উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যানসহ প্রশ্নফাঁস চক্রের ১০ জন আটক
সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং প্রশ্নের উত্তর সরবরাহকারী চক্রের ১০ সদস্যকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও কাকরাইল এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
আটক ব্যক্তিরা হলেন, নোমান সিদ্দিকী, মাহমুদুল হাসান আজাদ, আল আমিন রনি, নাহিদ হাসান, শহীদ উল্লাহ, তানজির আহমেদ, মাহবুবা নাসরীন রুপা, রাজু আহমেদ, হাসিবুল হাসান ও রাকিবুল হাসান। আটকের সময় তাঁদের কাছ থেকে কানে ব্যবহার করা ছয়টি ডিভাইস, ছয়টি মাস্টার কার্ড, মোবাইল সিম হোল্ডার, ব্যাংকের পাঁচটি চেক, সাতটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, ১৬টি মুঠোফোন, ১৮টি প্রবেশপত্র ও চলমান পরীক্ষার ফাঁস হওয়া তিন সেট প্রশ্নপত্র জব্দ করা হয়।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান আজাদ সিজিএ অফিসের সরকারি কর্মকর্তা এবং মাহবুবা নাসরীন রুপা বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীন ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের ৫৫০ জন অডিটর পদে নিয়োগের জন্য গতকাল শুক্রবার ৭০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয়। ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তথ্য ছিল—আগে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া কতিপয় ব্যক্তি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, মোবাইল অ্যাপ এবং ব্যক্তি পরিবর্তন করে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, উত্তর/সমাধান সরবরাহসহ অসদুপায় অবলম্বন করতে পারে।’
পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ডিবি পুলিশ কাকরাইলে অবস্থিত নিউ শাহিন হোটেল থেকে অসাধু উপায় অবলম্বনকারী দুজন পরীক্ষার্থীকে আটক করে। তাঁদের দেওয়া তথ্যে কাফরুল থানার সেনপাড়া পর্বতা এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ডিভাইস, প্রশ্নপত্র এবং উত্তরপত্রের খসড়াসহ চার জনকে আটক করা হয়। ডিবি পুলিশের অপর দল বিজিপ্রেস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে পরীক্ষার্থী এবং অন্যতম পরিকল্পনাকারী মাহবুবা নাসরীন রুপাকে নগদ টাকা, ডিজিটাল ডিভাইসসহ আটক করে। পরবর্তীকালে অন্য আসামিদের আটক করা হয়।’
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘আটক ব্যক্তিদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান আজাদ, নাহিদ হাসান, আল আমিন সিদ্দিকী এর আগেও প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত ২০১৩, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিল। এ ছাড়া আটক অন্যান্যরা যোগসাজশে বিভিন্ন সোশ্যাল অ্যাপ ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষা হল থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে। পরীক্ষা হলের বাইরে ওয়ানস্টপ সমাধান কেন্দ্র বসিয়ে স্মার্ট ওয়াচ, ইয়ার ডিভাইস, মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করার কাজ করে থাকে। আটক করা ব্যক্তিরা আগে থেকে বিভিন্ন ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন, হিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়, জ্বালানি অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, খাদ্য অধিদপ্তর, সাধারণ বীমা করপোরশনসহ অন্যান্য সংস্থার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং উত্তরপত্র সরবরাহ করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’