সড়কে শৃঙ্খলা ফিরেনি, বরং মৃত্যু বাড়ছেই
সড়কে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর বিচার, ক্ষতিপূরণসহ নয় দফা দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসব দাবিতে সমাবেশ করেছে তারা। আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ বিকেলে কেন্দ্রীয় মিনারের পাদদেশে ‘সড়কে স্বজন হারাদের সমাবেশ’ ব্যানারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সড়কে প্রাণ হারানো সাইফুল ইসলামের বাবা শাহজাহান কবির বলেন, দুই বছর আগে আমার একমাত্র ছেলেকে আমি হারিয়েছি। এখনো পর্যন্ত তার বিচার পাইনি কিন্তু সে ড্রাইভার এখনো ঠিকই গাড়ি চালাচ্ছে।
শাহজাহান হতাশ হয়ে বলেন, ‘আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সব দপ্তরে গিয়েছি কিন্তু আমি বিচার পাইনি এবং কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ পাইনি।’
সমাবেশে কান্নারত কণ্ঠে সাইফুল ইসলামের মা বলেন, ‘আমার কিছু বলার নেই, আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
সাইফুল ইসলামের বোন বলেন, ‘আমার ভাইসহ সড়কে প্রাণ হারানো সবার মৃত্যুতে জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি এবং আর কারো ভাই-ছেলে-মেয়ে যেন সড়কে প্রাণ না হারায় সে নিশ্চয়তা চাই।’
আন্দোলনের সমন্বয়ক মঈদুল ইসলাম দাউদ বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও সড়কে শৃঙ্খলা ফিরেনি। বরং মৃত্যুর হার বেড়েই চলছে। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
সমাবেশ থেকে আগামী ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশে সব গণপরিবহণে শিক্ষার্থীদের হাফপাশ কার্যকরসহ নিরাপদ সড়কের দাবিতে নয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় সচিবালয়ের সামনেসহ সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে শিক্ষার্থীসহ সব সড়ক হত্যার বিচার করতে হবে ও পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; ঢাকাসহ সারা দেশে সব গণপরিবহণে (সড়ক, নৌ, রেল ও মেট্রোরেল) শিক্ষার্থীদের হাফ পাস নিশ্চিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে; গণপরিবহণে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং জনসাধারণের চলাচলের জন্য যথাস্থানে ফুটপাত, ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপত্তা ব্যাবস্থা দ্রুততর সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে; সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সব যাত্রী এবং পরিবহণ শ্রমিকের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে; পরিকল্পিত বাস স্টপেজ ও পার্কিং স্পেস নির্মাণ ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। (এক্ষেত্রে প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে); দ্রুত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ও যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের দায়ভার সংশিষ্ট ব্যাক্তি বা মহলকে নিতে হবে; বৈধ ও অবৈধ যানবাহন চালকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈধতার আওতায় আনতে হবে এবং বিআরটিএর সব কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে; আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মানে ঢাকাসহ সারা দেশে ট্রাফিক ব্যাবস্থাপনা অবিলম্বে স্বয়ংক্রিয় ও আধুনিকায়ন এবং পরিকল্পিত নগরায়ন নিশ্চিত করতে হবে; ট্রাফিক আইনের প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য একে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে হবে।