ আছে। যেমন : লিউকেমিয়া মনে করেন। এতেও কিন্তু প্রথমে জ্বর নিয়ে আসতে পারে। গিঁটে ব্যথা নিয়ে আসতে পারে। তাহলে আমাকে সবদিক চিন্তা করতে হবে। এই ঋতুতে চিকুনগুনিয়া বেশি হয়, ডেঙ্গু বেশি হয়। এই ঋতুতে জ্বর নিয়ে এলে, আমরা প্রথমে আগে ডেঙ্গু চিন্তা করতাম, এখন চিকুনগুনিয়া চিন্তা করি। আমি ডাক্তার হিসেবে দুটোই চিন্তা করব। তবে টাইফয়েড কী চলে গেছে? না কিন্তু। সেটিও থাকতে পারে। ম্যালেরিয়া কী চলে গেছে? না। বাকিরোগগুলো ঠিকই আছে। তাই আমার কাজ হলো আসলেই রোগী কিসে ভুগছে সেটি বের করা।
আর যদি মনে করি চিকুনগুনিয়া হয়েছে। তাহলে এর চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমি বলব, রোগীকে বিশ্রামে থাকার জন্য। বিশ্রাম মানে হলো সে ঘরে থাকবে। কারণ, এখন বাইরের আবহাওয়া খারাপ। খুব বেশি গরম। সুতরাং বাইরে না ঘোরাঘুরি করা ভালো। ঠান্ডা পরিবেশে থাকবে। এসি থাকতে হবে, সেটি নয়। খোলামেলা পরিবেশে থাকবে। ফ্যান সহ্য হলে চালাবে। হালকা গরম পানি দিয়ে শরীর মুছতে হবে। ঘন ঘন মুছাতে পারে। তবে বেশিক্ষণ মাথায় পানি না দেওয়া ভালো। বেশিক্ষণ মাথায় পানি দিলে কাশি হতে পারে। জ্বর ভালো হয়ে যাবে। তবে কাশি থাকতে পারে। সেটি না করে গা মুছে দেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভালো ওষুধ হলো প্যারাসিটামল। রোগী বয়স্ক হলে, মোটামুটি ৬০ থেকে ৭০ কেজি ওজনের হলে, কমপক্ষে দুটো করে তিনবার বা চারবার প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে। তবে জ্বরের তীব্রতা অনুযায়ী। যদি ডেঙ্গু না হয়, ভল্টালিন জাতীয় সাপোজিটরি না দেওয়াই ভালো। প্যারাসিটামল সাপোজিটরি দেওয়া যেতে পারে। সাপোজিটরি দিলে জ্বর অনেক কমে যাবে। সাপোজিটরি দিলে হয় কি জ্বর অনেক কমে যাবে। তবে আবার যখন আসবে অনেকে কেঁপে আসবে। তখন কিন্তু রোগীর কষ্ট হতে পারে। সেই জন্য একদম জ্বর ভালো করার দরকার নেই। এটা এমনিতেই দু-চারদিন পর ভালো হয়ে যেতে পারে। প্যারাসিটামল খেলে যতটুকু কমে ততটুকু থাকা ভালো।
এর সঙ্গে একটু পানি বেশি করে খাবে। ফল বা ফলের রস খেতে পারে। খাওয়া দাওয়া স্বাভাবিক খাবে।
প্রশ্ন : পরীক্ষা নিরীক্ষার ক্ষেত্রে কী করণীয়?
উত্তর : চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু যাই বলেন সবই কিন্তু ক্লিনিক্যালই ডায়াগনোসিস করা হয়। রোগীকে দেখেই রোগ নির্ণয় করা হয়। রোগীর সঙ্গে যদি ভালো করে কথা বলা হয়, ইতিহাস নেওয়া হয় এবং ফলোআপে রাখা হয়, তাহলে রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে পরীক্ষা নিরীক্ষা যেহেতু বর্তমানে হচ্ছে, এ বিষয়ে আমি বলব, চিকুনগুনিয়ার টেস্টের চেয়ে ডেঙ্গুর টেস্ট করা লাগে বেশি। চিকুনগুনিয়ার যেই পরীক্ষা আছে, সেটি খুব বেশি নেই। অনেকে আরটিপিসিআর করে। তবে এগুলো গবেষণা পর্যায়েই আছে। তারপর কিছু রক্তের পরীক্ষা আছে। তবে এগুলো কিন্তু চিকুনগুনিয়ার বেলায় খুব ভালো পরীক্ষা না। কারণ, টেস্ট পজিটিভ হলো চিকুনগুনিয়া হবে এমন কোনো কথা নেই, আবার নেগেটিভ হলে চিকুনগুনিয়া নেই সেটিও বলা যাবে না। আবার টেস্টগুলোর কিছু সময় আছে। সেগুলো না করতে পারলেও কিন্তু আসবে না। সেই জন্য চিকুনগুনিয়ার টেস্ট যদি আমরা দেই, সেগুলো খুব সাবধানে করা উচিত। আমি মনে করব চিকুনগুনিয়ার টেস্ট করলেও ডেঙ্গু কি না সেটিও বের করা উচিত। যদি তিনদিনের ভেতর হয় ডেঙ্গু এনএসওয়ান করলে বোঝা যাবে। আর তিন দিন যদি পেরিয়ে যায়, তাহলে সিবিসি প্লাটিলেট কাউন্ট করতে হবে।