শিশুর দাঁতের যত্ন নেবেন কখন থেকে
দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা যদি না বোঝা যায় তাহলে পরে পস্তানো ছাড়া কিছু করার থাকে না। দাঁতের সমস্যা আমাদের দেশের শিশুদের অন্যতম প্রধান সমস্যা। শিশুদের দাঁতের যত্ন নিতে হয় শুরু থেকেই। তাদের যত্ন নেওয়া শেখাতে মা-বাবার ভূমিকাই বেশি থাকে।
অনেকেই প্রশ্ন করেন শিশুর দাঁতের যত্ন নিবেন কখন থেকে। দেখা যায়, ছয় মাস বয়স থেকে শিশুর দাঁত ওঠে। তবে গর্ভে থাকাকালীনই দাঁত উঠতে থাকে। দাঁতের মাড়ি ভেদ করে আসতে এ সময় লাগে। তাই দাঁত দেখা না গেলেও এর পরিচর্যা শুরু করতে হয় শুরু থেকেই।
শিশুকে প্রতিবার বুকের দুধ খাওয়ানোর পর কোমল কাপড় বা গজ দিয়ে মাড়ি ভালো করে পরিষ্কার করে দিন। এতে শিশু দাঁতে ক্ষয় রোগ থেকে রক্ষা পাবে। দাঁতে ক্ষয়রোগের কথা যখন এসেই গেল তখন এ নিয়ে কিছু বলতেই হয়। বেশির ভাগ শিশুর দেখা যায় দাঁতে কালো কালো দাগ পড়ে। দাঁতের কিছু অংশ নষ্ট হয়ে যায়। পরে এ নষ্ট অংশ ভেঙে যায়। আবার দাঁতের মধ্যে গর্ত দেখা দেয়। গ্রামের বয়স্করা বলেন পোকায় দাঁত খেয়েছে। এ পোকায় দাঁত খাওয়াই দাঁতের ক্ষয়রোগ। গবেষণায় দেখা গেছে, ৮-১৫ বছরের শিশুদের ৫৩-৭৭ ভাগ এ রোগে ভোগে। সঠিক সময়ে যত্ন না নিলে এ রোগ থেকে দাঁতের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এটি প্রতিরোধ করা যায় সহজেই।
শিশুরা মিষ্টি জাতীয় খাবারের ভক্ত। অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবারই এমন হওয়ার মূল কারণ। মিষ্টি খেলে মুখে ব্যাকটেরিয়া হয় বেশি। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করলে দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা জমে যায়। এ খাদ্যকণা ও ব্যাকটেরিয়া দাঁতের চারপাশে প্লাক তৈরি করে। প্লাকের ব্যাকটেরিয়া মিষ্টি জাতীয় খাবারকে এসিডে পরিণত করে। ফলে দেখা দেয় দাঁতের ক্ষয়। এজন্য শিশুদের মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খেতে দেবেন না।
চকলেট, আইসক্রিম, কেক, পেস্ট্রি, পুডিং, মধু, জ্যাম-জেলি, কেকের ক্রিম, কোমলপানীয়, জুস কম খেতে দিতে হবে।
দাঁত ব্রাশের বিকল্প নেই। দাঁত বের হওয়ার সাথে সাথে শিশুর দাঁত ব্রাশ করা শুরু করতে হবে। তার মানে ছয় মাস বয়স থেকেই টুথপেস্ট ও ব্রাশ দিয়ে ব্রাশ করতে হবে। অনেকে মনে করেন শিশু তো কিছু খায় না, তাই ব্রাশ করার প্রয়োজন নেই। এটা কিন্তু ঠিক নয়। ব্রাশ না করলে কিন্তু দাঁতের ক্ষয় হয়। মা-বাবাকেই ব্রাশ করিয়ে দিতে হবে। শিশুর ব্রাশ হবে ছোট। ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে। ফ্লোরাইড দাঁতের ক্ষয়রোধ করে। তাই বলে বেশি পরিমাণে টুথপেস্ট দিবেন না। কারণ, এ ফ্লোরাইড আবার বেশি হলে দাঁতে হলদে ভাব দেখা দেয়। শিশুর ছোট টুথব্রাশের চার ভাগের তিনভাগ পরিমাণ টুথপেস্ট নিয়ে দাঁত ব্রাশ করিয়ে দিন। শিশুর টুথব্রাশ অবশ্যই হতে হবে নরম,কোমল। তিনবছর বয়স পর্যন্ত এ পরিমাণ টুথপেস্ট ব্যবহার করুন। এ সময়ের পর মটরশুটির দানার পরিমাণ টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে। ব্রাশ করতে হবে দিনে কমপক্ষে ২ বার। রাতে খাবারের পর ও দিনে সকালের নাস্তার পর।
ঐতিহ্যগত ভাবে আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করি। এতে কোনো ভালো ফল পাওয়া যায় না। রাতে খাবারের পর খাদ্যকণা জমে থাকলে তাতে সহজেই ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে দাঁত ক্ষয় করতে পারে। শিশুকেও এভাবেই ব্রাশ করা শেখান। ব্রাশ করতে হয় ১-২ মিনিট। সব দাঁতে যেন ব্রাশ পৌঁছে সেদিকে খেয়াল রাখুন। ব্রাশ করুন ওপর ও নিচে। ব্রাশে উল্টো পিঠ দিয়ে জিহ্বা ও তালু পরিষ্কার করুন। অনেক শিশু টুথপেস্ট গিলে ফেলে। এটা কিন্তু ভালো নয়। দাঁত ব্রাশ হয়ে গেলে অতিরিক্ত টুথপেস্ট কুলকুচি করে ফেলে দেওয়া শেখান। শিশু ঠিকমতো দাঁত ব্রাশ করছে কি না তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন।
অনেকে একই টুথপেস্ট বছরের পর বছর ব্যবহার করেন। তা না করে বিভিন্ন কম্পানির টুথপেস্ট ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ব্যবহার করুন। এক টুথব্রাশ ২-৩ মাসের বেশি ব্যবহার না করাই ভালো। অনেক শিশুর দাঁতে হলদে ভাব দেখা যায়। বিভিন্ন ওষুধ ও অতিরিক্ত ফ্লোরাইডের কারণে তা হয়। গর্ভস্থ মা টেট্রাসাইক্লিন সেবন থেকে বিরত থাকুন।
দন্ত্য চিকিৎসককে দাঁত দেখানোর কথা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন বলেছে প্রথম জন্মদিনের আগেই শিশুকে দন্ত্য চিকিৎসককে দেখাতে হবে। এরপর বছরে অন্তত দুই বার দন্ত্য চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। দাঁতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে যেমন দাঁতে ব্যথা, কালচে বা হলুদ ভাব তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।
লেখক : মেডিকেল অফিসার