বিএসএমএমইউয়ে সফলভাবে বোনম্যারো প্রতিস্থাপন সম্পন্ন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) সফলভাবে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত এক রোগীর বোনম্যারো প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ-ব্লকে ‘সেন্টার ফর ব্লাড, বোনম্যারা ট্রান্সপ্লান্টেশন এন্ড স্টেম সেল থেরাপি’সেন্টারে এ উপলক্ষে একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী ও ধারাবাহিকতাভাবে বোনম্যারো প্রতিস্থাপনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। ‘সেন্টার ফর ব্লাড, বোন ম্যারা ট্রান্সপ্লান্টেশন এন্ড স্টেম সেল থেরাপী’ সেন্টারকে বিশ্বমানের করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে হিসেবে ভবিষ্যত পরিকল্পনাসহ বোনম্যারো প্রতিস্থাপনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউ’র ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। বোনম্যারো প্রতিস্থাপনের কারিগরি বিষয়ে উপস্থাপন করেন হেমাটোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাউদ্দিন শাহ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিএসএমএমইউ‘র এফ-ব্লকে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য স্থায়ীভাবে গত ১ জানুয়ারি ‘সেন্টার ফর ব্লাড, বোন ম্যারা ট্রান্সপ্লান্টেশন এন্ড স্টেম সেল থেরাপি সেন্টার’ স্থাপন করা হয়। এই সেন্টারে প্রথমবারের মত সফল বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন করা হয়।
গত চার মাস আগে নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারে বাসিন্দা ৬৩ বছরের এনামুল হক নানান শারীরিক জটিলতা নিয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসেন। নানান পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বিএসএমএমইউ‘র হেমাটোলোজি বিভাগ নিশ্চিত করেন এনামুল হকের শরীর মাল্টিপোল মায়োলোমা বা জটিল রক্তের ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। এরপর হেমাটোলোজি বিভাগে তাঁর চিকিৎসা শুরু করা হয় এক পর্যায়ে চিকিৎসকরা তার বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের সিদ্ধান্ত নেন। এরই ধারাবাহিকতায় নানান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গত ৭ ডিসেম্বর বিএসএমএমইউয়ে তাকে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসার এক পর্যায়ে তাকে অটোলোগাস বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন দেবার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। গত ১৭ জানুয়ারি রোগীর শরীর থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করা হয়। ওইদিনই রোগীর কন্ডিশনিং থেরাপি দেওয়া হয়। গত ১৮ জানুয়ারি বিএসএমএমইউ‘র হেমাটোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন শাহ্ রোগীর শরীরে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন করেন। ৩০ জানুয়ারি রোগীর নিউটোফিল রিকভারি হয়। ট্রান্সপ্লান্টেশনের ১৮ দিন পরে রোগীর শরীরের কোন ধরণের জটিলতা দেখা যায়নি, যা চিকিৎসকরা স্বাভাবিক ও ইতিবাচক এবং বোনম্যারো সফলভাবে প্রয়োগ হয়েছে জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর ব্লাড, বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন অ্যান্ড স্টেম সেল থেরাপি’সেন্টারে প্রথম রোগী হিসেবে মাত্র তিন লাখ ২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ভেদে এ ট্রান্সপ্লান্টেশনের খরচ ছয় লাখ টাকা থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। বিদেশে এই ধরনের বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের খরচ হাসপাতাল ভেদে ২০ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা হয়ে থাকে। বিএসএমএমইউ দেশের রোগীদের যাতে বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে না হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। সরকারের প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই সেন্টারে মাসে ৩ থেকে ৫টা বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন করা সম্ভব। বিদ্যমান সুযোগ সুবিধায় প্রতি মাসে একটি করে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করা সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউ‘র রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, হেমাটোলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজসহ বিভিন্ন স্তরের চিকিৎসক, মেডিক্যাল অফিসার, রেসিডেন্ট ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।