নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগকে ‘ষড়যন্ত্র’ বললেন ছাত্রলীগ সভাপতি
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও তাঁর পরিবার ভিন্ন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ এনেছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির একটি অংশ। তাদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তিনি ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন এবং তাঁর পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তবে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির অপর একটি অংশটি বলছে, এটি ‘ষড়যন্ত্র’। যারা এসব অভিযোগ আনছে তারা স্বার্থান্বেষী এবং সংগঠনকে বিতর্কিত করতে চায়।
২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাদের ‘ভারমুক্ত’ করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁদের দায়িত্ব শেষ হয় চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি। এরপর থেকেই ফেসবুকে আল নাহিয়ান খান জয়কে নিয়ে শুরু হয় নানা অভিযোগ। বলা হয়, তিনি ও তাঁর পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
গতকাল শনিবার রাতে ফেসবুক লাইভে এসে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ বলেন, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন আল নাহিয়ান খান জয়। তখন তাঁর ফুফাতো ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। তাঁর কক্ষে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করেছেন এবং ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে তিনি ছাত্রদলের হয়ে ধানের শীষে ভোট চেয়েছিলেন।
ইয়াজ আল রিয়াদ আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আপন চাচাতো ভাইকে নিজের ক্ষমতাবলে নৌকার বিরুদ্ধে জিতিয়েছেন আল নাহিয়ান খান জয়। এ ছাড়া তাঁর বাবা ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বাবুগঞ্জ-উজিরপুর আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। সেই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তাঁর বাবা ব্যবসায়ী ও বিএনপিনেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বিমা কোম্পানিতে চাকরি করেছিলেন। তিনি তৎকালীন বিএনপিনেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার পিএ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির যে নির্বাচন আওয়ামী লীগ বর্জন করেছিল, সেই নির্বাচনে বিএনপির ডামি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন আল নাহিয়ানের বাবা।’
লাইভে ইয়াজ আল রিয়াদ বলেন, ‘এসব অভিযোগের জবাব তাঁকেই দিতে হবে।’
তাঁর এ অভিযোগকে সত্য হিসেবে ধারণা করছেন কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা। তাঁরা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন।
ফেসবুক লাইভে সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসাইন বলেন, ‘অভিযোগগুলো শুনলাম, এখন জবাব শোনার অপেক্ষায়। এ অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’
সংগঠনের আরেক সহসভাপতি সোহান খান তাঁর নিজ টাইমলাইনে লেখেন, ‘ধর্মের কল নাকি বাতাসে নড়ে। একটা সংগঠন হাজার থেকে লাখো কর্মীর শ্রম ঘামের ফসল কিন্তু সুসময়ের ফল ভোগ করে শীর্ষরাই। পদের শীর্ষ নেতৃত্ব আর দেখতে চাই না। আদর্শের শীর্ষ নেতৃত্ব দেখতে চাই।’
সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের এমন অভিযোগের পাল্টা জবাব দিতে দেখা গেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের অপর অংশ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল শাখার নেতাকর্মীদের।
সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্য করে কেন্দ্রীয় অর্থবিষয়ক উপসম্পাদক তিলোত্তমা শিকদার বলেন, ‘সত্যান্বেষীর ভান ধরা এক স্বার্থান্বেষী। জয় ভাইকে নিয়ে ষড়যন্ত্র নতুন কিছু না। চেষ্টা চালিয়ে যান সত্য সূর্যের সোনালি রশ্মির ন্যায় সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে।’
কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রাকিব হোসেন তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে লেখেন, আপনি (ইয়াজ আল রিয়াদ) ভারপ্রাপ্ত সহসভাপতি হওয়ার ধান্ধায় ছিলেন। যখনই বুঝছেন জয় সিকুয়েন্স ব্রেক করে আপনাকে দায়িত্ব দিবেন না, তখনিই পল্টি নিয়েছেন। রাতারাতি জয় আপনার কাছে অনুপ্রবেশকারী, বিএনপি ফ্যামিলির হয়ে গেছে।’
সহসভাপতি সাইফ বাবু বলেন, ‘মিথ্যার বেসাতি সাজিয়ে, ষড়যন্ত্রের ডালপালা মেলে অতীতেও জয়কে থামাতে পারোনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। জয়ের জয়রথ চলবেই।’
সহসভাপতি রাকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য বলেন, ‘ক্যাম্পাস রাজনীতিতে তের বছরে আল নাহিয়ান খান জয় পাঁচটি পদে থেকে ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সমসাময়িক ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সর্বোচ্চ বেশি পদের অধিকারীদের মধ্যে তিনি একজন। এ ১৩ বছরে তাঁর ঘোরতর শত্রুও বলতে পারবে না দুঃসময়ে জয় একবিন্দু পিছপা হয়েছে।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে আল নাহিয়ান খান জয় এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ ষড়যন্ত্র অনেক আগে থেকেই। আমার যদি এসব দুর্বলতা থাকত, তবে নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাকে এত বড় দায়িত্ব দিত না। যারা এসব অভিযোগ আনছে তারা সংগঠনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।’