নগদ টাকা হাতিয়ে নিতে ট্রান্সজেন্ডারকে যৌন নির্যাতন : র্যাব
নগদ টাকা হাতিয়ে নিতে এক নারী ট্রান্সজেন্ডারকে যৌন নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার ঘটনার মূলহোতা ইশতিয়াক আমিন ফুয়াদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শনিবার দিনগত রাত ও রোববার সকালে রাজধানীর ফার্মগেট ও মহাখালী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন, ফুয়াদ আমিন ইশতিয়াক ওরফে সানি (২১), সাইমা শিকদার নিরা ওরফে আরজে নিরা (২৩), আব্দুল্লাহ আফিফ সাদমান ওরফে রিশু (১৯)। গ্রেপ্তারের সময় ভুক্তভোগী ট্রান্সজেন্ডারের ছিনিয়ে নেওয়া মুঠোফোন উদ্ধারসহ জব্দ করা হয় অপহরণে ব্যবহৃত অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, খেলনা পিস্তল, মুঠোফোন ও অন্যান্য সামগ্রী।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারা এলাকার (বসুন্ধরা) একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী স্থানে গ্রেপ্তারকৃত রিশুর সঙ্গে ভুক্তভোগীর সাক্ষাত হয়। তাদের পরিচয় ফেসবুকে। তারপর সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা বলে কৌশলে ভুক্তভোগীকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় গ্রেপ্তারকৃত ইশতিয়াকের ভাড়া বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই বাসায় নিয়ে ইশতিয়াক, নিরা ও রিশু ভুক্তভোগীকে মারধর, শ্লীলতাহানি ও যৌন নিপীড়ন করার পাশাপাশি ভিডিও ধারণ করে। এ সময় তারা ট্রান্সজেন্ডারের কাছে থাকা মুঠোফোন, স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ ছাড়া তারা এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এ সময় গ্রেপ্তারকৃতরা আইনশৃঙ্খলা ও সামরিক বাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিয়ে ভয় দেখান। কিন্তু, ভুক্তভোগী টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে রামপুরায় নামিয়ে দেয়।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা এ ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। তারা মূলত নগদ টাকা হাতিয়ে নিতে ট্রান্সজেন্ডারকে ওই বাসায় নিয়ে নির্যাতন করেন। তারা ভেবেছিলেন, ভুক্তভোগীর অনেক টাকা রয়েছে। এরা মূলত সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্রের সদস্য। গ্রেপ্তারকৃতরাও জানিয়েছেন, তারা টাকা হাতিয়ে নিতে তাকে অপহরণ করেছিল। গ্রেপ্তারকৃত ইশতিয়াকের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দুটি মামলা রয়েছে। এর আগে তিনি বিভিন্ন মামলায় কারাভোগও করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ ঘটনায় গত শুক্রবার ভুক্তভোগী নারী রাজধানীর ভাটারা থানায় পেনাল কোডের বিভিন্ন ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৩৫। এ প্রেক্ষাপটে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। তাদের গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। এ চক্রের মূলহোতা ইশতিয়াক। আরজে নীরা ও রিশু ইশতিয়াকের অন্যতম সহযোগী।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা গত দুই বছর ধরে নানাবিধ কৌশলে জিম্মি, ক্ল্যাকমেইল ও প্রতারণা করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষদের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিলেন। তারা সাধারণত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। তারপর কৌশলে বিভিন্ন সময়ের আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও ধারণ করে ভুক্তভোগীদের হেনস্তা ও ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ দাবি করতেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’