আপনার সন্তান ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত না তো?
ফ্যাটি লিভার, একসময় কেবল প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যই উদ্বেগের কারণ হিসেবে বিবেচিত হত। কিন্তু বর্তমানে শিশুদের মাঝেও এটি উদ্বেগজনক সমস্যা হয়ে উঠেছে। পেডিয়াট্রিক নন-অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এনএএফএলডি) নামেও পরিচিত । শিশুদের লিভারকোষগুলোতে অতিরিক্ত চর্বি জমা হলে এই রোগের দেখা দেয়। বিশেষ করে, যেসব শিশুরা বেশি প্রক্রিয়াজাত খাবার, শর্করা এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার খায়। তাদের মাঝে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাই আপনার সন্তানের মধ্যে ফ্যাটি লিভারের লক্ষণগুলো শনাক্ত করুন। সময়মতো চিকিৎসা করান।
ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
ডাঃ রাহুল দুব্বাকা, হায়দ্রাবাদের বানজারা হিলসের কেয়ার হসপিটালস কনসালট্যান্ট গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট বলেন, “ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত শিশুরা সবসময় ক্লান্ত থাকে। তারা দুর্বলতা প্রদর্শন করে। যা তাদের স্কুলের কর্মক্ষমতা এবং দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপকে প্রভাবিত করতে পারে”।
অতিরিক্ত ওজন
ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত সব শিশুদের ওজন বেশি হয় না। তবে বেশিরভাগ শিশুরাই অতিরিক্ত ওজনের হয়। বিশেষ করে, পেটের অঞ্চলের চারপাশে চর্বি জমে যায়। এটি ফ্যাটি লিভারের একটি সাধারণ ঝুঁকির কারণ।
পেটে ব্যথা
ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত কিছু শিশু পেটের উপরের ডানদিকে অস্বস্তি বা হালকা ব্যথা অনুভব করতে পারে।
ক্ষুধা বা ওজন কমে যাওয়া
ফ্যাটি লিভারের রোগে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষুধা কমে যায়। ওজন কমে যেতে থাকে।
এলিভেটেড লিভার এনজাইম
ডাঃ দুব্বাকার মতে, “রুটিন রক্ত পরীক্ষাগুলো লিভারের এনজাইমের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যা লিভারের প্রদাহ এবং সম্ভাব্য ফ্যাটি লিভার ডিজিজ নির্দেশ করে”।
ইনসুলিন প্রতিরোধ
ফ্যাটি লিভার ডিজিজ ইনসুলিন প্রতিরোধের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এনএএফএলডি আক্রান্ত কিছু শিশু সময়ের সাথে সাথে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে।
উচ্চ কোলেস্টেরল
ডাঃ দুব্বাকা বলেন, “রক্ত পরীক্ষাগুলো কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়াতে পারে। যা ফ্যাটি লিভার ডিজিজের সাথে যুক্ত”।
ফ্যাটি লিভার থেকে সন্তানকে রক্ষা করতে আপনাকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। যার ফলে আপনার শিশু প্রাথমিক অবস্থাতেই এই রোগ থেকে রক্ষা পাবে।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন
ডাঃ দুব্বাকার মতে, "পেডিয়াট্রিক এনএএফএলডির প্রাথমিক চিকিৎসা হল জীবনযাত্রার পরিবর্তন। শিশুকে ফলমূল, শাকসবজি, শস্য এবং চর্বিযুক্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ সুষম খাবার খাওয়ান। চিনিযুক্ত পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে দূরে রাখুন। ফ্যাটি লিভার ডিজিজ পরিচালনায় নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপও অত্যাবশ্যক। বাবা-মায়ের উচিত সন্তানকে ডিভাইস থেকে দূরে রাখা। সন্তানদের বয়স-উপযোগী শারীরিক ক্রিয়াকলাপে জড়িত হতে উত্সাহিত করা”।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করা
যদি শিশুর ওজন বেশি হয় তবে ধীরে ধীরে ওজন কমানোর চেষ্টা করুন। সে ক্ষেত্রে, শিশুকে ক্রাশ ডায়েট থেকে অবশ্যই দূরে রাখবেন। কারণ এ সব ডায়েট লিভারের স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক সুস্থতা আরও খারাপ করতে পারে।
মেডিকেল তত্ত্বাবধান
শিশুর ফ্যাটি লিভার ডিজিজ নির্ণয় হলে নিবিড় চিকিৎসার প্রয়োজন। শিশুর লিভার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন। চিকিৎসকের থেকে সন্তানের জন্য একটি ডায়েট চার্ট নিতে পারেন।
ওষুধ এবং পরিপূরক এড়ানো
শিশুকে কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কিছু ওষুধ শিশুদের লিভারের ক্ষতি করতে পারে।
সূত্র- টাইমস অব ইন্ডিয়া