দালালমুক্ত ঘোষণা বেনাপোল চেকপোস্ট, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন!
স্বাধীনতার ৫০ বছর পর দালালমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন। চলতি বছরের শুরু থেকেই দালালদের প্রবেশের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
ভারত গমনকারী যাত্রী হয়রানি বন্ধে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফলে পাসপোর্ট ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন টার্মিনালে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে বন্দরের উপপরিচালক মামুন তরফদার দালালদের পুনরায় প্রতিষ্ঠার জন্য জোর চেষ্টা করছেন বলে কাস্টমসের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু মামুন তরফদার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
বেনাপোল চেকপোস্ট সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার আব্দুর রশিদ মিয়া যোগদানের পর তার এই সাহসী পদক্ষেপের কারণে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনকে দালালমুক্ত করতে প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক স্ক্যানিং মেশিন, সশস্ত্র আনসার সদস্য দিয়ে জোরদার করা হয়েছে যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে আট লাখ ৩৪ হাজার ৫০ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত করেছে। যাত্রীদের কাছ থেকে এ সময় বিদেশে ভ্রমণকর বাবদ রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
আন্তর্জাতিক কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন এলাকায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। যাত্রীদের বিশ্রামাগার করা হয়েছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। বহির্গমন ও আগমনের জন্য স্টিলের রেলিং দিয়ে যাত্রীদের পৃথক ব্যবস্থা করা হয়েছে। টার্মিনালের ফটকে বন্দরের নিরাপত্তাকর্মী, আনসার সদস্য ও কাস্টমস অফিসাররা সার্বক্ষণিক নজরদারি করায় প্রবেশ করতে পারছে না দালালরা। যদিও করোনার কারণে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে গমনকারী পাসপোর্টধারী যাত্রী সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে।
ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের সেবার মান বৃদ্ধি করায় যাত্রীরা দ্রুত ও সুশৃঙ্খলভাবে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারছে নিজেরাই।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল চেকপোস্টে এক শ্রেণির লোক দূরদূরান্ত থেকে আসা পাসপোর্টধারী যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছিল। সিরিয়াল ছাড়া তাদের ইমিগ্রেশন পাস দ্রুত করে দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল ওই চক্রটি।
পাসপোর্টধারী যাত্রীদের পক্ষ থেকে কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনারকে অভিযোগ করলে তিনি কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনকে দালালমুক্ত করার ঘোষণা দেন। যাত্রীদের সেবার মান উন্নত করতে তিনি চেকপোস্ট প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে বহিরাগত দালাল উৎখাতে এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যাতে টার্মিনাল এলাকায় বহিরাগত কোনো দালাল ঢুকতে না পারে; সে জন্য প্রতিনিয়ত তদারকি করা হচ্ছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট পুলিশ ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ জানান, করোনার আগে প্রতিদিন বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করত ভারতে। সে সময় প্রতিমাসে চার কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হতো বিদেশ ভ্রমণকর বাবদ।
বেনাপোল চেকপোস্টে কোনো পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে জন্য দালালমুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে যুগ্ম কমিশনার আব্দুর রশিদ মিয়া বলেন, ঝামেলামুক্তভাবে যাত্রীরা যাতে ভারতে যাতায়াত করতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি যাত্রীকে সিরিয়ালে দাঁড় করিয়ে তাদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হচ্ছে। তবে এটি বাস্তবায়ন করতে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। বর্তমানে কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়া নিরাপদে যাত্রীরা ভারতে গমন করছে। কোনো ধরনের হুমকিধমকি দিয়ে কাস্টমসে দালাল প্রবেশের সুযোগ নেই।