সার্টিফিকেটে নাম ভুল আসলে কী করবেন?
আকরাম আলী (ছদ্দ নাম) গত বছর মাগুরা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। কয়েকদিন পর নিজের নম্বরপত্রটি যখন হাতে পেলেন তখন চোখ তাঁর কপালে। কারণ, নম্বরপত্রে আকরাম আলীর নাম ভুলে হয়ে গেছে ছাদ্দাম আলী। এ নিয়ে আকরাম আলী বেশ ভাবনায় পড়ে গেলেন। কী করবেন এখন? আর যাই হোক, নম্বরপত্রে তো নিজের নাম ভুল রাখা যায় না।
আকরামের মতো অনেককেই এই রকম বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। নিজের নাম তো বটেই, অনেক ক্ষেত্রে বাবা বা মায়ের নামও ভুল লেখা হয় সনদে। সার্টিফিকেটে নাম, জন্মতারিখ বা অন্য যেকোনো তথ্য ভুল লেখা হলে কী করবেন, কীভাবে তা সংশোধন করবেন তা বুঝতে পারেন না অনেকেই। দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। তবে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। সার্টিফিকেটে নামের বানান বা জন্মতারিখ ভুল হলে গড়িমসি না করে যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
জন্মতারিখ ভুল হলে পাসের সাল থেকে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সংশোধন করতে হয়। সাধারণত এর পর আর তা সংশোধন করা হয় না। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনা করা হয়। আসুন জেনে নিই কী করতে হবে-
১. নাম বা জন্মতারিখের ভুল সংশোধনের জন্য প্রথমে আইনজীবীর মাধ্যমে নোটারি বা এফিডেভিট করাতে হবে। পরে একটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর সার্টিফিকেট নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, শাখা, পরীক্ষার সাল, পরীক্ষাকেন্দ্রের নাম, রোল নম্বর, বোর্ডের নাম এবং জন্মতারিখ উল্লেখ করে যা সংশোধন করতে চান (প্রার্থীর নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম বা জন্মতারিখ) তা সংক্ষেপে উল্লেখ করতে হবে।
২. বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আপনাকে যেতে হবে যে শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দিয়েছেন সেই বোর্ডে। শিক্ষা বোর্ডের 'তথ্য সংগ্রহকেন্দ্র' অথবা 'বৃত্তি বিভাগ' থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। আবেদনপত্র সংগ্রহের পর তা নির্ভুলভাবে পূরণ করতে হবে। প্রার্থীর নাম, বাবা বা মায়ের নাম কিংবা জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য (জরুরি ফিসহ) ৫০০ টাকা জমা দিতে হয়। এ ফি সোনালী ব্যাংকের ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে বোর্ডের সচিব বরাবর জমা দিতে হবে। টাকা জমা হওয়ার পর আবেদন কার্যকর হবে।
৩. আবেদনপত্রের সঙ্গে ব্যাংক ড্রাফটের মূল কপি, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির কাটিং, মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক সত্যায়িত এক কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি এবং প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের কাছে নাম বা জন্মতারিখ সংশোধন সম্পর্কে এফিডেভিট করে তার মূল কপি জমা দিতে হবে। প্রার্থীর নিজের নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে তার বয়স যদি ১৮ বছরের বেশি হয়, তাহলে তিনি নিজেই এফিডেভিট করতে পারবেন। প্রার্থীর বয়স যদি ১৮ বছর পূর্ণ না হয় বা প্রার্থী যদি তার মা-বাবার নাম সংশোধন করতে চান, তাহলে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রার্থীর বাবা কর্তৃক প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের কাছ থেকে এফিডেভিট করতে হবে এবং মূল কপি জমা দিতে হবে।
৪. নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য আবেদন গ্রহণের এক মাসের মধ্যে বোর্ড আবেদনকারী এবং তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষকসহ একটি মিটিংয়ে বসে। এ মিটিংয়েই প্রার্থীর আবেদন যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মিটিংয়ে বসার নিদেনপক্ষে ১০ থেকে ১৫ দিন আগেই আবেদনকারীর ঠিকানায় চিঠি দিয়ে জানানো হয়। জরুরি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে বোর্ডের চেয়ারম্যানের বিশেষ বিবেচনায় একদিনের মধ্যেও নাম ও জন্মতারিখ সংশোধন করার সুযোগ আছে।
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট