‘সরকারের সার্চ কমিটিতে থাকবেন আওয়ামী চেতনার লোকজনই’
নির্বাচন কমিশন গঠনে নতুন সার্চ কমিটির সব লোক হবে আওয়ামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় আজ রোববার দুপুরে তাঁতীদলের উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিলে রুহুল কবির রিজভী এমন মন্তব্য করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সার্চ কমিটি গঠনে যে আইন, সেটি তো পরিচালনা করবেন সরকার এবং তার নির্বাহী বিভাগ। যাঁরা আইন প্রণয়ন করবেন, তাঁরা তো সরকারের কথায় করবেন। আওয়ামী চেতনার দ্বারা উদ্বুদ্ধ না হলে আইন প্রনয়ন করা যায় না। আর যে সার্চ কমিটি হবে সেটি হবে, আওয়ামী বাকশালী চেতনার দ্বারা উদ্বুদ্ধ। মুজিব কোর্ট পড়া লোকেরাই সরকারের সার্চ কমিটিতে থাকবেন। এ সার্চ কমিটি হারিকেন দিয়ে খুঁজে খুঁজে মুজিবকোর্ট পরা লোকদের বের করে আনবে।’
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘বর্তমান সংসদ একটি নিশিরাতের পার্লামেন্ট, শেখ হাসিনার ইচ্ছার পার্লামেন্ট। ওখানে প্রকৃত অর্থে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে এমন কোনো নেতা নেই। এ পার্লামেন্টে যে আইন হবে, সেটা তো মুজিব কোর্ট পরা আইন হবে। সেখানে মুজিব কোর্ট পরা সার্চ কমিটি হবে। সেখানে কোনো নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি হবে না। তারা মুজিব কোর্ট পরা লোক বাছাই করবে। তারা কোনো নিরপেক্ষ লোক বাছাই করবে না। ওই সার্চ কমিটি আরেকজন কে এম হুদাকে খুঁজে বের করবে। আরেকজন রকিবুলকে বের করবে।’
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, ‘যারা ভোটার ছাড়া নির্বাচন করতে অত্যন্ত পারদর্শী, যারা দিনের আলোতে যে ভোট হয় সকাল ৮টা থেকে ৪টা, সে ভোটে বিশ্বাস করে না, সে রকম হুদা সাহেবদের বের করে আনবে এ সার্চ কমিটি। কারণ, এ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য যে আইনটি করা হচ্ছে, এটি একটি অবৈধ আইন। এটা সম্পূর্ণ আওয়ামী আইন। এটি একটি বাকশালী আইন। এ সার্চ কমিটির সঙ্গে অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচন করার কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
বিএনপির এ মুখপাত্র অভিযোগ করেন, ‘দেশের মানুষ যাঁরা বিদেশে আছেন, তাঁরা যদি এ সরকারের সমালোচনা করেন, তাঁদের পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাবে, তাদের নাগরিকত্ব থাকবে না। সরকারের সমালোচনা আর রাষ্ট্রদ্রোহিতা তো এক জিনিস নয়। কিন্তু, আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে এটার আলোচনা হয়েছে। পাসপোর্ট তো একটা ট্রাভেল ডকুমেন্টস, এটা বাতিলের মধ্য দিয়ে আপনারা কী বোঝাতে চাচ্ছেন? তাহলে তো আন্তর্জাতিকভাবেই তাঁদের নাগরিকত্বহীন করে দিলেন। তাঁর কোনো রাষ্ট্র থাকল না। রাষ্ট্রহীন একজন নাগরিক হিসেবে বাতাসে বাতাসে ভেসে বেড়ানো ছাড়া তার আর কোনো উপায় থাকবে না।’
সরকারের বিরোধীতা করলে দেশে গুম হয়ে যায় মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘সরকারের সমালোচনা করলে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হতে হয়। তাই, দেশের বাইরে বসে যাঁরা সরকারের সমালোচনা করছেন, তাঁদের কোনোভাবে ধরতে না পেরে এখন আবার গবেষণায় বসছেন—এদের কীভাবে ধরা যায়। সেজন্য দেখা যাচ্ছে—যুক্তরাষ্ট্রে কেউ বক্তব্য দিচ্ছেন, তাঁর বোনকে ধরে নিয়ে গিয়ে কারাগারে রাখা হচ্ছে। এত জুলুমবাজ, এত ভয়ংকর অত্যাচারী সরকারের দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে আর নেই।’
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, সাংবাদিক কণক সারোয়ার বাইরে বসে সরকারের বিরুদ্ধে কেন কথা বলছেন, শুধু সেজন্য বাংলাদেশে তাঁর বোনকে ধরে নিয়ে গিয়ে কারাগারে রাখা হলো। যুক্তরাষ্ট্রে বসে কেউ কথা বললে বাংলাদেশে তার বোনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
রিজভী আরও বলেন, সরকার বিরোধী দলশূন্য বাংলাদেশ চায়, সরকার বিরোধী মতশূন্য বাংলাদেশ চায়। এখন নাগরিকশুন্য রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টায় লিপ্ত এ সরকার।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘বাহাত্তর সালের সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি আইন করার নির্দেশনা দেওয়া আছে। অনেকেই বলছেন—আইন নেই। সরকার ভাবল—আমরা এটার একটা সুযোগ নিই। আপনি তো আইন করবেন একটি বাকশালী পার্লামেন্টে। পার্লামেন্টে দু-একজন ছাড়া সবই তো আপনার।’
তাঁতীদলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে বিএনপির তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম খান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, তাঁতীদলের সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।