রমজান মাসে খাদ্যতালিকায় যা রাখবেন
পবিত্র রমজান মাসে খাদ্যাভ্যাস, জীবন যাপন, পাশাপাশি খাবারের সময়—প্রতিটি বিষয়ে দেখা যায় পরিবর্তন। তাই আপনি যদি রমজান মাসে সকল রোজা পালন করতে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই একটি পরিমিত এবং পুষ্টিকর খাবার অনুসরণ করতে হবে। সে জন্য রমজানে খাদ্যাভ্যাস হতে হবে সুষম ও সুনিয়ন্ত্রিত। তাই রমজানে ইফতার ও সেহরির খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ।
রমজানে খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ বলেন, রমজান মাসে বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর খাবার ও অতিরিক্ত তেল-চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহণ করার ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম—যদি আপনার বিভিন্ন রোগ থাকে, তাহলে রোগের পরিমাণ বা রোগ তুলনামূলকভাবে বেড়ে যেতে পারে, যদি আপনি অনিয়ন্ত্রিত বা অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করেন।দ
নাহিদা আহমেদ বলেন, ইফতার থেকে সেহরি—রমজানের এই সময়ে আমরা খাবারের পরিমাণটা গ্রহণ করে থাকি। আর আমরা পানাহার ব্যতীত থাকি সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত। কিন্তু অন্য সময় আমরা বলি, সন্ধ্যা থেকে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিন। রমজান মাসে যেহেতু এর ব্যতিক্রম ঘটে, অবশ্যই আপনার ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত সময়ে অল্প অল্প করে বারবার খাবার গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ইফতার হতে হবে সুষম আর সহজেই যেন সে খাবারটি হজম হয়ে যায় বা সহজপাচ্য খাবার। কেননা, দীর্ঘ সময় পানাহার ব্যতীত থাকার ফলে আপনি যদি অতিরিক্ত ভারী খাবার গ্রহণ করেন, সে ক্ষেত্রে কিন্তু আপনার বিভিন্ন ধরনের বদহজম বা হজমজনিত জটিলতা দেখা দিতে পারে। ইফতারে খাবার যেগুলো গ্রহণ করবেন, সেগুলো যেন খুব সহজে হজম হয়ে যায়। কিন্তু আমরা এ বিষয়টি খেয়াল রাখি না। আমাদেরকে রমজান মাসে ভাজাপোড়া, মসলাজাতীয় বা চটকদার খাবার ইফতারের টেবিলে পরিবেশন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ইফতারে একটি বা দুটি খেজুর দিয়ে শুরু করা উচিত। তারপর অল্প করে পানি খেতে পারেন। একবারে অতিরিক্ত পানি পান করা যাবে না। সহজে হজমযোগ্য, যেমন স্যুপ, তরলজাতীয় খাবার বা ফলের জুস বা স্মুদি গ্রহণ করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, মাগরিবের নামাজ শেষে অল্প অল্প করে প্রোটিনজাতীয় খাবার বা কার্বোহাইড্রেট-জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে পারেন। ইফতারে ছোলা বা বিভিন্ন ধরনের মসলা জাতীয় খাবার, ডুবো তেলে ভাজা; যেমন-পাকোড়া, বড়ার পরিবর্তে দই, চিড়াসহ বিভিন্ন ফলের মিক্সড ফ্রুট সালাদ গ্রহণ করবেন। এই খাবারগুলো আপনাকে সুরক্ষা প্রদান করতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া ইফতারে হালিম খেতে পারেন। কারণ হালিমে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের ভাল কম্বিনেশন থাকে।
নাহিদা আহমেদ বলেন, ইফতারে বিভিন্ন সবজি, চিকেন, ডাল ও চাল দিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে খিচুড়ি রান্না করতে পারেন। রাতে খাদ্য তালিকায় অল্প হলেও খাবার রাখা উচিৎ। এতে আপনার খাবারে সুষম ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। রুটি, সামান্য পরিমাণে সবজি, ডিম ও দুধ খেতে পারেন। ইফতারে সিদ্ধ ছোলা, সালাদের পাশাপাশি পছন্দের ভাজা-পোড়ার মধ্যে একটি-দুটি সিলেক্টিভ আইটেম ভাল কার্যক্রম ভূমিকা রাখবে।
সেহরির খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে এই পুষ্টিবিদ বলেন, সেহরিতে অবশ্যই আপনাকে সুষম খাদ্য তালিকা মেনে চলতে হবে। কেননা দীর্ঘ সময় আপনাকে রোজা রাখার ক্ষেত্রে যে শক্তি প্রদান করবে, সেটি হচ্ছে সেহরির খাবার। সে জন্য সেহরিতে আপনি যে খাবারগুলো গ্রহণ করবেন। সেখানে যেন জটিল শর্করা থাকে সে বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
নাহিদা আহমেদ বলেন, সেহরির শেষ সময়ে খাবার গ্রহণ করা উচিত। কেননা সেহরির শুরুতে খাবার গ্রহণ করলে দ্রুত ক্ষুধা লেগে যেতে পারে। সেহরিতে ভাতের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খেতে হবে। কেননা শাকসবজি থেকে ফাইবার পাওয়া যায়। সেহরিতে অবশ্যই মাছ, মাংস, ডাল ও ডিমের মধ্যে একটি প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখতে হবে। এ ছাড়া লাল চাল বা লাল আটার তৈরি বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী থাকতে পারে। আপনি চাইলে ভাত ও রুটি খেতে পারেন। চাল দিয়ে তৈরি অন্য যেকোনো খাবারও খেতে পারেন।
তিনি বলেন, সেহরিতে আপনি চাইলে এক গ্লাস দুধ রাখতে পারেন। অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। যেহেতু গরমের সময় রোজা হওয়ায় শরীর অল্পতেই ডিহাইড্রেট হয়ে যাবে। এজন্য এসময় আপনাকে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
রমজান মাসে সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত সময়টা পানাহার ব্যতীত থাকতে হবে। তাই এ সময়টা খুব সহজ ও জটিলতা মুক্ত থেকে রমজানের রোজা রাখতে পারেন। তাই রমজানে এই ছোট ছোট নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে।