টোঙ্গায় অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে সুনামি সতর্কতা
প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে একটি আগ্নেয়গিরিতে বিশাল অগ্ন্যুৎপাতের পর সুনামি আঘাত হেনেছে দ্বীপরাষ্ট্র টঙ্গাতে। এ ঘটনায় সুনামির আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান। প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, অগ্ন্যুৎপাতের পর জাপান উপকূলে তিন মিটার পর্যন্ত উঁচু ঢেউ আঘাত হানতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। এর মধ্যেই দেশটির দক্ষিণে ১ দশমিক ২ মিটার উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পড়েছে।
অপরদিকে, শক্তিশালী ঢেউ ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, দ্বীপরাষ্ট্র টঙ্গায় একটি গির্জা এবং কয়েকটি বাড়ির ভেতর পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টঙ্গার রাজধানী নুকুয়ালোফার আকাশ থেকে আগ্নেয়গিরির ছাই পড়তে দেখা গেছে। দেশটিতে সুনামি সতর্কতা জারির পর লোকজন উঁচু স্থানে সরে যাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করেন।
এ অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছে হাঙ্গা টঙ্গা-হাঙ্গা হাপাই আগ্নেয়গিরিতে। এটি পুরো দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। আগ্নেয়গিরিটি থেকে টঙ্গার অবস্থান মাত্র ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে।
টঙ্গার মেরে টউফা নামের এক বাসিন্দা বলেছেন, তাঁরা যখন রাতের খাবার তৈরি করছেন, তখন এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। তাঁর ছোট ভাই ভেবেছিলেন কাছে কোথাও বুঝি বোমা ফাটছে।
মেরে টউফা বলেন, ‘আমি প্রথম যে কাজটা করার কথা ভাবি, সেটা হলো টেবিলের নিচে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া। আমি আমার ছোট বোনকে টেনে নিয়ে আমার মা-বাবা এবং অন্য সবাইকে চিৎকার করে ডাকছিলাম, তারাও যেন একই কাজ করে।’
টউফা জানান, এর পরেই তিনি দেখেন তাঁদের বাড়িতে স্রোতের মতো পানি ঢুকছে। তিনি বলেন, ‘চারদিক থেকে কেবল চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। লোকজন চিৎকার করে সবাইকে উঁচু জায়গায়, নিরাপদ জায়গায় যেতে বলছিল।’
টঙ্গার জিওলজিক্যাল সার্ভিস জানায়, এ আগ্নেয়গিরি থেকে উৎক্ষিপ্ত গ্যাস, ধোঁয়া ও ছাই আকাশের বিশ কিলোমিটার ওপরে পর্যন্ত পৌঁছেছে।
আট মিনিট ধরে এ অগ্ন্যুৎপাত এতটাই ব্যাপক ও তীব্র ছিল যে, এর আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল ৮০০ কিলোমিটার দূরের ফিজি পর্যন্ত, বলছেন ফিজির রাজধানী সুভার কর্মকর্তারা। ফিজির সরকারও সুনামি সতর্কতা জারি করেছে এবং নিচু উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে।
অগ্নুৎপাতের শব্দ শোনা গেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকেও।
নিউজিল্যান্ডেও কর্মকর্তারা সতর্কতা জারি করেছেন, যদিও আগ্নেয়গিরি থেকে দেশটির অবস্থান প্রায় দুই হাজার ৩০০ কিলোমিটার দূরে।
নিউজিল্যান্ডের জাতীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা বলেছে, নর্থ আইল্যান্ডের উত্তর ও পূর্ব উপকুলে জোরালো এবং অস্বাভাবিক জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা আছে।
স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষক সংস্থার এক টুইটে বলা হয়, ‘এটি যেরকম শক্তিশালী ছিল, তা অবাক করার মতো। পুরো নিউজিল্যান্ডজুড়ে লোকজন শক্তিশালী একটি আওয়াজ শুনতে পেয়েছে বলে জানাচ্ছে।’