ফ্রান্সে বসে ঢাকায় স্বর্ণের দোকানে চুরির পরিকল্পনা, গ্রেপ্তার এক
রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় রাঙাপরী জুয়েলার্সের দুটি দোকানে এ মাসের শুরুর দিকে চুরির ঘটনা ঘটে। প্রায় ৩০০ ভরি স্বর্ণ, ইমিটেশন গয়না ও টাকা চুরি করে চক্রটি। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মুন্সিগঞ্জের বজ্রযোগিনী এলাকা থেকে মঞ্জুরুল হাসান শামীম (৩৮) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আজ রোববার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ দাবি করে, পুরাতন কচুক্ষেতে রজনীগন্ধা টাওয়ারের নিচতলায় রাঙাপরী জুয়েলার্সের দুটি দোকানে চুরির ঘটনার মাস্টারমাইন্ড মঞ্জুরুল। ফ্রান্সে বসে নাসির নামের এক ব্যক্তির করা পরিকল্পনা অনুযায়ী চক্রের সদস্যদের নিয়ে জুয়েলার্সে চুরি করেন মঞ্জুরুল। মঞ্জুরুলকে গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কাছ থেকে চোরাই স্বর্ণ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তবে, চোরাই স্বর্ণ বিক্রি করা সাড়ে নয় লাখ টাকা এবং কিছু ইমিটেশনের গয়না উদ্ধার করা হয়েছে।
হাফিজ আক্তার বলেন, ‘বাগেরহাটের নাসির দেশে থাকতে চুরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সাত বছর আগে তিনি ফ্রান্সে যান। সেখানে বসে দেশের জুয়েলারির দোকানে চুরির পরিকল্পনা করতেন তিনি। তাঁর পরিকল্পনায় দেশে থাকা চোরচক্রের সদস্যেরা চুরি করত। নাসিরের পরিকল্পনায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ভাষানটেক থানাধীন পুরাতন কচুক্ষেত রজনীগন্ধা টাওয়ারের নিচতলার রাঙাপরী জুয়েলার্সের দুটি দোকানে একটি সংঘবব্ধ চোরচক্র প্রায় ৩০০ ভরি স্বর্ণ, ইমিটেশন গয়না ও টাকা চুরি করে পালিয়ে যায়।’
মঞ্জুরুল হাসান শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘চক্রের দুজন সদস্য মাসুদ ও ইলিয়াস মিথ্যা নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে ওই মার্কেটে সিকিউরিটি গার্ড ও সুইপারের চাকরি নেন। চাকরিরত অবস্থায় তাঁরা দোকানে চুরির পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করার জন্য চক্রের অন্য সদস্যের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করতে থাকেন। পরিকল্পনামাফিক ঘটনার আগের দিন চক্রের সদস্য শাহীন মাস্টার নামের একজন ওই মার্কেটে একটি দোকান ভাড়া করে মালামাল তোলার নাম করে বাক্স বিশিষ্ট টেবিল ব্যবহার করে কৌশলে তালা ভাঙার সরঞ্জামাদি মার্কেটে প্রবেশ করান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঘটনার দিন আনুমানিক রাত ১টার দিকে চক্রের আরও দুই সদস্য শ্রীকান্ত ও তালা ভাঙার মিস্ত্রি রাজা মিয়া মার্কেটে প্রবেশ করে মাসুদ ও ইলিয়াসসহ চুরি করে ভোর ৫টার দিকে মার্কেট থেকে বের হন। এরপর তাঁদের ভাড়া করা কেরানীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ এলাকার বাসায় যায়। সেখানে শাহীন মাস্টার ও গ্রেফতার মঞ্জুরুল হাসান শামীম আগে থেকেই চক্রের অন্য সদস্যদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ভাড়া বাসায় চোরচক্রের সব সদস্যের উপস্থিতিতে স্বর্ণ, ইমিটেশন গহনা ও নগদ অর্থ আলাদা করা হয়।
পরদিন আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে শ্রীকান্ত চোরাই স্বর্ণ তার পূর্ব পরিচিত এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে টাকা নিয়ে আবারও ভাড়া বাসায় ফেরেন। এরপর চোরাই স্বর্ণ বিক্রির টাকা, ইমিটেশন গহনা ও চোরাই নগদ অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়ে দ্রুত ওই বাসা ত্যাগ করে আত্মগোপনে চলে যায়।
রজনীগন্ধা মার্কেটে যে প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তাকর্মী ও সুইপার নিয়োগ দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘আমরা তদন্ত করছি। অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানটি জনবল নিয়োগের আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করেনি। এ দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে চক্রের সদস্যেরা চুরি করেছে।’
বিদেশে থাকা নাসিরের বিষয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, ‘নাসির পেশাদার চোর। সাত বছর আগে তিনি ফ্রান্সে চলে যান। এরপর প্রবাসে একটি চোরচক্রের মূলহোতা ও অর্থদাতা হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। নাসির ২০ বছর ধরে চুরির সঙ্গে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে কতগুলো মামলা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া চক্রের পলাতক সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
এ কে এম হাফিজ আক্তার জানিয়েছেন, ফ্রান্সে থাকা নাসির গ্রেপ্তার শামীমের মাধ্যমে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও প্রাথমিক অর্থের জোগান দিয়ে থাকেন। প্রত্যেক সদস্যের আলাদা আলাদা দায়িত্ব নির্ধারণ করা থাকে এবং তারা সে অনুযায়ী নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে থাকে। এর আগে তারা ঢাকা মহানগর ও আশপাশের এলাকায় একাধিক চুরি করেছে বলে জানা যায়।