সাইবার অপরাধ
প্রয়োজন সাহস ও সচেতনতা
অমৃতাকে (ছদ্মনাম) একজন ছেলে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার নামে ফেসবুকে ভুয়া আইডি খোলা হয়। আর এই অ্যাকাউন্ট থেকে আপত্তিকর ছবি আপলোড করা হয়। এভাবে ওই ছাত্রীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের সাহায্যে হেয়প্রতিপন্ন করে বখাটে ছেলেটি।
অমৃতা ভয় না পেয়ে পুলিশের সাহায্য চায়। পরে প্রশাসনের সহায়তায় অপরাধীকে ধরা যায়। এবং সে পুলিশের সামনে জবানবন্দিতে বলে যে ফেসবুকে পাঁচটি ভুয়া আইডি খুলে তাতে নগ্ন ছবি আপলোড করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
এমন পরিস্থিতিতে অনেক মেয়েই মনোবল হারিয়ে ফেলে, লোকলজ্জা ও পরিবারের চাপে দেখা যায় ঘর থেকেই বের হওয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু মেয়েদের বুঝতে হবে, অনলাইনে এমন ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলা ও সেখানে বাজে জিনিস পোস্ট করা অপরাধ।
আবার প্রায়ই শোনা যায়, দিনের পর দিন একটি ছেলে কোনো মেয়েকে আজেবাজে ছবি পাঠাচ্ছে বা মেয়েটির ছবি জোড়া দিয়ে নানা জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। এসব ঘটনা প্রতিনিয়তই আমাদের আশপাশে ঘটে যাচ্ছে।
টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিনর গ্রুপ বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলোসহ বিভিন্ন এলাকার ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী এক হাজার ৮৯৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে ইন্টারনেটবিষয়ক জ্ঞানের ওপর একটি জরিপ চালায়। শিক্ষার্থীদের অনলাইনে কার্যক্রম ও আচরণবিষয়ক ‘নিরাপদ ইন্টারনেট’ শীর্ষক গবেষণায় জানা যায়, বাংলাদেশে ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হওয়া ৪৯ শতাংশই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। এখন প্রতি মিনিটে পাঁচজন করে নতুন ফেসবুক আইডি খুলছেন এই শিক্ষার্থীরা।
আর এসবের শিকার হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া বা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। এর ফলে আসলে আপনি হেরে যাচ্ছেন আর অপরাধীদের জিতিয়ে দিচ্ছেন।
এই অপরাধ বন্ধ করতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের একটি বিশেষ টিম, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি), সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেন্টার (সিআইসি) ও র্যাবের একটি উইং কাজ করছে।
ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীর আইডি বন্ধের জন্য বিটিআরসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কারো আপত্তিকর বা অশ্লীল ছবি এবং ভিডিও ফেসবুক, মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেটে আপলোডের মাধ্যমে হয়রানি করলে অপরাধীর বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করতে পারেন।
এসব অপরাধের এ আইনের ৫৬ ধারা অনুযায়ী অপরাধী ১০ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন বা উভয় দণ্ড পেতে পারেন।
যখনই আপনার ওপর কোনো আক্রমণ হবে, তখনই ফোন করে সাহায্য চান এই নম্বরে—০১৭৬৬৬৭৮৮৮৮। এই হেল্পলাইন সপ্তাহের সাত দিন, ২৪ ঘণ্টা সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। আপনি চাইলে যেকোনো সময় এখানে ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারবেন। এ ছাড়া সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে প্রতিটি জেলায় ‘সাইবার ক্রাইম কন্ট্রোল কমিটি’ গঠন করা হচ্ছে।
লেখক : আইন অধিকারকর্মী।