শাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে খাবারের সহায়তায় সাবেক শিক্ষার্থীরা
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) প্রশাসনের নির্দেশে হল-ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা থাকা-খাওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের পাশের দোকানপাট বন্ধ করে দেয় পুলিশ। উপায়ন্তর না পেয়ে নিজেদের উদ্যোগে এক হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর জন্য রান্না করা হয়েছে খাবার।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাবুর্চি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে রান্নার কাজ শুরু হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের খাবার ও অর্থ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা শিক্ষার্থী মীর রানা জানান, প্রশাসন ক্লাস-পরীক্ষা ও হল বন্ধ করলেও আন্দোলনের জন্য শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছাড়েননি। এ কারণে খাবার সংকটে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। তাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় খেলার মাঠেই সবার জন্য সাশ্রয়ী খাবার রান্না করা হয়েছে। একবেলার খাবার রান্নায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
মীর রানা আরও জানান, বুধবার রাতের খাবারের মেন্যুতে খিচুড়ি ও আলু দিয়ে মুরগি রান্না হয়েছে। রাত ১২টার পর মাঠেই ছেলে-মেয়েদের পৃথক সারি করে খাবার দেওয়া হয়।’ আন্দোলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই খাবারের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান মীর রানা।
মীর রানা আরও জানান, খাবার ও অর্থ সংগ্রহে ২০ জনের একটি দল রয়েছে। আরও ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে রয়েছেন। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় খাবারের ব্যবস্থা করতে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা। গত মঙ্গলবার খাবারের সংকট হয়েছিল, তাই গতকাল বুধবার তাঁরা আরও বাড়িয়ে খাবার রান্না করেছেন।
এদিকে, সন্ধ্যার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনের খাবারের দোকানসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় পুলিশ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের খাবার সংকটসহ জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটায় বিঘ্ন ঘটাতে এ কাজ পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
তবে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) ডিসি আজবাহার আলী শেখ অভিযোগটি অস্বীকার করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও বাইরে মানুষের জমায়েত ঠেকাতে দোকানপাট বন্ধ করা হয়েছে।’
গত রোববার বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবিতে শুরু হয় ছাত্রীদের আন্দোলন। পরে সেই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনাও ঘটে।
এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে আহত হন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে ওই রাতেই আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। যদিও পুলিশ ৩০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে।
এদিকে, বুধবার বিকেলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। চলমান ঘটনায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের মাধ্যমে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এতে দোষী হলে সরকারের নির্দেশ মেনে নেবেন বলে জানিয়েছেন উপাচার্য।
‘উপাচার্য কোনো রকম সংশ্লিষ্ট নয়’ দাবি করে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়েছে, সাউন্ড গ্রেনেড মেরেছে। এ জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, খুবই মর্মাহত।’