বিশ্ব শিশু স্বাস্থ্য দিবস : শিশুর জন্য হোক পৃথিবী
আজকের শিশু আগামীর পিতা। আজকের শিশুরাই আগামীতে নেতৃত্ব দেবে। তারাই আগামীতে দেশ ও জাতি গঠনে সহায়তা করবে। তারাই চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী হবে। তারা সুস্থ থাকলে সুস্থ জাতি হবে। তারা রোগা-পটকা হলে জাতিও রোগা-পটকা হবে। তাই তাদের সুস্থতা আগে। এ জন্য বিশ্বব্যাপী অক্টোবরের প্রথম সোমবার পালন করা হয় বিশ্ব শিশু স্বাস্থ্য দিবস। এর ধারাবাহিকতায় আজ পালিত হবে দিবসটি। শিশুর সুস্থতায় করণীয় কিছু নিয়ে আলোচনা করব।
১. ঘুম
শিশুদের জন্য ঘুম খুব প্রয়োজনীয়। সারা দিনে শরীরের যত ক্ষয় হয়, ঘুমের সময় তা ঠিক হয়। শিশুদের ঘুমের সময় বেশি হতে হবে। দিনে ১০ ঘণ্টার মতো। কম ঘুম শিশুদের জন্য খুব ক্ষতিকর। অনেক শিশু মা-বাবার সঙ্গে রাত ১টা/২টা পর্যন্ত জেগে থাকে। এটা খুবই অস্বাস্থ্যকর। রাতের বেলা ঘুমালে শরীরে বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণ হয়, যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। অসময়ের ঘুম এতে বিঘ্ন ঘটায়। তাই শিশুকে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস করান। এটা শুধু বললেই হবে না, আগে আপনাকে পরিবর্তন করতে হবে। শিশুকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বিছানায় যান। বিছানায় যাওয়ার আগে ল্যাপটপ, ট্যাবে গান বা সিনেমা দেখাবেন না। এতে ঘুমে সমস্যা হয়।
২. খাবার
আজকাল অধিকাংশ মায়ের অভিযোগ, তাঁর সন্তান খায় না। মায়েরা এই একটা বিষয়ে খুব সচেতন। আসলে আমরা শিশুদের যেভাবে খাওয়াই, তা কিন্তু খুব বাজে। বাচ্চাকে নির্দিষ্ট সময় মেনে খেতে দিই। অনেক সময় খেতে বাধ্য করি। পারলে চাপিয়ে খাওয়াই। বাচ্চা খেতে চায় না। কান্নাকাটি করে। এতে খাবারের প্রতি অনীহা চলে আসে। ধীরে ধীরে সে খাবারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এটা না করে আপনি চিন্তা করুন তো আপনার মা-বাবা আপনাকে এভাবে জোর করে কয়দিন খাইয়েছে। আপনি কি বড় হননি? আপনি কি রোগা-পটকা হয়েছেন। বাচ্চাকে খাবার নিয়ে বেশি জোড়াজুড়ি করবেন না। ক্ষুধা লাগলে এমনি খাবে। চেয়ে নিয়ে খাবে। অনেকে টিভি দেখিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস করেন। এটাও খুব ভুল। সন্তানকে খাবার টেবিলে নিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। যখন আপনি খাবেন, তাকে নিয়ে টেবিলে বসুন। তাকে নিজ হাতে খেতে দিন। সময় লাগলেও ধৈর্য ধরে এ অভ্যাস করালে খাবার খাওয়ানো নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। অনেক শিশু পানি খায় না বললেই চলে। পানি ছাড়া শরীরের স্বাভাবিক কাজ চলে না। তাই ছোটবেলা থেকেই পানি পানের অভ্যাস করাতে হবে। অনেকে শাকসবজি খাওয়ান না। শাকসবজি না খাইয়ে শুধু মাংস খাওয়ালে পেটের অনেক রোগ বাড়বে।
৩. ফাস্টফুডকে না বলুন
আমরা শিশুদের ছোটবেলা থেকেই ফাস্টফুডের সঙ্গে পরিচিত করি। কারণ, আমরা তা না হলে তো চলতে পারি না। ফাস্টফুড শরীরের জন্য বেশ ক্ষতির কারণ হতে পারে। বর্তমানে মুটিয়ে যাওয়া বিশ্বব্যাপী বড় সমস্যা। স্থূল শিশুরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া অল্প বয়সেই তারা বিভিন্ন রোগবালাইয়ে ভোগে। ফাস্টফুড খেতে দেবেন না।
৪. খেলাধুলা
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বাচ্চাদের প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা খেলতে দিতে হবে। অবাক হলেন? বলতে পারেন, আমাদের বাচ্চারা তো এর বেশি খেলে; অবশ্য সেটি কম্পিউটারে। না, না, আমি এ খেলার কথা বলছি না। খোলা মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট, দৌড়ঝাঁপ করতে হবে। এটা শিশুর শরীর গঠনে খুব উপকারী। ভাবছেন, মাঠ পাবেন কোথায়? তাও ভাবার বিষয়। দেখুন না খুঁজে বাসার আশপাশে। শিশুর জন্য একটু সময় দিন না। অসুস্থ হলে তো ঠিকই সময় বের করবেন।
৫. সহিংসতা
আজকাল পত্রিকা পড়লে মনে হয়, শিশু মৃত্যুহারের অন্যতম কারণ সহিংসতা। শিশুদের দেখলেই তো আদর করতে ইচ্ছা করে। আমরা কী পরিমাণ দানবে পরিণত হয়েছি যে বিনা কারণে, তুচ্ছ কারণে শিশুদের হত্যা করছি। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা কিন্তু সহিংসতায় আক্রান্ত হয় বেশি। শিশুদের এ থেকে রক্ষা করতে হবে। শিশুদের সহিংসতার বিচারের জন্য দ্রুত ট্রাইব্যুনালের ব্যবস্থা করতে হবে। মা-বাবাকে সচেতন থাকতে হবে।