পুজোর দিনে ঘরের সাজ
বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা সমাগত। চারদিকে লেগেছে উৎসবের দোলা। দুর্গাপুজোর আনন্দ মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা দর্শন ও পুজো দেওয়া হলেও উৎসবের মূল সূচনা কিন্তু ঘর থেকেই হয়। উৎসবের এ ছোঁয়া থাকে ব্যক্তিগত সাজসজ্জা, পোশাক-আশাক, খাওয়া-দাওয়া এমনকি ঘরের সাজসজ্জায়ও।
গৃহসাজের শুরুটা হয় মূল প্রবেশপথ থেকেই। তাই প্রবেশ পথেই করে নেওয়া যেতে পারে একটি লতানো আল্পনা। জায়গা বুঝে এক কোণে রাখা যেতে পারে দুই থেকে তিনটি ছোটবড় মাটির পটারি, কিছু সবুজ-সতেজ গাছ। আর সেই সঙ্গে মাটির একটি পাত্রে পানি দিয়ে কিছু প্রদীপ জ্বালিয়ে দিলে প্রবেশ পথটিতে নিয়ে আসবে উৎসবের আমেজ।
পুজো মানেই আল্পনা, আল্পনা কয়েকভাবেই হতে পারে। যেমন : চালের গুঁড়া দিয়ে সাদা রঙের আল্পনা, বিভিন্ন রঙ দিয়ে রঙিন আল্পনা, শুধু ফুল দিয়ে ফুলের আল্পনা। আর পুজোর এই দিনগুলোয় বৈঠকখানা বা বসার ঘরসহ বাড়ির অন্যান্য ঘরে ও পুজোর ঘরের মেঝে রাঙিয়ে নেওয়া যায় আল্পনার রঙে। মেঝের কার্পেট তুলে ফেলে মেঝের ঠিক মাঝখানে বড় গোলাকৃতির একটি বর্ণিল আল্পনা করে নেওয়া যায়। আর এই আল্পনার মাঝে মাঝে বেশ কিছু প্রদীপ বা মোম জ্বালিয়ে দিলে চমৎকার একটি আবহ তৈরি হবে।
যেহেতু পুজো উৎসব, তাই সারা ঘরের সাজেই একটু ভিন্নতা আনা যেতে পারে। সেই সঙ্গে থাকতে হবে নানান বর্ণিল রঙের সমাহার। আর এই ভিন্নতা আনতে বসার আয়োজনটিও হতে পারে একটু ভিন্নভাবে। যেমন, বসার আয়োজনটি মেঝেতেই করা যেতে পারে। যেহেতু এই সময় বাড়িতে অনেক অতিথির আগমন ঘটে, তাই মেঝেতে বসার আয়োজনটি এমন হতে হবে, যেন বেশ কয়েকজন একসঙ্গে বসে আড্ডা-আনন্দে মেতে উঠতে পারে। আবার চাইলে আলাদা আলাদা আসনও করা যেতে পারে। মেঝেতে বসার এই আয়োজনটি করা যেতে পারে মাদুর, শীতলপাটি, শতরঞ্জি বা নকশী কাঁথা বিছিয়ে। যাই বিছানো হোক না কেন, এর ওপরে বেশকিছু রঙিন তাকিয়া ও কুশন ছড়িয়ে রাখতে হবে। এবং একপাশে ছোট্ট একটি কাঠের বা বেতের বা মাটির টেবিলের ওপরে সাজিয়ে রাখা যেতে পারে ছোট ছোট কিছু মাটি বা পেতলের মুর্তি, বড় একটি শঙ্খ, কিছু কাঁচা রঙিন ফুল ও এর সঙ্গে একটি মাটির বা পেতলের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলে-পুরো আয়োজনটি হয়ে উঠবে অনবদ্য। আর বসার এই আয়োজনটির ঠিক সামনেই করা যেতে পারে চালের গুঁড়ার একটি সূক্ষ্ম আল্পনা। আর আল্পনার ঠিক মাঝখানে একটি পেতল বা কাঁসার পাত্রের মধ্যে পানি দিয়ে একটি পদ্মফুল সাজিয়ে রাখলে পুজোর গৃহসাজের ষোলকলা পূর্ণ হবে।
এ ছাড়া এ সময়ের গৃহসাজে সোফার কাভার, কুশন কাভার, পর্দা ও বেড কাভারের রং হতে হবে উজ্জ্বল, বর্ণিল ও আভিজাত্যপূর্ণ।
উৎসবের পূর্ণতা পায় খাবারদাবারকে ঘিরে। পুজোর এই সময়টায় খাবার ঘরের সাজ ও খাবার পরিবেশনের ধরন-ধারণ ও পরিবেশন পাত্রেও থাকবে ভিন্নতা। ডাইনিং টেবিলে মাদুরের অথবা নকশি কাঁথা কাজের রানার বিছিয়ে তার ওপরে মাটির অথবা পেতলের ফুলদানিতে একগুচ্ছ কাঁচা ফুল সাজিয়ে তার পাশেই একটি প্রদীপ ও লম্বাটে একটি ঘণ্টা সাজিয়ে রাখলে ভালো লাগবে। টেবিলটি যদি গোলাকৃতির হয়, তবে নকশী কাঁথার টেবিল ক্লথ বিছিয়ে একইভাবে সাজানো যেতে পারে। এই ঘরের পর্দাতেও থাকবে উৎসবের রং। খাবার পরিবেশনের পাত্রগুলোতেও থাকবে বাঙালিয়ানার ছাপ।
এসব আয়োজন মিলেমিশে পুরো উৎসবটিই হয়ে উঠবে রঙে রঙে রঙিন ও আনন্দময়।
লেখক : সিইও ও কনসালটেন্ট, অ্যাসথেটিক ইনটেরিয়র