ইউক্রেন সংকট : জাতিসংঘে রুশ-মার্কিন বাকযুদ্ধ
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার প্রতিনিধিদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিবিসির প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে।
বৈঠকে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন নিয়ে আলোচনা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতিসংঘে নিযুক্ত দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, ‘গত কয়েক দশকের মধ্যে এটিই ইউরোপে সর্বোচ্চ সংখ্যক সেনা মোতায়েনের ঘটনা।’
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিষয়ে অগ্রহণযোগ্য উপায়ে নাক গলাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত ভ্যাসিলি নেবেনজ্যা।
তবে রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন বা হামলা চালালে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস্ট জানান, এখন ক্রেমলিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, এর ব্যপ্তি আরও বাড়ানো যায় এমন একটি আইন প্রস্তুত করছে তাঁর দেশ।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের দূত বলেছেন, ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ক্রেমলিনের নিকটবর্তী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা থেকেও বাদ দেওয়া হতে পারে।’
ভ্যাসিলি নেবেনজ্যা বলেন, ‘রাশিয়া যে ইউক্রেনে সামরিক হামলার পরিকল্পনা করছে, এমন বক্তব্যের পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই এবং সেনা মোতায়েনের বিষয়টিও জাতিসংঘ নিশ্চিত করেনি। রাশিয়া যেকোনো সময় নিজের ভূমিতে যেকোনো জায়গায় সেনা মোতায়েন করতে পারে, সেটি ওয়াশিংটনের দেখার বিষয় নয়।’
রাশিয়ার দূত ভ্যাসিলি নেবেনজ্যা আরও বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসনই বিভিন্ন উসকানিমূলক কথাবার্তার মাধ্যমে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করছে। এটা আমাদের রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে শুধু অগ্রহণযোগ্য হস্তক্ষেপই নয়, বিশ্ববাসীকে এ অঞ্চলের সত্যিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিভ্রান্তও করছে।’
নিরাপত্তা পরিষদের এই বৈঠক রাশিয়া শুধু আলোচনায় সীমাবদ্ধ রেখেই শেষ করতে চাইলেও শেষমেষ তা ভোটে গড়ায় এবং সেখানে ১০ ভোট রাশিয়ার বিপক্ষে যায়। মাত্র দুটি ভোট পড়ে রাশিয়ার পক্ষে।
সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্র ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী এলাকায় লাখখানেক সেনা মোতায়েন করে রেখেছে রাশিয়া। একইসঙ্গে ওই এলাকায় ট্যাংক, গোলাবারুদ ও ক্ষেপণাস্ত্রও মজুদ করা হয়েছে। কিন্তু, শুরু থেকেই যুদ্ধ বা আগ্রাসনের পরিকল্পনার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া। তবে, স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের পর ওই অঞ্চলে আর কখনোই এত পরিমাণ সামরিক শক্তি জমায়েত করেনি রাশিয়া।
ইউক্রেন ন্যাটো জোটের সদস্য দেশ নয়। রাশিয়া চায় ইউক্রেন যেন ন্যাটো জোটের অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে। তবে, রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশ এবং সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্র লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও এস্তোনিয়া ন্যাটো জোটে রয়েছে।
গত মাসে রাশিয়া ন্যাটোর কাছে তিনটি দাবি জানিয়েছে। প্রথমত, ইউক্রেনকে যেন সামরিক জোটটির সদস্য না করা হয়। দ্বিতীয়ত, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো যেন কোনো সামরিক কার্যক্রম না চালায় এবং তৃতীয় দাবিটি হচ্ছে—রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কোনো দেশে যেন ক্ষেপণাস্ত্র না বসানো হয়।
২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপত্যকা ক্রিমিয়া দখল করে নেয়। এ সময় সংঘাতে সেখানে ১৪ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়।