ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু আজ, প্রথম দিন যাচ্ছে জাপা
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আজ সোমবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রথম দিন বিকেল ৩টায়, সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি-জাপার সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংলাপ শুরু হচ্ছে। তবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও, একে ‘লোক দেখানো’ বলে মনে করছে বিএনপি এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি। দলটির নেতারা বলছেন, রাষ্ট্রপতি সংলাপ করলেও শেষ পর্যন্ত নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। এ সংলাপ উদ্দেশ্যহীন ও অপ্রয়োজনীয় বলেও মনে করেন তাঁরা।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ যে সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছেন, এ বিষয়ে বিএনপি ‘কিছু জানে না’ বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাষ্ট্রপতির এ সংলাপে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেলে বিএনপি যাবে কি না, এমন প্রশ্নে দলের মহাসচিব বলেন, ‘আমি জানি না’।
সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জানান, তাঁর দল এখনও পর্যন্ত সংলাপের আমন্ত্রণ পায়নি।
তবে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম সাংবাদিকদের জানান, সংলাপে অংশ নিয়ে জনগণের প্রত্যাশিত কমিশন গঠনের আহ্বান জানাবে আওয়ামী লীগ।
মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও। এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংলাপ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ এবং এর মাধ্যমে সমাধান হওয়াও জরুরি। দেশে নির্বাচনি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। এ অবস্থায় এটার সমাধানের জন্য একটা রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছানো জরুরি। তবে রাষ্ট্রপতি আয়োজিত এই সংলাপে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো সমাধান আসবে বলে মনে হয় না।’
শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘শুধু নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর উদারতা ও ছাড়ের মনোভাব জরুরি বলে মনে করি।’
এদিকে, আজকের সংলাপে অংশ নিতে এরই মধ্যে আট সদস্যের প্রতিনিধিদল চূড়ান্ত করেছে জাতীয় পার্টি। কমিটির সদস্য ও জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা সাংবাদিকদের জানান, নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের জন্য তাঁর দলের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে দাবি জানানো হবে।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে। নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আইন প্রণয়ন না হওয়ায় গত দুইবার রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠন করে ইসি গঠন করে আসছেন।
জানা গেছে, সংলাপে আমন্ত্রিত প্রতিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সার্চ কমিটি ও পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করবেন রাষ্ট্রপতি। ইসির নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রপতির সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হবে। গত দুইবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। গত দুইবারের সার্চ কমিটির প্রধান ছিলেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে আসছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব।
আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে নতুন সার্চ কমিটি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নতুন কমিশন গঠনে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করবেন।
এর মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য দুজন, চারজন নির্বাচন কমিশনারের জন্য আটজনের নাম সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করবে। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত ১০ জনের নামের তালিকা থেকে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার চূড়ান্ত করবেন।